তিমির মুখে ৩০ সেকেন্ড!
সমুদ্রের জলরাশিতে বিচরণের মধ্যেই চলে গেছিলেন তিমির বিশাল মুখের ভেতর। ৩০ সেকেন্ড পর তিমি নিজেই মুখ থেকে ঠেলে বের করে দেয়। গত শুক্রবার এমনই রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস প্রদেশের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা প্রভিন্সটাউনে।
নিত্যদিনের মতই সেদিন সাগরের জলে ডাইভ দিতে বেরিয়েছিলেন ৫৬ বছর বয়সী চিংড়িশিকারী মাইকেল প্যাকার্ড।
স্থানীয় পত্রিকা 'কেপ কড টাইমস'কে প্যাকার্ড জানান, শুক্রবার সকালে যখন তিনি এবং তার সতীর্থ নৌকা বের করছিলেন আবহাওয়া তখন বেশ অনুকূলে ছিল; ২০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত সাগরের পানি দেখা যাচ্ছিল।
নৌকা থেকে সাগরে ঝাঁপ দিতেই হঠাৎ তিনি এক বিশাল ধাক্কা অনুভব করেন; মুহূর্তেই সব অন্ধকার হয়ে আসে তার সামনে।
প্রথমে ভেবেছিলেন সে অঞ্চলের পানিতে সাঁতরে বেড়ানো সাদা হাঙ্গরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন তিনি কিন্তু পরে টের পেলেন, যেখানে আছেন সেখানে কোন দাঁত নেই!
"তখন বুঝলাম, আমি তিমির মুখে এসে পড়েছি; এটি আমাকে গিলে ফেলবার চেষ্টা করছে। আমি এক্ষুণি মরতে চলেছি"।
ঐ অবস্থায় প্যাকার্ডের কেবলই স্ত্রী এবং সন্তানদের কথা মনে পড়ছিল।
"তারপর সহসাই তিমিটি জলরাশির পৃষ্ঠের দিকে উঠে যায় এবং স্ফীত হয়ে মাথা নাড়তে শুরু করে"।
"আমাকে বাতাসে ছুঁড়ে দেয়া হয় এবং আমি পানিতে ভাসতে থাকি। আমি মুক্ত হই...আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি এখন এখানে বসে সবাইকে এসব বলতে পারছি"।
প্যাকার্ডকে আসলে হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির একটি তিমি মুখে পুরে নেয়!
এ প্রজাতির তিমি ৫০ ফুট (১৫ মিটার) পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে এবং এদের ওজন ৩৬ টনও ছাড়িয়ে যায়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড অনুসারে, বিশ্বে এখন তাদের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।
তিমিটি মাত্র ৩০-৪০ সেকেন্ড পরেই তাকে উগরে দেয়। ব্যাথা আর ঝাঁকুনিতে প্যাকার্ড প্রথমে ভেবেছিলেন তার হাঁটু বুঝি স্থানচ্যুত হয়ে গেছে কিন্তু আসলে এটি সামান্য আঘাত ছাড়া কিছু ছিল না।
এদিকে প্যাকার্ডের সতীর্থ তখন তাকে হন্য হয়ে সমুদ্রের জলরাশির মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছিল। তিনিই প্যাকার্ডকে নৌকায় তুলে নেন।
প্রভিন্সটাউন ফায়ার ডিপার্টমেন্ট মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজকে নিশ্চিত করে যে, সৈকতে আহত একজন চিংড়ি শিকারীকে সহায়তার জন্য স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে তাদের কাছে ফোন আসে। হাসপাতাল থেকে অব্যাহতির পর সাংবাদিকদের কাছে প্যাকার্ড তার এই ঘটনার বর্ণনা দেন।
হ্যাম্পব্যাক তিমিরা সাধারণত মাছ বা ক্রিল (অতিক্ষুদ্র একধরণের মাছ যা তিমিরা খেয়ে থাকে) গ্রহণের সময় মুখ যথাযম্ভব প্রশস্ত করে। শীর্ষস্থানীয় সমুদ্রবিজ্ঞানীদের মতে, প্যাকার্ডের সাথে যা হয়েছে তা পুরোপুরিই দুর্ঘটনা। তিমির ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক মানুষকে গিলে খাওয়া অসম্ভব বলেও একজন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন।
এমন অভিজ্ঞতার পরেও মাইকেল প্যাকার্ড আবার সমুদ্রে যেতে পারবেন কি! তার স্ত্রী একাধিকবার তাকে এই পেশা পরিবর্তনের জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু যিনি গত ৪০ বছর ধরে সমুদ্রে চষে বেড়াচ্ছেন, তার পক্ষে কি এ গভীর নীল হাতছানিকে উপেক্ষা করা সম্ভব! প্যাকার্ডেরও তাই এমন কোন পরিকল্পনা নেই।
- সূত্র- বিবিসি