শ্রীলঙ্কায় হলুদ এখন স্বর্ণ!
মিহি স্বাদ, স্বতন্ত্র হলুদ বর্ণ, গন্ধ, আয়ুর্বেদিক ওষুধের গুণের জন্য শ্রীলঙ্কায় হলুদ খুব প্রশংসিত। হলুদের কদর কতটা, তা রান্নায় তাদের হলুদের ব্যবহার দেখলেই বোঝা যায়।
তবে গৃহযুদ্ধের সময় হলুদ চাষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে দেশটিকে দীর্ঘদিন আমদানিকৃত হলুদের ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করতে হয়েছে।
অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বরে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে এবং ক্ষুদ্র পর্যায়ের কৃষকদের সহায়তা করার লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কা সরকার হলুদ ও অন্যান্য বেশ কয়েকটি মশলা আমদানি নিষিদ্ধ করে। ফলে কৃষকেরা এখন দেশেই এগুলো চাষ করা শুরু করেছে, যা এই কোভিডকালের আগে আমপারা অঞ্চলের চাষীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষি উৎপাদন কো-অপ-সোসাইটির সভাপতি দয়ারাথনে বান্দারা (৫৪) বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম, করোনাভাইরাস এলে আমরা আমাদের ফসল বিক্রি করতে পারব না; তবে এবার আমরা আরও ভালো দাম পেয়েছি। এটি আমাদের জন্য খুব লাভজনক হয়ে উঠেছে।'
বাজারগুলোতে এক কেজি কাঁচা হলুদ ৮০ রুপিতে (শ্রীলঙ্কান অর্থমুদ্রা) বিক্রি হতো, তবে আমদানি নিষেধাজ্ঞার কারণে চাহিদা বেড়েছে। বসন্তের ফসল কাটার পর তারা কেজিপ্রতি কাঁচা হলুদ ৩০০ রুপি (বাংলাদেশি ১৩৬ টাকা প্রায়) এবং শুকনো হলুদ ৪ হাজার রুপিতে (প্রায় ১৮২৫ টাকা) বিক্রি করছেন।
কয়েক দশক ধরেই গোনাগালার কৃষকরা শিকড় ও গুঁড়ো উৎপাদন এবং বিক্রি করে আসছেন। ১৯৯৯ সালের এক রাতে এই গ্রামের প্রায় ৫০ জনকে হত্যা করার পর গোনাগালে হলুদ চাষ বন্ধ হয়ে যায়।
বান্দারা বলেন, 'এরপর আমরা যুদ্ধের বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। হলুদের চাষ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা ছিল না। আমরা শুধু বেঁচে থাকার চেষ্টা করছিলাম।'
২০১৮ সালে প্রায় এক দশক পর বান্দারাসহ অন্যরা অঞ্চলে আবারও হলুদ চাষের জন্য আবেদন জানায় ক্ষুদ্র কৃষি ব্যবসা অংশীদারিত্ব সংগঠনে (স্যাপ)। ১০০ কৃষকের জন্য হলুদ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় গোনাগালায়। সেখানকার কৃষকদের মাঝে এ উদ্যোগ আশার আলো নিয়ে আসে।
বেশিরভাগ কৃষকের কাছেই তখন ছিল না প্রয়োজনীয় মূলধন। তারা পারছিলেন না ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেও। অনেকে আবার স্থানীয়দের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তা উচ্চসুদে পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। স্যাপের সহযোগিতায় শ্রীলঙ্কার পল্লী উন্নয়ন ব্যাংক গ্রামীন কৃষকদের তখন ঋণ দেওয়া, প্রশিক্ষণ, মেশিনসমূহ সরবরাহের ব্যবস্থা করে দেয়।
যেহেতু হলুদ চাষে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে, তাই দেশজুড়েই শুরু হয় এই মশলার চাষ। নিত্যপ্রয়োজনের জন্য মানুষ তাদের বাড়ির বাগানেই এখন হলুদের চাষ করছেন।
স্যাপের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ড. ইয়াসানাথ ম্যাপাতুনা বলেন, 'আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হলুদ অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।'
গোনাগালার কৃষকদের সাফল্য দেখে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে আরও ১৫০ কৃষক এই প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্যাপ এখন কাজ করছে শ্রীলঙ্কার পাঁচ জেলাজুড়ে।
ম্যাপাতুনা বলেন, 'দেশে একটি হলুদ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা, যেন আমাদের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পরও কৃষকরা থেমে না থাকেন। এতে তারা নিজেদের দুর্বল না ভেবে শক্তিশালী মনে করবেন।'
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান