মাইক্রো হোম: ৭ মিটারের শস্যগোলা যখন দোতলা বাড়ি!
নেদারল্যান্ডসের ডিজাইন একাডেমী আইন্ডহোভেন থেকে সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন স্টেলা ভ্যান বিয়ারস। বইয়ের পাতায় স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে যা শিখেছেন তার বাস্তব প্রয়োগ ঘটাতে এক অভিনব এক্সপেরিমেন্টই করে বসেছেন তিনি, যা আগে কেউ কল্পনা করেনি। পৃথিবীতে কত শত রকম অদ্ভুত বাড়িই না রয়েছে, সেই তালিকায় এবার নিজের কাজকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এই ডাচ তরুণী। কিভাবে? কারণ তিনি শস্য মজুদের ছোট্ট এ গোলাকেই পরিণত করেছেন নিজের বাড়িতে!
'সাইলো লিভিং' নামের একটি প্রজেক্টের আওতায় এই গোলা-বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করেন স্টেলা। ওয়াচটাওয়ার ধাঁচের এবং মেটালের তৈরি, পরিত্যক্ত শস্যগোলাকে দুইতলা বাসস্থানে রূপ দিয়েছেন তিনি। তিনি মনে করেন, সাময়িকভাবে থাকার জন্য এটি একটি অপশন হতে পারে।
প্রজেক্টের জন্য সাত মিটার উঁচু একটি শস্যগোলাকে বেছে নিয়েছিলেন স্টেলা। যদিও এগুলো থাকার জন্যে খুব একটা উপযুক্ত নয়, তবে এ ধরনের 'সাইলো' বা শস্যগোলার কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। আর তা হলো, কোনোরকম প্ল্যানিং পারমিশন বা অনুমতি ছাড়াই গ্রামাঞ্চলে এসব শস্যগোলা বসানো যায়।
এদিকে নেদারল্যান্ডসে গবাদিপশুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় শস্যদানার চাহিদা কমে গেছে। ফলে গ্রাম্য এলাকাগুলোতে প্রচুর শস্যগোলা অব্যবহৃত পড়ে আছে। স্টেলা চান, মানুষ এসব গোলা পুনর্ব্যবহার করুক। কারণ এগুলো ভেঙে ফেলা বা রিসাইকেল করাও বেশ ব্যয়বহুল কাজ।
"আপনি গ্রাম্য এলাকাগুলোতে সবসময়ই এসব গোলা খুঁজে পাবেন। আমি সবসময়ই চাইতাম এগুলোর ভেতরে যেতে, যেন সাময়িকভাবে একটা থাকার জায়গা খুঁজে পাই", বলেন স্টেলা।
নিজের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে স্টেলা অনলাইনে ৭ মিটার উচ্চতার একটি শস্যগোলা অর্ডার করতে যান। কিন্তু তার উদ্দেশ্য জানার পর গোলার মালিক নিজেই তাকে বিনামূল্যে এটি দিয়ে দেন।
'সাইলো'র মতো শস্যগোলাতে আসলে মানুষ ঢোকার কোনো উপায়ই থাকে না। তাই স্টেলা এটিকে নিজের মতো করে বদলে নিতে শুরু করেন।
প্রথমেই তিনি গোলার মধ্যে দুটি দরজা বসান, এরপর একটি স্পাইরাল সিড়ি এবং অ্যাক্সেস ডেক বসান। ভেতরে যতখানি সম্ভব বেশি জায়গা রাখতে তিনি দুটি আলাদা ফ্লোর তৈরি করেন এবং মই ও সিঁড়ির মাধ্যমে দুটি তলার মধ্যে যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখেন।
স্টেলা তার এই ছোট্ট বাড়ির নিচতলাকে বসার ঘর, কাজ বা খাওয়ার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেন। উপরের অংশতে শুধুমাত্র একটি ম্যাট্রেস রেখেছেন তিনি; সেখানেই চলে তার সুখনিদ্রা। এখানেই শেষ নয়; স্টেলার গোলা-বাড়ির দুটি তলাতেই আছে প্রজেক্টিং জানালা এবং স্কাইলাইট যা লুকআউট পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে।
"সিলিন্ড্রিক্যাল বাড়ি আমরা সাধারণত খুব একটা দেখি না। তাই এটা নির্মাণ করা আমার জন্য এক রকম চ্যালেঞ্জই ছিল", বলেন স্টেলা।
তিনি আরও জানান, 'সাইলো'র মতো শস্যগোলা দিয়ে যত রকম বাড়ি বানানো যাবে, সবগুলোতেই মানসম্মত উপকরণ ব্যবহার করা হয়। তাই যে কেউই চাইলে নিজেদের ইচ্ছামতো করে গড়ে নিতে পারেন বাড়ি। স্টেলার প্রত্যাশা, 'সাইলো'র মালিকেরাও যেন তাকে দেখে সৃজনশীলতার প্রতি আগ্রহী হন।
স্টেলা আরও জানান, প্রথম প্রজেক্ট নিয়ে তিনি বেশ খুশি। কিন্তু দ্বিতীয়বার যদি তিনি সাইলো হাউজ বানাতে যান তাহলে তিনি এতে আরও কিছু পরিবর্তন আনবেন। তাছাড়া সাইলো যত বড় হবে, সেখানে থাকার জায়গাও বেশি হবে।
সূত্র: ডিজিন