আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব: এক সপ্তাহে গমের দাম বেড়েছে মণে ২০০ টাকা
ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য গমের দাম। ব্যবসায়ীদের মতে, গত দুই সপ্তাহেই পাইকারিতে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) গমে প্রায় ২০০ টাকা দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারে গমের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পণ্যটির দাম বেড়েছে বলে জানা গেছে।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহষ্পতিবার ভালো মানের প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) কানাডার গম বিক্রি হয়েছে ১২৫০ টাকায়। গত সপ্তাহের শেষ দিকেও বাজারে একই মানের গম বিক্রি হয়েছে ১০৫০-১০৬০ টাকা দামে। চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে এক সপ্তাহেই ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে কানাডার গমের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ভারতীয় গমের দামও বেড়েছে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে। গত সপ্তাহে পাইকারিতে ভারতীয় গম বিক্রি হয়েছে ৯৩০ টাকা দরে। এক সপ্তাহে মণে ১৩০ টাকা বেড়ে গতকাল একই মানের গম ১০৬০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ঈসমাইল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "দীর্ঘদিন মন্দায় ছিল গমের বাজার। এমনকি কোরবানির ঈদের ছুটির পরও পণ্যটির বাজার স্থির ছিল। কিন্তু গত এক সপ্তাহে পাইকারিতে হঠাৎ পণ্যটির বাজার অস্থির হয়ে উঠে। এরমধ্যে পণ্যটির দাম মণে ২০০ টাকারও বেশি বেড়েছে"। বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম স্থির ও দেশীয় বাজারে যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও আমদানিকার ও বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পণ্যটির দাম হঠাৎ অস্থির হয়েছে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী।
অন্য ব্যবসায়ী বলেন, গেল রোজা ও ঈদকে ঘিরে বাজারে আটা-ময়দার বিক্রি বেড়ে যায়। ওই সময় পণ্যটির দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। চাহিদার চেয়ে গমের পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় মূলত ওই সময় দাম স্থির ছিল। তবে কোরবানির ঈদের পর বাজার অস্থির করতে মূলত আমদানিকার ও বড় ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম বাড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস'র তথ্যমতে, দেশের ভোগ্য পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবুল খায়ের, মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, আমান গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপ, এস আলম, দেশবন্ধু, টিকে গ্রুপসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান গম আমদানি করে। এরমধ্যে বর্তমানে মেঘনা ও সিটি গ্রুপের আমদানিকৃত গম বাজারে বেশি ট্রেড হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের একাধিক গম ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দেশীয় বাজারে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে আমদানিকারকরা। অথচ জানুয়ারি থেকে পাঁচ-ছয় মাস আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম নিম্নমুখী ছিল। এখন কিছুটা দাম বাড়ায় দেশের আমদানিকারকরা পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বর্তমানে বাজারে যেসব গম বিক্রি হচ্ছে তা তিন থেকে পাঁচ মাস আগে বুকিং দেয়া। ওই সময় অনেক কম দামে গম কিনেছে আমদাািনকারকরা। তাহলে গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় বাজারে পণ্যটি দাম বাড়বে কেন? তারা বলেন, বর্তমানে বাড়তি দামে যেসব গম বুকিং হচ্ছে তা বাজারে পৌঁছতে কমপক্ষে দুই-তিন মাস সময় লাগবে।
এদিকে ইনডেক্স মুন্ডির ওয়েবসাইটে বিশ্ববাজারে গত ছয় মাসের গমের বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে অর্থাৎ জানুয়ারিতে গমের বুকিং দর ছিল টনপ্রতি ২৩৭ ডলার ৯৪ সেন্ট। এক মাসে ১ ডলার ২১ শতাংশ বেড়ে ফেব্রুয়ারিতে বুকিং হয়েছে ২৪০ ডলার ৮১ সেন্ট। মার্চে এই দাম ঠেকে ২২৯ ডলার ৮৯ সেন্টে। এপ্রিলে বুকিং দর ছিল ২৩৯ ডলার ৯৪ সেন্ট। মে ২৭৮ ডলার ৪৫ সেন্ট। সর্বশেষ জুনে প্রতিটন গমের বুকিং হয়েছে মাত্র ২৩৮ ডলার ৭৭ সেন্টে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত দেশে গম আমদানি হয় কানাডা, রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত থেকে। তবে বর্তমানে কানাডা ও ভারতীয় গম রয়েছে বাজারে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবে দেশীয় বাজারেও গত তিন-চার মাস টানা নিম্নমুখী ছিল গমের দাম। তবে সাম্প্রতিক চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে পণ্যটির দাম আবার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে।
তবে খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ী ও মেসার্স আর এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী থাকায় দেশীয় বাজারেও দীর্ঘদিন গমের দাম নিম্নমুখী ছিল। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাবে দেশীয় বাজারেও পণ্যটির দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।