এই ঈদেও বাজার হারানোর শঙ্কায় চট্টগ্রামের পোশাক বিক্রেতারা
চট্টগ্রামের ব্র্যান্ড ফ্যাশন হাউস 'শৈল্পিক'। চট্টগ্রাম নগরীতে ১৭টি-সহ দেশে ৩৬টি শোরুম রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত বছরের লকডাউনে পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজার ঘিরে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছিল প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এবার সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম ইলিয়াছ।
৫ এপ্রিল থেকে ১ সপ্তাহের লকডাউনের কারণে বাংলা নববর্ষ ঘিরে বেচা-কেনা পুরোটাই হাতছাড়া হয়ে গেছে। লকডাউন দীর্ঘ হলে গতবারের মতো এবারও হাতছাড়া হয়ে যাবে ঈদ বাজার। এ নিয়ে রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। এবার ২০ কোটি টাকা লোকসানের আশংকায় আছেন তিনি।
এইচ এম ইলিয়াছের মতো চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার পোশাক ব্যবসায়ীর অবস্থা একই। গত বছরের মতো এবারও দোকানপাট বন্ধ থাকলে ব্যবসার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যবে বলে আশংকা ব্যবসায়ীদের।
আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা রমজান মাস। রমজান শুরুর অন্তত ১ সপ্তাহ আগে থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়। তাছাড়া ঈদবাজার শুরুর আগে পহেলা বৈশাখের আয়োজন ঘিরেও বাড়তি বেচা-কেনার প্রত্যাশা ছিল ব্যবসায়ীদের। কিন্তু দেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৫ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় ১ সপ্তাহের লকডাউন। এতে বন্ধ রয়েছে শপিং সেন্টার, বিপণিকেন্দ্রসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
করোনা সংক্রমণ উর্ধ্বগতির কারণে লকডাউন আরও দীর্ঘ হবে, এমন আশংকা ভর করেছে ব্যবসায়ীদের মাঝে।
চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার, সানমার ওসান সিটি, সেন্ট্রাল প্লাজা, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, আমিন সেন্টার, এপোলো শপিং কমপ্লেক্স, আখতারুজ্জামান সেন্টার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, কেয়ারী, লাকি প্লাজা, খুলশি টাউন সেন্টার, ফিনলে স্কয়ার, ইউনেস্কো সেন্টার, অলংকার শপিং কমপ্লেক্স, পাহাড়তলি সিডিএ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরিবাজার, তামাকুমুন্ডি লেন-সহ ছোট বড় বিভিন্ন মার্কেটে ঈদ উপলক্ষে বাহারি পোশাকের মজুদ করেছেন দোকান মালিকরা।
সেইসঙ্গে বিভিন্ন ফ্যাশন ও বুটিক হাউস এবং নগরীর ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররাও (হকার) পোশাক মজুদ করেছেন পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজার কেন্দ্র করে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ খুরশীদ আলম বলেন, 'চট্টগ্রাম মহানগর এবং জেলার সকল উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে পোশাকের দোকান আছে প্রায় ৬০ হাজার। পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে সকল ব্যবসায়ী তাদের দোকানের জন্য পণ্য মজুদ করেছেন। গত বছরের লোকসানে এমনিতে ব্যবসায়ীরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। ঈদ বাজারে গত বছরের মতো অবস্থা হলে অস্তিত্ব হারাবেন ব্যবসায়ীরা। এই অবস্থায় আমরা গত রোববার (৪ এপ্রিল) ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে বসেছি। সরকারের কাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ বাজার চালু রাখার দাবি সকল ব্যবসায়ীদের।'
শৈল্পিক ফ্যাশন হাউসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এম ইলিয়াছ বলেন, 'সরকার ভ্যাট ট্যাক্স আদায়ে বেশি জোর দিচ্ছে। কিন্তু আমরা কীভাবে ব্যবসা টিকিয়ে রাখব, সেই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। এবার ঈদে শোরুম বন্ধ থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালু রাখার নির্দেশনা দিতে হবে সরকারকে।'
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, 'ইতোমধ্যে পহেলা বৈশাখের বাজার হারিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। লকডাউন দীর্ঘ হলে ঈদবাজারও হারোনার শংকা তৈরি হবে। চট্টগ্রাম শহরে প্রতি বছর ঈদ বাজারে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তা কল্পনা করা যায় না।'
চট্টগ্রামের বিভিন্ন শপিংমল, মার্কেটের পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজার উপলক্ষে নানা পণ্যের পসরা সাজান ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা। গত বছর ব্যবসা করতে না পারায় পুঁজি হারিয়েছেন বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। এবার বিভিন্ন এনজিও, মাল্টিপারপাস থেকে ঋণ এবং ব্যক্তিগত ধার-দেনা করে ঈদ বাজারের প্রস্তুতি নিয়েছেন। পুনরায় লোকসানের আশংকায় আছেন তারাও।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ মিরন হোসেন মিলন বলেন, 'চট্টগ্রাম নগরীতে ২২ হাজার ভ্রাম্যমাণ দোকান (হকার) রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার হকার পোশাক, জুতা, কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করে। একটি দোকানে ঈদ বাজারে গড়ে ৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'এবারের ঈদ বাজারে গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠার প্রত্যাশা ছিল তাদের। করোনার সংক্রমণ যেভাবে প্রতিদিন বাড়ছে, তাতে ব্যবসা নিয়ে আশংকা বাড়ছে।'
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্যমতে, চট্টগ্রামে ২ হাজার ৫০০ ফ্যাশন ও বুটিক হাউস রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কারখানায় পোশাক তৈরি করে।
চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক রেবেকা নাসরিন বলেন, 'পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজারকে কেন্দ্র করে নারী উদ্যোক্তারা পোশাক তৈরি করেছেন। করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতির কারণে গতবারের মতো এবারও ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যাবে কি না, সেটি নিয়ে তারা ভীষণ উদ্বিগ্ন।'