মহামারিতে আর্থিক সঙ্কট : উত্তরণের সাতকাহন
যাঁরা পড়াশোনা শেষ করে নতুন চাকরির বাজারে প্রবেশের অপেক্ষায় আছেন কিংবা যাঁরা চাকরি পরিবর্তনের কথা ভাবছেন তাঁরা নিচের ৭টি বিষয় মাথায় রাখলে ও চর্চা করলে চাকরির প্রতিযোগিতায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন।
১. অনলাইন কোর্স করা
বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেকেই বাসায় অবস্থান করছেন। যায় ফলে হাতে পাওয়া গেছে বাড়তি অনেকটা সময়। এই বাড়তি সময়টাকে নিজের জ্ঞানের পরিসর বাড়াতে কাজে লাগাতে পারেন। করে নিতে পারেন বিভিন্ন অনলাইন কোর্স। ইউডেমি, কোর্সেরাসহ অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রি অনলাইন সার্টিফিকেট কোর্স অফার করে। তা ছাড়াও বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু পেইড অনলাইন কোর্সও ফ্রিতে করার সুযোগ মিলছে। আর যারা ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করতে চান তাঁরা ফেসবুক ব্লুপ্রিন্ট ও গুগলের বিভিন্ন সার্টিফিকেট কোর্স করে নিতে পারেন। এই সার্টিফিকেটগুলো প্রমাণ করবে আপনি বিষয়গুলো জানেন।
২. ইংরেজি ভাষার চর্চা
চাকরির ইন্টারভিউ থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে উন্নতির অনেকটা নির্ভর করে ভালো ইংরেজি জানা ও তার সঠিক ব্যবহারের ওপর। বিশেষ করে যাঁরা বড় প্রতিষ্ঠানে বা মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তাঁদের তো ভালো ইংরেজি জানার কোনো বিকল্প নেই। ইংরেজি বলতে পারা, লিখতে পারা, পড়তে পারা ও বুঝতে পারা সব দিকেই জোর দিতে হবে। তবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে আপনি যতই ইংরেজি শিক্ষার সার্টিফিকেট অর্জন করেন না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি তা আপনার ব্যবহারিক কাজে প্রয়োগ করতে পারবেন। ইংরেজি শিখতে বইয়ের পাশাপাশি অনলাইন মাধ্যম যেমন বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইউটিউবের সাহায্যও নিতে পারেন। তাই ভুলভ্রান্তি হলেও চর্চা শুরু করুন এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা বাড়ান।
৩. আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র সিভি তৈরি:
একটি সিভি একজন চাকরিপ্রত্যাশীর প্রথম পরিচয়। যেখানে একটি পদের জন্য শত শত সিভি জমা পড়ে, সেখানে আপনার সিভিটি আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র না হলে তা শর্টলিস্টেড হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। আর সিভি শর্টলিস্টেড না হলে ইন্টারভিউয়ের ডাকও পাওয়া যাবে না। অনেকেই যেই ভুলটি করেন যে কারও কাছ থেকে একটি সিভির ফরমেট জোগাড় করে তাতে কোনোরকম পরিবর্তন না করে শুধু নিজের তথ্য দিয়ে আবেদন করেন। কিন্তু একজন মানবসম্পদ কর্মকর্তা প্রতিদিন শত শত সিভি দেখেন। তার কাছে একটি কপি করা সিভি গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে। তাই নিজের আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র সিভি তৈরি করে চাকরির জন্য আবেদন করুন।
৪. চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি:
এখনই চাকরির ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখতে পারেন। চাকরির ইন্টারভিউতে সাধারণত দুই ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সাধারণ প্রশ্ন (যেমন নিজের সম্পর্কে বলা, নিজের শখ, নিজের ৫টি গুণ ও দোষ বলা, অবসরে করা কাজ ইত্যাদি) ও বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন। ইন্টারনেটে চাকরির ইন্টারভিউয়ের বিভিন্ন প্রশ্ন ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তার কীভাবে উত্তর দেবেন সে সম্পর্কে অনেক লেখা পাওয়া যায়। সেগুলো চর্চা করতে পারেন। আর আপনার যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউয়ের ডাক আসবে তখন সম্ভব হলে ওই প্রতিষ্ঠানে আগে ইন্টারভিউ দিয়েছেন এমন কারও কাছ থেকে তার অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন। ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন। আবেদন করার সময় চাকরির সার্কুলারটি সংরক্ষণ করুন। ওখানে যে কাজের বর্ণনা দেওয়া থাকে, তা ভালোভাবে পড়ে প্রস্তুতি নিন। আর ইন্টারভিউয়ের পোশাকের ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকুন।
