১৫ বছর ধরে পাহাড় কেটে যে রাস্তা বানালো গ্রামবাসী
পাহাড়ের আড়ালে, বহির্বিশ্ব থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়েই ছিল চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শানসি প্রদেশের শেনলংওয়ান গ্রাম।
অপ্রতুল যাতায়াত ব্যবস্থার ফলে ধীরে ধীরে দারিদ্র্য ঘিরে ধরছিল গ্রামটিকে। এর হাত থেকে বাঁচতে গ্রামবাসী নিজেরাই ছেনি আর হাতুড়ি হাতে নেমে পড়েন পাথর কেটে কেটে পাহাড়ের বুকে রাস্তা নির্মাণে।
১৫ বছর প্রচেষ্টার পর সফলতার মুখ দেখেন তারা।
শেনলংওয়ান গ্রাম মূলত আখরোট ও নাশপাতির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এসব ফল বাজারে নিয়ে যাওয়া স্থানীয়দের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিলো। শহরের বাজারে যাওয়ার জন্য তাদের সরাসরি যাতায়াতের কোনো পথ ছিলো না।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনটি ভিন্ন প্রদেশের আটটি জনপদ ঘুরে, বিপজ্জনক পাহাড়ি সিঁড়ি পেরিয়ে চলাচল করতে হতো তাদের।
থাকতে না পেরে অবশেষে একদিন গ্রামের সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন একটা বিহিত করে ছাড়বেন; যদি কর্তৃপক্ষ কোন উপায় বাতলে না দেয়, তাহলে নিজেরাই এবার ব্যবস্থা নেবেন।
এরপরই গ্রামের ছেলেবুড়ো সকলে মিলে লেগে গেলেন রাস্তা নির্মাণে।
নির্মাণকাজে অংশ নেওয়া শেনলংওয়ানের বাসিন্দা ডুয়ান জিয়ানলিন বলেন, "আমরা জানতাম সড়কটি আমাদের ভীষণ দরকার। যদি আমরা এক বছরে এটির নির্মাণ শেষ করতে না পারি, আমরা দুই বছরব্যাপী চেষ্টা করব। তাও যদি যথেষ্ট না হয়, তাহলে তিন বছর সময় নেব।"
১৯৮৫ সালে তারা রাস্তা খোঁড়ার দুঃসাধ্য কাজ শুরু করেন।
শেনলংওয়ান চারদিক থেকে পাথরের পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত, ফলে রাস্তা তৈরি করতে হলে পাথর ভেঙে ভেঙে এগোতে হবে, যা অত্যন্ত কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ।
আধুনিক কোন উপকরণ নয়, হাতুড়ি-ছেনির মতো একদম প্রাথমিক সরঞ্জাম দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়।
অবশেষে ১৫ বছর পর, ২০০০ সালে এসে ১৫২৬ মিটার লম্বা সে রাস্তা জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
শেনলংওয়ানের জন্য পর্যটন ও বাণিজ্যের দ্বার খুলে দিয়েছে এই রাস্তা। এখন আর শহরে ফল সরবরাহ করতে অবর্ণণীয় কষ্ট পোহাতে হয় না গ্রামের বাসিন্দাদের।
প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ পর্যটক এই রাস্তা আর পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করে এই ছোট্ট গ্রামে।
দারিদ্র্যও এখন আর তাড়া করে ফেরে না; গ্রামটিতে মাত্র ৭ শতাধিক মানুষের বাস, যার ৬০ শতাংশই পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত।
২০০০ সালে পাহাড় কেটে তৈরী করা রাস্তাটি চালুর আগে গ্রামটির গড় মাথাপিছু আয় ছিলো মাত্র ৬৮০ ইউয়ান, আজ সেটিই বেড়ে ১২০০০ ইউয়ানে পৌঁছেছে।
- সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল