ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা বাড়তে পারে
ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সময়সীমা আরো বাড়ানো যায় কিনা সে বিষয়ে পর্যালোচনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনা পরিস্থিতি, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি, ব্যাংকের অবস্থা সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিভিন্ন পক্ষ থেকে যেসব আবেদন করা হচ্ছে, আমরা তা যাচাই-বাছাই করে দেখছি।"
"ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাংকের পরিস্থিতিও চিন্তা করতে হবে। যদি কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা বাড়ানো হয়, তাহলে নতুন করে ব্যবসায়ীরা ঋণও পাবেন না। এই বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।"
তাই সব দিক পর্যালোচনা করে যদি মনে হয় কিস্তি পরিশোধ না করার সময়সীমা বাড়ানো উচিত তাহলে সেটিই করা হবে।
করোনার প্রকোপের জন্য গেল বছর জুড়েই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি বছরের জন্য গণহারে এই সুবিধা না দিয়ে ঋণ ভেদে এই সুবিধা দেয়া হয়। প্রথমে মার্চ পর্যন্ত এই সুবিধা দিলেও পরে তা বাড়িয়ে ৩০ জুন করা হয়েছিল।
এই সময়সীমা বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর বরাবর সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই চিঠি দিয়েছে। চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকেও একই দাবিতে গভর্নরের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর মাঝেও অনেক গ্রাহক নিয়মিত ঋণের কিস্তি শোধ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, যেসব গ্রাহক আগে থেকেই ইচ্ছেকৃতভাবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন না, তারা বর্তমানে দেওয়া সুবিধা কাজে লাগাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস- উল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝেও ঋণ আদায় পরিস্থিতি অতোটা খারাপ না। তার ব্যাংকে গেল বছরের তুলনায় সবশেষ হিসেবে ১৫ শতাংশ বেশি ঋণ আদায় হয়েছে।
আক্ষেপ করে তিনি বলেন, দু:খের বিষয় হচ্ছে অনেক খাত আছে যারা মহামারির মাঝে ভালো ব্যবসা করেছে। (যেমন-করোনা সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ফার্মাসিউটিক্যালস ইত্যাদি) অথচ তারা কিস্তি পরিশোধ না করার সুযোগ নিচ্ছে।
তাই কিস্তি পরিশোধ না করার সুযোগ বাড়ানো, কিংবা বিলম্বে পরিশোধের সুযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে- কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে ব্যবসায়ী ও ব্যাংক উভয়েই উপকৃত হয়।
এক্ষেত্রে কিস্তির পুরো টাকাই পরিশোধ না করার সুবিধা, না দিয়ে বরং অর্ধেক কিংবা এক-চতুর্থাংশ পরিশোধ করার সুবিধা দেয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ-এবিবি এর সদস্য ও মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসাইন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত এতে কোন সন্দেহ নেই। আবার এই দুর্যোগেও অনেক ব্যবসায়ী কিস্তি পরিশোধ করছেন। পুরো টাকা পরিশোধ করতে না পারলেও; অনেকে অর্ধেক বা তার বেশি টাকা পরিশোধ করছেন।
আগামীতে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, বলে মনে করেন এই ব্যাংকার। তিনি জানান, ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়ে তাদের সংগঠন (এবিবি) এখনো আলোচনায় বসেনি। আগামী সপ্তাহে তারা আলোচনায় বসতে পারেন।
উল্লেখ্য, ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা পেলেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমেনি। বরং ডিসেম্বরের চেয়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়ে চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকখাতে খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৫,০৮৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৮.০৭ শতাংশ।