রেকর্ড ২৫৭ কোটি টাকায় বিক্রি হতে যাচ্ছে ফ্রিদা কাহলোর আত্মপ্রতিকৃতি
এ বছরের শেষের দিকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নিলামে ফ্রিদা কাহলোর আত্মপ্রতিকৃতি বা সেলফ-পোর্ট্রেট ৩০ মিলিয়ন ডলারে (প্রায় ২৫৭ কোটি ১৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা) বিক্রি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। কোনো লাতিন আমেরিকান শিল্পীর তৈরি চিত্রকর্ম এই প্রথম এত দামে বিক্রি হবে।
নিলামভিত্তিক কোম্পানি সোথবি'স জানায়, 'দিয়েগো ই ইয়ো' ['দিয়েগো ও আমি'] শিরোনামের ওই আত্মপ্রতিকৃতির আনুমানিক মূল্য ৩০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এর আগে ২০১৬ সালে তার আরেকটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছিল ৮ মিলিয়ন ডলারে।
মেক্সিকান চিত্রশিল্পী ফ্রিদার এ চিত্রকর্ম তার স্বামী দিয়েগো রিভেরার একটি চিত্রকর্মের মূল্যকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে দিয়েগোর একটি চিত্রকর্ম রেকর্ড ৯.৮ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
সোথবি'স চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল ফাইন আর্টের বিশ্বব্যাপী বিক্রয় প্রধান ব্রুক ল্যাম্পলি এক বিবৃতিতে বলেন, "ফ্রিদা কাহলোর আবেগীয় ও দুর্বোধ্য প্রতিকৃতি 'দিয়েগো ই ইয়ো' একটি সুনিপুণ চিত্রকর্ম। নভেম্বরে আমাদের মডার্ন ইভনিং নিলামে উঠবে এটি।"
'আধুনিক ক্যাটাগরির শিল্পকর্মের সাম্প্রতিক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে অগ্রদূত হিসেবে ভূমিকা পালন করছে তার এ প্রতিকৃতি। এ ক্যাটাগরির বিস্তারের মাধ্যমে স্বল্প পরিচিত শিল্পী, বিশেষ করে নারী শিল্পীদের ঐতিহাসিকভাবে কীভাবে নিলামে মূল্যায়ন করা হয়েছে, তা পুনর্বিবেচিত হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।
নিজস্ব ধরনের আত্মপ্রতিকৃতির জন্য খ্যাতি রয়েছে ফ্রিদা কাহলোর। ইউরোপীয় রেনেসাঁর সময় এ ধরনের চিত্রকর্ম ছিল জনপ্রিয়।
মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে আঁকা 'দিয়েগো ই ইয়ো' চিত্রকর্মটি ফ্রিদার সর্বশেষ আত্মপ্রতিকৃতি হিসেবে গণ্য করা হয়।
মেক্সিকান ম্যুরালিস্ট দিয়েগো রিভেরার সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহের পর (১৯৩৯ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর পরের বছর এ দম্পতি পুনরায় বিয়ে করে) ফ্রিদা আজটেক ও ইস্টার্ন মিথোলজি থেকে শুরু করে ঔষধ এবং উদ্ভিদবিদ্যা পর্যন্ত নানা রকমের বিষয়ে প্রভাবিত ছিলেন। এসব প্রভাব লক্ষ্য করা যায় তার চিত্রকর্মে।
ফ্রিদা তার আঁকায় নিজের স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং দিয়েগোর সঙ্গে বিরূপ সম্পর্কের চিত্রও তুলে ধরেছেন।
দিয়েগোকে নিজের কাজের সমালোচনা করতে বলার মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে ফ্রিদার। পরবর্তীকালে তাদের সম্পর্কের উত্থান-পতন তার শিল্পকর্মগুলোর একটি মূল বিষয় হয়ে ওঠে।
'দিয়েগো ই ইয়ো' চিত্রকর্মে ফ্রিদাকে হুইপিল পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ মেক্সিকোর তেহুয়ানটেপেকের ইস্তমাস অঞ্চলের নারীদের পরিহিত এক ঐতিহ্যবাহী ব্লাউজ এটি। এই বিশেষ লাল হুইপিলটি তার অনেক সুপরিচিত আত্মপ্রতিকৃতিতেই দেখা যায়। এমনকি হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান প্রতিকৃতিবিদ নিকোলাস মুরের একটি বিখ্যাত সিরিজের ফটোগ্রাফেও ব্লাউজটি পরেছিলেন ফ্রিদা।
যদিও ফ্রিদার বেশিরভাগ আত্মপ্রতিকৃতিতেই তার চুল শক্ত করে বাঁধা, কিন্তু এ চিত্রকর্মে দেখা যাচ্ছে তার খোলা চুল তাকে প্রায় শ্বাসরোধ করে রেখেছে। প্রতিকৃতিতে তার গাল লালচে; তিনি তাকিয়ে রয়েছেন কান্নাভেজা চোখে। তার কপালের মাঝখানে রয়েছে দিয়েগোর মাথা ও কাঁধ। ফ্রিদার মনে দিয়েগোর কেন্দ্রীয় অবস্থানের প্রতীক এটি। সেইসঙ্গে দিয়েগোর কপালে একটি তৃতীয় চোখও আঁকা হয়েছে।
সোথবি'সের মতে, ফ্রিদার বান্ধবী মারিয়া ফেলিক্সের সঙ্গে দিয়েগোর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের ঘটনার সঙ্গে মিলে যায় এ চিত্রকর্ম।
সোথবি'সের লাতিন আমেরিকান আর্টের পরিচালক আনা ডি স্ট্যাসি এক বিবৃতিতে বলেন, "ফ্রিদা কাহলো আধুনিক শিল্পের একটি বৈশ্বিক আইকন। তার কাজ বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। বিস্তারিত রেন্ডারিং, জটিল আইকনোগ্রাফি ও গভীরভাবে ব্যক্তিগত ঘটনার বহিঃপ্রকাশ 'দিয়েগো ই ইয়ো'। ফ্রিদার পরিপক্ক চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য এগুলো।"
'দিয়েগো ই ইয়ো' আগামী ৭ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত হংকং এবং ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত লন্ডনে জনসাধারণের জন্য প্রদর্শিত হবে। নভেম্বরে আসন্ন নিলামে বিক্রির আগে প্রদর্শনীর জন্য পরবর্তীকালে নিউইয়র্কে নিয়ে আসা হবে এটি।
-
সূত্র: সিএনএন