৫. চমৎকার প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে পারা:
ভালো প্রতিষ্ঠানের ভালো পদে চাকরি পেতে হলে আপনাকে একাধিক ইন্টারভিউয়ের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। এমনকি দিতে হতে পারে পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনও। তা ছাড়া যেকোনো পেশার যেকোনো চাকরির বিভিন্ন পর্যায়ে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তাই নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে চোখধাঁধানো প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে শিখুন।
৬. লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি:
লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে শুধু একটি বিষয়ে ভালো প্রস্তুতির বদলে পরীক্ষায় আসা সব বিষয়ের প্রস্তুতি নিন। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্বাচিত হতে হলে প্রতিটি বিষয়ে সর্বনিম্ন পাস নম্বর পাওয়া লাগে। লিখিত পরীক্ষায় সময় ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দিন। কম সময়ে যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবেন, তা আগে সমাধান করুন।
৭. চাকরির সাধারণ স্কিলগুলো তৈরি করা:
করোনা–পরবর্তী সময়ে চাকরি পাওয়ার লড়াই যেমন কঠিন হবে, চাকরিতে টিকে থাকার লড়াইও কঠিন হবে। তাই চাকরির সাধারণ স্কিলগুলো তৈরি করুন। এগুলোর মধ্যে আছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্টের কাজ ভালো জানা, ভালো রিপোর্ট তৈরি করতে পারা, সঠিকভাবে ই–মেইল করতে পারা ইত্যাদি। এ ছাড়া বিভিন্ন সফট স্কিলের চর্চা করুন।
করোনাভাইরাস পরবর্তী পেশাগত জীবনে নিজেকে এগিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ফ্রেশারসদের জন্য যেমন একটা বেঞ্চমার্ক থাকে। ঠিক তেমনি যারা বিভিন্ন বেসরকারী কর্মক্ষেত্র থেকে ছাঁটাই হয়েছে তাদেরও মানসিকভাবে দৃঢ় ও নিন্মলিখত জ্ঞানসমূহ এই সময়ে আয়ত্ত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতক মন্দা চলবে সেক্ষেত্রে নিজেদেরকে খাপ খাওয়ানো এবং নতুন পেশায় নিজেকে প্রবেশের দ্বারকে উন্মুক্ত রাখতে নিন্মলিখিত জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো অনেক বেশি প্রয়োজন।
প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও ব্যবহার বাড়ানো:
কারোনোভাইরাস পরবর্তী বিশ্বের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার সেরা উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করা। কোভিড-১৯ মহামারি সংস্থা বা অফিসগুলোতে নানাবিধ ডিজিটাল রূপান্তর ঘটবে। বাস্তবতাটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, ইন্টারনেট অব থিংস, ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়্যালিটি এবং রোবোটিকসের ব্যবসাগুলোই ভবিষ্যৎ। আর মহামারির কারণে এই প্রযুক্তিগুলো কাজে লাগাতে পারলে সেই প্রতিষ্ঠান বা অফিস দুর্দান্ত অবস্থানে থাকবে। করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে কেউ কোনোও কারখানায়, প্রতিষ্ঠান বা অ্যাকাউন্টিং অফিসে কাজ করেন তবে এসব প্রযুক্তিগত সরঞ্জামগুলোর সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যের পাশাপাশি সেগুলো কার্যকরভাবে করতে সক্ষম হওয়া প্রয়োজন।
সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন:
কোভিড মহামারি সময়ে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের গুরুত্ব আমরা ইতিমধ্যে দেখে ফেলেছি। কার্যত পরিষেবাগুলোর সরবরাহ কীভাবে সচল রাখা হয়েছিল সে উপায় বের করা হয়েছিল। স্বাস্থ্যসেবাসহ অনেক ব্যবসা ভার্চ্যুয়াল করা হয়েছে। নতুন প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর সরবরাহ হয়েছে। যেমন, মার্সিডিজ এফ ওয়ান-এর রেসিং গাড়িগুলোর কারখানা শ্বাসযন্ত্র সচল রাখার সরঞ্জামগুলো সরবরাহ করেছে। আর করোনা উত্তর বিশ্বে আবিষ্কারের জন্য নতুন দক্ষতা প্রয়োজন, নতুন পণ্য এবং কাজের পদ্ধতিও আলাদা প্রয়োজন। এ জন্য মানুষের সৃজনশীলতা অপরিহার্য হতে চলেছে আগামী বিশ্বে।
সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি:
কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতি থেকে বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্নির্মাণের জন্য অপরিহার্য দক্ষতা হলো সংকটপূর্ণ সময়ে চিন্তাভাবনা। মহামারির সময়ে দেখা গেছে ফেক নিউজ এবং ভুল তথ্যের ছড়াছড়ির প্রবণতা দেখা গেছে। আমাদের নেতা, ব্যবসায়ী এবং সরকারগুলো দোষ অন্যর ঘাড়ে ছাপিয়ে মনোযোগ এবং যথাযথ তদন্তকে অন্য খাতে সরানোর চেষ্টা করেছে। তাই বিশ্বাসযোগ্য এবং বিভিন্ন উৎসের উদ্দেশ্যমূলকভাবে তথ্যের মূল্যায়ন করতে পারে এমন লোকদের মূল্য বাড়বে। সমস্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো তথ্যটি জানা উচিত তা বুঝতে সংস্থাগুলোকে সমালোচনামূলক চিন্তাধারার লোকেদের ওপর নির্ভর করতে হবে।
ডিজিটাল এবং কোডিং দক্ষতা:
করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ে ডিজিটাল রূপান্তর উৎসাহ পেয়েছে। ডিজিটাল বিপণন, কোডিং, ওয়েব ডেভলভমেন্টসহ ডিজিটাল দক্ষতা সম্পন্ন পেশাদারদের প্রয়োজন ও গুরুত্ব এখনকার চেয়ে আরও বেশি হবে। যে ব্যক্তিরা অর্থনৈতিক মন্দা বা মহামারির সময় ডিজিটাল ব্যবসা চালিয়েছেন তারা অবশ্যই পরবর্তী নিয়োগের তালিকায় থাকবেন। আর এখন সব কোম্পানি বা সংস্থাগুলো এখন ডিজিটাল ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ডিজিটাল দক্ষতায় কাজ করার সুযোগগুলো অগণিত।
নেতৃত্ব:
ভবিষ্যতে মেশিন বা যন্ত্রের সহায়তায় কাজের ক্ষেত্র বাড়বে। সামাজিক দূরত্ব মেনে কাজ চলাসহ একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়া এ সময়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব দরকার। করোনভাইরাস পরবর্তী বিশ্বে কাজ করা লোকের জন্য বিভিন্ন সময়ে যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দক্ষতা, পেশাদারি একটি সেরা দলকে সামনে এগিয়ে নিতে দরকার। সেই নেতা তার দলকে চাহিদা মোতাবেক সহযোগিতার জন্য উৎসাহিত করবে।
আজীবন শেখার প্রবণতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ:
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, আজকের প্রয়োজনীয় দক্ষতা বলে যা বিবেচিত আগামী পাঁচ বছরে তা ৩৫ শতাংশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আর করোনাভাইরাস উত্তর সময়ে বাস্তবতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক থাকার একমাত্র উপায়, জীবনভর শেখার মানসিকতা।
করোনা পরবর্তী পৃথিবীর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বিকল্প অর্থনৈতক কার্যক্রম:
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকও করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আশাব্যঞ্জক পূর্বাভাস দিয়েছে। এবং অর্থনীতিবিদদের মতে কয়েকটি খাতে বিশেষ গুরুত্ব এবং বরাদ্দ রাখলে করোনা পরবর্তীতে দেশের আর্থিক খাতসমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। এই খাতের মধ্যে আছে কৃষি, তৈরি পোশাক, চিকিৎসা-সামগ্রী উৎপাদন, খাবার প্রসেসিং, যানবাহন, নির্মাণ, খুচরা ব্যবসা, স্বাস্থ্য ও ফার্মাসিউটিক্যালস।
বর্তমানে ই-কমার্স এবং লজিস্টিক সার্ভিসে চাহিদা বেড়েছে এবং এই সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুন। লজিস্টিক সেক্টরে এক্সিকিউটিভ, সুপারভাইজার ও ডেলিভারিম্যান এসকল স্তরে কর্মক্ষেত্র বেড়েছে এবং ভবিষ্যতে এই সেক্টরে আরো অনেক বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞদের মতামত।
হোম অফিস প্রচলনের ফলে আইটি সেক্টর ও নেটওয়ার্কিংয়ের লোকজনের ও চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেহেতু ই-কমার্স ও ডিজিটাল ব্যবসার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ব্যবসার লজিস্টিক সাপোর্ট ও পরামর্শকের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। এক্ষেত্রে, ব্যবসায় প্রশাসন বিশেষ করে মার্কেটিং ও অন্যন্য ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের চাহিদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনার কারণে তৈরি পোশাক খাতে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। কিন্তু গবেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী তৈরির বিষয়ে কাজ করলে এই খাতটিও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কারণ মাস্ক, গ্লার্ভস, পিপিই'র