এজেন্ট ব্যাংকিং: ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ মাত্র ১৪ টাকা
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সিংহভাগ একাউন্ট গ্রামীণ জনপদে বসবাস করা মানুষের। এই মানুষগুলো তাদের একাউন্টে আমানতের পরিমাণ বাড়ালেও ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত।
প্রতি ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে এজেন্ট ব্যাংকিং এ ঋণ বিতরণ হচ্ছে মাত্র ১৪ টাকা। অথচ ব্যাংকখাতে গেল মার্চে ঋণ আমানত অনুপাত ছিল ৭২.৮২ শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ হয়েছে প্রায় ৭৩ টাকা।
অবশ্য গেল বছরের মার্চে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রতি ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ হয়েছিল প্রায় ৮ টাকা। সেই তুলনায় চলতি বছরের মার্চে ঋণ বিতরণ তিন গুণের বেশি বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুসন ডিপার্টমেন্ট প্রকাশিত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে দেখা যায় গেল বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের একাউন্ট সংখ্যা বেড়ে ১ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এসব একাউন্টে আমনতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭,৮২২ কোটি টাকা।
আর ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ২,৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫.৫৬ শতাংশ শহরে এবং ৬৪.৪৪ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। মোট ঋণের প্রায় ৭৯ শতাংশ গ্রাহকই পুরুষ, নারী মাত্র ৮ শতাংশ।
এজেন্ট ব্যাংকিং এ আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ এত কম হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঋণ বিতরণ একেবারে নগণ্য হওয়া বলে দিচ্ছে গ্রামের টাকা শহরে ব্যবহার হচ্ছে।
এই হার ন্যায়সঙ্গত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামের টাকা গ্রামের উন্নয়নেই ব্যবহার হওয়া উচিত। তাহলে গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে, যার সুফল পুরো অর্থনীতিতেই পড়বে।
ঋণ বিতরণ কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং আউলেটগুলো বা এজেন্টরা সাধারণ আমানত সংগ্রহ করার কাজই মূলত করে থাকে। ঋণ বিতরণ করার মত সক্ষমতা তাদের (এজেন্ট) নেই বললেই চলে।
এজেন্টদের ওপর ব্যাংকগুলোও ভরসা করতে পারছে না। ঋণ বিতরণ বাড়াতে আঞ্চলিকভাবে অফিস খুলতে হবে ব্যাংকগুলোকে, এতে একটা খরচের ব্যাপারও আছে।
এর বাইরে গ্রামাঞ্চলে ঋণ বিতরণ করতে গেলে ব্যাংকগুলোকে অনেক গভীরে যেতে হবে, এটা কঠিন কাজ। তবে তিনি আশাবাদী চলতি বছর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং এর ঋণ বিতরণের পরিমাণ আমানতের ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে।
ঋণ বিতরণ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতরণ কম হলেও এটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে।
একাউন্ট বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলা হয়, করোনার মাঝেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেবা নিতে জনসাধারণের আগ্রহ বাড়ছে।
এজেন্ট ব্যাংকিং এ নারী একাউন্টধারীর সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চিত্র বলে দিচ্ছে অর্থনীতির মূল ধারায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
গেল বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চ শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ প্রায় ২০০ শতাংশ বেড়েছে পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৮,৪০০ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত রাখা এবং কোন কোন ব্যাংক আরো ১ শতাংশ প্রণোদনা যোগ করায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিটেন্স প্রবাহ এত বেড়েছে।
করোনায় ব্যাংকিং সেবা দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চ শেষে ২৭টি ব্যাংক ১২,৩৪৫ জন এজেন্টের সাহায্যে ১৬,৪২১টি আউট থেকে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।