বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবন বুর্জ খলিফা, যেখানে নিচতলা ও শীর্ষতলায় সময় হয়ে যায় ভিন্ন
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই-এ অবস্থিত বুর্জ খলিফা পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা ভবন। টম ক্রুজের মিশন ইম্পসিবল ফ্র্যাঞ্চাইজ-এর ঘোস্ট প্রটোকল যারা দেখেছেন, তারা হয়তো বুর্জ খলিফার উচ্চতা নিয়ে খানিকটা ধারণা পেয়েছেন।
ওই সিনেমায় টম ক্রুজকে ভবনটির গায়ে মাকড়সার মতো বেয়ে বেয়ে উঠতে দেখা যায়। সেটা দেখে অনেকের হয়তো হৃৎস্পন্দন কিছুক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিল, চারপাশের সময় আটকে গিয়েছিল! জানেন কি সত্যিই বুর্জ খলিফাতে সময় 'আটকে' যায়! 'আটকে' যাওয়াটা রূপক অর্থে বলা হলেও, সত্যিই বুর্জ খলিফাতে সময়ের হেরফের ঘটে।
ব্যাপারটা খুলে বলা যাক। বুর্জ খলিফার উচ্চতা ২৭১৬.৫ ফুট বা ৮২৮ মিটার। এত বেশি উচ্চতার জন্য এ ভবনটির নিচতলায় একজন মানুষ ঘড়িতে যে সময় দেখেন, একদম ওপরতলায় অবস্থান করা মানুষ একই সময়ে তার ঘড়িতে সময়ের মান ভিন্ন দেখবেন!
নতুন একটি বইয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন স্থপতি ও লেখক স্টেফান আল। তার বইটির নাম সুপারটল। সেখানে বিশ্বের সুউচ্চ স্কাইস্ক্র্যাপারগুলোর বিষয়ে বিশদ বর্ণনা করেছেন তিনি। এ বইটিতে তিনি প্রকাশ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা ভবনের মানুষদের জীবনযাত্রার ওপর ভবনটি কীরকম প্রভাব ফেলে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এম্পায়ার স্টেইট ভবনের চেয়ে দ্বিগুণ উঁচু বুর্জ খলফা। আল লিখেছেন, পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত তৈরি করা কোনো কিছুর চেয়ে অনেক বেশি বড় বুর্জ খলিফা।
আলের বইয়ের তথ্যমতে, বুর্জ খলিফার শীর্ষ থেকে আরব মরুভূমির এত দূরের দিগন্ত দেখা যায় যে, ভূমিতে থাকা মানুষের চেয়ে ওপরের মানুষ সূর্যাস্ত কয়েক মিনিট পরে ঘটতে দেখেন। সময়ের ভিন্নতার কারণে যারা ওপরের দিককার তলাগুলোতে বাস করেন, তাদেরকে রমজানের সময় রোজা ভাঙার জন্য কয়েক মিনিট বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়।
'দুবাইয়ের ইমাম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, এ ভবনের ৮০ তলার ওপরে যারা বাস করেন তাদেরকে রোজা ভাঙার জন্য দুই মিনিট বেশি অপেক্ষা করতে হবে। আর যারা ১৫০ তলার ওপরে বাস করেন, তাদেরকে আরও তিন মিনিট বেশি অপেক্ষা করতে হবে,' এমনটাই লিখেছেন আল তার বইয়ে।
এ ভবনে 'পৃথিবীর স্থানীয় তাপমাত্রা ও জলবায়ুরও ভিন্নতা ঘটে' বলে আল তার বইয়ে জানিয়েছেন। এর কারণ বেশি উচ্চতার জন্য এটির শীর্ষভাগের অর্ধেক অনেক সময় মেঘের ওপরে থাকে। এর ফলে বুর্জের এ অংশের গায়ে বৃষ্টিও পড়ে না।
বুর্জ খলিফার শীর্ষভাগের বাইরের অংশের তাপমাত্রা ৬° সেলসিয়াস বলে ধারণা করা হয় যা ভূমির তাপমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এর ফলে ওপরের তলাগুলোতে এয়ার কন্ডিশনিং-এর বিশেষ প্রয়োজন হয় না বলে জানিয়েছেন আল।
২০২২ সালের ১২ এপ্রিল ডব্লিউ. ডব্লিউ. নর্টন অ্যান্ড কোম্পানি সুপারটল বইটি প্রকাশ করেছে।
সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার