এক বছরে ইভ্যালির অর্ডার বাতিল ৫৮%, রিফান্ড পেয়েছেন মাত্র ৯% ক্রেতা
আলোচিত-সমালোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডট কমে পণ্য ও সেবা কেনার অর্ডার দিয়ে অর্ধেকেরও বেশি বাতিল করে দিচ্ছেন ক্রেতারা। তবে অর্ডার বাতিল করা ক্রেতাদের বড় অংশই সময়মত রিফান্ড পাচ্ছেন না। গত এক বছরে অর্ডার বাতিল করা গ্রাহকদের ৯ শতাংশেরও কম অগ্রিম পরিশোধ করা অর্থ রিফান্ড পেয়েছেন।
সময়মত পণ্য ও অগ্রিম পরিশোধ করা অর্থ রিফান্ড না পেয়ে ক্রেতারা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির বিরুদ্ধে ২১৮০টি মামলা করেছেন ক্রেতারা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অনুযায়ী উভয়পক্ষের শুনানী নিয়ে অধিদপ্তর ওই সময় পর্যন্ত ১৭৯৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে বলে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবুল কুমার সাহা।
তিনি লিখেছেন, ভবিষ্যতে ইভ্যালির বিরুদ্ধে ভোক্তা বা ক্রেতাদের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে ক্রেতা স্বার্থরক্ষায় প্রচলিত বিধি-বিধানের আওতায় তা নিষ্পত্তি করা হবে।
ইভ্যালির বিরুদ্ধে অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পর সময়মত পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আগে এক তদন্ত রিপোর্টে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের প্রমাণ পায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে ইভ্যালিকে ক্যাশ অন ডেলিভারি পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এতো বিতর্ক নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা যায় না। তাই আমরা আস্তে আস্তে সরকারের সব ধরণের আইন ও বিধি-বিধান মেনে চলব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেম চালু করেছি, আগামী দিনগুলোতে এটি আরও সম্প্রসারণ করব'।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির অর্ডার, ডেলিভারি, অর্ডার বাতিল ও রিফান্ডের তথ্য সংগ্রহ করেছে। ওই তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে ইভ্যালি মোট অর্ডার পেয়েছে ১.০৮৬ কোটি। বিপরীতে এই সময়ে ইভ্যালি পণ্য ডেলিভারি করেছে ৩৫.৪৫ লাখ অর্ডারের। অর্থাৎ, মোট অর্ডারের ৩২.৯৮% পণ্য ডেলিভারি দিয়েছে।
গত জানুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে ইভ্যালিতে অর্ডার দিয়ে ৬২.৫৯ লাখ অর্ডার বাতিল করেছেন ক্রেতারা, যা এই সময়ে দেওয়া মোট অর্ডারের ৫৭.৫৮%। এর মধ্যে রিফান্ড পেয়েছেন ৫.৫৯ লাখ গ্রাহক, যা মোট বাতিল করা অর্ডারের ৮.৯৩%।
মোহাম্মদ রাসেল জানান, 'অনেক ক্রেতা অগ্রিম পেমেন্ট না করেই পণ্যের অর্ডার দিয়ে থাকে, যা পরে বাতিল হয়ে যায়। অনেক সময় ক্রেতারা মূল্যের একটি অংশ পেমেন্ট করে অর্ডার দেন। আমরা যখন দেখি যে, ৮-১০ দিন পরও বাকি অর্থ পরিশোধ করছে না, তখন ওইসব অর্ডার আমরা বাতিল করে দেই। আবার, ক্রেতা পেমেন্ট করা সত্ত্বেও অর্ডার বাতিল করতে পারেন, কোন পণ্যের স্টক ফুরিয়ে গেলে আমরাও কিছু অর্ডার বাতিল করি'।
'ফলে অর্ডার বাতিল হওয়া সব ক্রেতা রিফান্ড পাবেন না। যারা অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে অর্ডার বাতিল করেছেন, বা ইভ্যালি যাদের অর্ডার বাতিল করেছে, তারাই রিফান্ড পাচ্ছেন। এদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে রিফান্ডও কম', যোগ করেন তিনি।
মাসওয়ারী তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ইভ্যালি ২০.০৩ লাখ অর্ডার পেয়েছে, এই সময়ে বিতরণ হয়েছে ২.৬৫ লাখ অর্ডারের পণ্য। অর্থাৎ, ওই সময়ে মোট অর্ডারের ১৩ শতাংশ ডেলিভারি করেছে ইভ্যালি।
মাসটিতে ১৩.৬২ লাখ অর্ডার বাতিল হয়েছে, মোট রিফান্ড পেয়েছে ২১,৮৪২টি, যা মোট বাতিল হওয়া অর্ডারের ১.৬০%।
গত ডিসেম্বরে ১৯.৮৬ লাখ অর্ডার পেয়েছিল ইভ্যালি, ওই মাসে পণ্য ডেলিভারি পেয়েছে ৪.৪০ লাখ, যা মোট অর্ডারের ২২.১৭%। ফেব্রুয়ারি মাসেও ১৩ লাখ অর্ডার বাতিল হয়েছে, রিফান্ড হয়েছে ৮০,৩৮৫টির।
গত বছর জানুয়ারিতে ২.৯৫ লাখ অর্ডারের বিপরীতে ডেলিভারি হয়েছিল ৯৪ হাজার। ডেলিভারির প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ অর্ডার বাতিল হয়েছিল।
গত এক বছরের মধ্যে গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে মোট অর্ডারের অর্ধেক ডেলিভারি করতে সক্ষম হয়েছে ইভ্যালি। বাকি ১০ মাসে ডেলিভারির হার গড়ে ৩০ শতাংশেরও কম।
মোহাম্মদ রাসেল বলেন, 'আগে আমাদের ডেলিভারি দিতে বেশি সময় লাগলেও এখন তা কমে আসছে। মোটরসাইকেল ছাড়া গড়ে ১৫-২০ দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি করছি আমরা। মোটরসাইকেল ডেলিভারিতে সময় বেশি লাগছে, তবে গ্রোসারি বা বাজারসদাই পণ্য অল্প সময়েই ডেলিভারি করছি। সামনের দিনগুলোতে আরও দ্রুততম সময়ে ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হবে'।