প্রাণিরা ভোট দেয়!
চলতি নভেম্বরে সমাপ্ত নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের মতো ভোটাভুটির এই প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক সকল দেশেই একটি সাংবিধানিক অধিকার। তবে আমরা মানুষেরাও প্রাণি। আর জীবজগতে অনেক প্রাণি আছে যারা নিয়মিত ভোট দেয়। বিশেষ করে, গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাসকারীরা। কীভাবে প্রাণিদের সেই ভোটদানের চমকপ্রদ কাজটি হয়ে থাকে, তা তুলে ধরতেই এ আয়োজন।
গণতান্ত্রিক নাচ:
আমাদের মানুষদের মধ্যে কেউ যদি প্রার্থীতা করতে চায়, তাহলে তাকে আগে প্রচারণা চালাতে হয়। ভোট পাওয়ার জন্য তিনি যে সবার যোগ্য সেটা বিশ্বাসযোগ্যভাবে অন্যের কাছে উপস্থাপন করতে হয়।
মৌমাছিরাও প্রচারণা চালায়। তবে নির্দিষ্ট একটি সময়। চাক পরিবর্তন বা নতুন মৌচাক গড়ার ক্ষেত্রে তারা এক নাচের আসর আয়োজন করে।
অনেক সময় পুরোনো চাক অনেক বড় হয়ে পড়ে বা সেটি বিপজ্জনক কোনো অবস্থায় থাকতে পারে। রানি মৌমাছি কিন্তু সেই চাক ছাড়তে চায় না। সে ও তার অনুসারীরা সেখানেই রয়ে যায়। কিন্তু, অন্য স্ত্রী মৌমাছিদের কেউ কেউ অনুসন্ধানী হিসেবে আশেপাশের এলাকায় নিরাপদে চাক গড়ার জন্য আদর্শ জায়গা খুঁজে বেড়ায়।
এরপর নিজ নিজ পছন্দের স্থানের সন্ধান নিয়ে ফিরে আসে অনুসন্ধানীরা। নতুন স্থানের দিক নির্দেশ করতে তারা উড়ে উড়ে এক ধরনের নাচ প্রদর্শন করে। নতুন স্থানটি যতো আদর্শ হয়, নাচের স্থায়িত্বও হয় ততোটাই দীর্ঘ এবং উত্তেজনাপূর্ণ। যার নাচ সবচেয়ে ভালো লাগে পুরোনো চাকের মৌমাছিদের বড় অংশ তাকেই অনুসরণ করে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, রানির কথাই এখানে শেষ নয়। মৌমাছিরা নতুন চাকের ব্যাপারে গোষ্ঠীবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়; যা স্বৈরশাসন বা রাজতন্ত্রের চাইতে অনেক ভালো।
মিরক্যাটদের ভোজের সময়:
এই নামের আফ্রিকান বেঁজিদের বসবাস দক্ষিণ আফ্রিকার মরুভূমি এবং শুষ্ক তৃণভূমিতে। গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে একসঙ্গে বসবাস ও কাজ করার জন্য তারা বিখ্যাত। তাদের ছোট ছোট সমাজে বাচ্চাদের দেখাশোনা করা, খাদ্যের সন্ধানে বের হওয়া বা শিকারির আক্রমণ থেকে রক্ষা- সব দায়িত্ব ভাগাভাগি করা থাকে।
ডেরা পাহারা দেওয়ার জন্য পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে মিরক্যাটদের সতর্ক চেহারা টেলিভিশনের কল্যাণে অনেকেই দেখেছেন। পাহারা দেওয়ার সময় আশেপাশের নানা বিপদ সম্পর্কে জানাতে তারা বিভিন ধরনের আওয়াজ করে সঙ্গীদের সতর্ক করে।
তবে মিরক্যাটের এক ধরনের ডাককে বিজ্ঞানীরা ভোটের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই ডাক তারা দেয় গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে শিকারের সময়।
পুরোনো এলাকায় পছন্দের পোকামাকড় পাওয়া না গেলে শিকারি দলে থাকা মিরক্যাটদের মধ্যে কেউ কেউ এই আওয়াজ করে। নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে অনেকটা বেড়ালের মিউমিউ এর মতো করে তারা এ ডাক দেয়। শিকারি দলে থাকা কমপক্ষে তিনজন এই ডাক দিলেই সম্পূর্ণ দলটি নতুন এলাকায় শিকারের সন্ধানে যায়।
বাঁদরের বাঁদরামি:
মিরক্যাটেরা কণ্ঠভোট দিলেও অলিভ বেবুনেরা ভোট দেয় পা দিয়ে। আফ্রিকার এই বানর প্রজাতির প্রাণিরা খাদ্যের সন্ধানে যখন বের হয় তখন তাদের মধ্যে একাধিক নেতা থাকে। কিন্তু, কোনপথে গিয়ে খাদ্যের সন্ধান করা হবে, তা নিয়ে অনেক সময়য় নেতাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়।
দুই নেতার পছন্দের পথ যদি কাছাকাছি হয়, তাহলে ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের নিয়ে বেবুন নেতারা দুইটি পথে যেতে থাকে। তবে ভিন্ন দুই পথের মধ্যে দূরত্ব বেশি হলে, যে নেতার সমর্থক বেশি তার পছন্দের পথেই হাঁটে দলের সাধারণ সদস্যেরা। গণতান্ত্রিক উপায়ে এটাকেই পা দিয়ে 'ভোট' দান বলছেন বিজ্ঞানীরা।
কুকুরগুলির কী টিস্যু দরকার!:
আফ্রিকার বন্য কুকুরেরা একসাথেই শিকার করে, খায় আর ঘুমায়। শিকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় তারা চারপায়ে উপর-নিচে লাফালাফি করে। এসময় উত্তেজনা নিয়ে তারা একে-অপরকে অভিনন্দন জানায়। বিজ্ঞানীরা একে নির্বাচনী র্যালির সঙ্গেই তুলনা করেছেন।
এই র্যালির সময় কুকুরগুলো হাঁচি দেয়। তবে তাদের অ্যালার্জি বা কোনো রোগ হয়েছে , এমনটা ভাবার দরকার নেই। এটা আসলে এক ধরনের ভোট। ঘন ঘন হাঁচি দেওয়া হলে, শিকারের সিদ্ধান্তও দ্রুত নেওয়া হয়।
তবে সবার ভোট! মানে হাঁচি আসলে সমান নয়। দলের ভেতর উচ্চ সামাজিক মর্যাদার কুকুরদের তিনটি হাঁচিই যথেষ্ট। তুলনামূলক নিচু পদমর্যাদার কুকুরদের সমাবেশ হলে সেখানে অনেক বেশি হাঁচির প্রয়োজন হয়।
আফ্রিকার বন্য কুকুরেরা ইচ্ছে করেই হাঁচি দেয় নাকি এর উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই- বিজ্ঞানীরা এখনও সেই প্রশ্নের উত্তর জানেন না। তবে মানুষ কিন্তু নিজের ইচ্ছেতেই সব সময়য় ভোট দিয়ে থাকে।
- সূত্র: রেঞ্জার রিক ডটকম