কেনিয়ান কন্যাদের মন
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির শহরতলির বস্তি ড্যান্ডোরা। এখানেই দামেস্ক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ১৭ বছরের কিশোরী ম্যারি আসিগি। স্যানিটারি প্যাড কেনার টাকা নেই বলে প্রতি মাসই কয়েকদিন ক্লাস মিস দিয়ে হয় তাকে।
ম্যারি বলছে, এ কারণে ক্লাসের পড়ায় তাকে নিয়মিতই পিছিয়ে পড়তে হয়।
নিজ এলাকার আরও অসংখ্য কিশোরীর মতো, দারিদ্র্যের কারণে শিক্ষাজীবন বারবার ব্যাহত হচ্ছে ম্যারির। বয়স ১৭ হয়ে গেলেও, এখনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেনি সে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, দেশটির ৫ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ১২ লাখ শিশুই স্কুলের আঙিনাও মাড়ায় না।
ম্যারি জানিয়েছে, মাসের এই বিশেষ সময়টিতে শিক্ষকদের চোখ রাঙানি সহ্য করতে হয় তাদের। তাছাড়া অন্যের কাছ থেকে স্যানিটারি প্যাড ধার করে পরাটাও বিপজ্জনক। কেননা, কেনিয়ার মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত হলেও নাইরোবির শহরতলির বস্তিগুলোতে এর হার ১২ শতাংশ। নাইরোবি থেকে আল জাজিরাকে এ খবর জানিয়েছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক আবদুল্লাহি মায়ার।
ছেলেদের টিপ্পনী
ম্যারিদের অঞ্চলে প্রতি প্যাকেট স্যানিটারি প্যাডের দাম ১ ডলার বা প্রায় ৮৫ টাকা। এ টাকা জোগানো বেশির ভাগ পরিবারের পক্ষেই সম্ভব নয়। ওর স্কুলেই সপ্তম শ্রেণিতে পড়া, ১৬ বছর বয়সী রেজিনা নথাম্বি জানাল, ক্লাসের অন্যদের তুলনায় নিজেকে সে সৌভাগ্যবতী মনে করে। কারণ তার দর্জি পিতা প্রতিমাসে তাকে প্যাড কিনে দেওয়ার চেষ্টা করেন। যে মাসে পারেন না, সে মাসে নিজেই কোনোমতে বানিয়ে দেন।
গ্লোবাল অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম 'মিন্সট্রুয়াল হাইজেন ডে'র গবেষণা থেকে জানা যায়, দেশটির ৬৫ শতাংশ নারীই প্যাডের খরচ মেটাতে পারে না। এ কারণে স্কুল পড়ুয়া কিশোরীদের বছরে গড়ে ১৬৫ দিন ক্লাস মিস দিতে হয়। অন্যদিকে, সহপাঠী থেকে শুরু করে স্থানীয় ছেলেদের নানা টিপ্পনীও তাদের ক্লাস মিস দেওয়ার অন্যতম কারণ।
দিনযাপনের গ্লানি
ম্যারির স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষিকা, ২৫ বছর বয়সী এসথার মোরা জানালেন, দারিদ্র্যই এই বস্তিগুলোর প্রধান সমস্যা। প্রশ্ন তুললেন, যেখানে সন্তানদের মুখে বাবা-মা দুবেলা দু'মুঠো খাবার তুলে দিতেই হিমশিম খান, সেখানে প্যাড কেনার মতো বিলাসিতা তারা কীভাবে দেখাবেন?
ঠিকমতো ক্লাস করতে পারলে ছোট তিন বোন ও মায়ের মুখে হাসি ফুটানোর স্বপ্ন দেখতে পারত বলে দাবি ম্যারির। কী স্বপ্ন তার? একদিন কেনিয়ান নৌবাহিনীতে ক্যারিয়ার গড়বে। সেই স্বপ্ন ছোঁয়া যে অনেকটাই অসম্ভব ব্যাপার- এমন বাস্তব ভাবনা এই কিশোরীকে বিষণ্ণ করে তোলে।
ক্লাস রুমে বসে আনমনে সে ভাবে, যদি ছেলে হতো, তাহলে এই ঝামেলা পোহাতে হতো না তাকে! তাহলে ক্লাস মিস দিতে হতো না। সহপাঠী ছেলেদের মতো স্বাধীনভাবে খেলতে পারত, যথাসময়ে নৌবাহিনীর ভর্তি পরীক্ষায়ও বসতে পারত।