মতো সামগ্রীর চাহিদা দেশ ও বিদেশে রয়েছে। তাই, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতে ভবিষ্যতে লোকবল নিয়োগ ও শ্রমিক নির্ভর বেশি সেসব প্রকল্পকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। এইসঙ্গে 'কাজের বিনিময়ে খাদ্য' প্রকল্পকে এর যুক্ত করে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব। অবকাঠামো খাতে যে বরাদ্দ আছে তা না বাড়িয়েও এটা করা সম্ভব। এ খাতে দৃষ্টি দিতে হবে শ্রমনির্ভর কাজের ক্ষেত্রে। তাতে বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে অর্থের জোগান সহজ করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এসব অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোতে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রণোদনা দেওয়া হয়। তবে এর বাইরে এনজিও'র সহযোগিতায় ঋণের অর্থ সহজে ও দ্রুততম সময়ে পাওয়ার ব্যবস্থা করলে অর্থনীতির চাকা দ্রুত ঘুরতে শুরু করবে। এমনটাই মনে করেন গবেষকরা।
স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ও ফিরে আসা প্রবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়ার বিষয়ে গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে গবেষকদের মতামত। সাধারণত সরকার যেসব কারিগরি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করে আসছে তার বাইরেও এখন স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া দেওয়া জরুরি। কারণ দেশ ও বিদেশে এখন প্রয়োজন হবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী। এজন্য গবেষণায় বলা হয়, যেসব প্রবাসী কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিলে নতুন কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি হবে।
স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক গতি আনতে 'আমার গ্রাম-আমার শহর' প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাকে নিতে পারলেই টেকসই ও অঞ্চলভিত্তিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, শহরমুখী না হয়ে যদি গ্রামে সকল সুযোগ-সুবিধা ও ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া যায় তাহলে গ্রামের মানুষ গ্রামে থেকেই ব্যবসায় করতে পারবে। সরকার এই বিষয়ক যে উদ্যোগ আছে সেটাকে আরো বিস্তৃত ও দ্রুত করা গেলে স্থানীয় উন্নয়ন সম্ভব।
এছাড়াও, কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে খরচ করতে পারলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, মানুষ গ্রামমুখী হবে, শহর কেন্দ্রিকতা কমবে, সংক্রমণও কমবে বলে মত দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এই খাতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন তারা। তারা বলছেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডমুখী করার জন্য ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশান নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা গেলে গ্রামীণ অর্থনীতিকে নতুনরূপে সাজানো সম্ভব।
পরিশেষে বলা যেতে পারে- বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও শ্রমবাজারে সংকটময় অবস্থায় বাংলাদেশ আলাদা কোন ভূ-খন্ড নয়। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, আমাদের আশার আলো হলো আমাদের উৎপাদনশীল অর্থনীতি ও সস্তা শ্রমবাজার। অনেক নিয়োগ কারী প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মতে, এই করোনায় যারা চাকরী হারিয়েছে এই সময়ে ধৈর্য ধরতে হবে। সময় নষ্ট না করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। অনলাইনে উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে কোর্সসমূহ করে নিজেদেরকে ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারের জন্য তৈরি করতে হবে। উপরন্তু, যারা চাকরি হারিয়েছেন তাদেরকে একটু ফ্লেক্সিবল হতে হবে পরবর্তী চাকরিতে প্রবেশের জন্য। বেতন তুলনামূলক কম হলেও নিজদেরে সেক্টরগুলা বাছাই করে ঢুকে পড়তে হবে কারণ ক্যারিয়ারে গ্যাপ হলে ভবিষ্যতে তা আরো বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে আগের অবস্থানে চলে যাওয়া যাবে।
- লেখক: প্রধান মানব সম্পদ কর্মকর্তা, ডাবর বাংলাদেশ