এপ্রিল-জুনে পাঁচ ব্যাংকের ঋণ আদায় শূন্য
করোনাকালে ঋণ আদায়ে গ্রাহককে নানা সুযোগ দিলেও ঋণ আদায় করতে পারছে না অনেক ব্যাংক। তিন মাসে (এপ্রিল-জুন) পাঁচটি ব্যাংক তাদের বিতরণকৃত ঋণের এক টাকাও আদায় করতে পারেনি।
ব্যাংকগুলো হলো- কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক। একইসঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক নামমাত্র ০.১১% ঋণ আদায় করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলো চলতি বছরের (এপ্রিল থেকে জুন) তিন মাসে প্রায় দশ লাখ ১৯ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১৭ দশমিক ৭%। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ এক লাখ ৮০ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।
তথ্যমতে, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি থেকে ২৪ ব্যাংকের আদায় এক শতাংশেরও কম। একদিকে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি অন্যদিকে আদায়ের নিম্নগতির কারণে ব্যাংকিং খাতকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
এছাড়া নিয়মিত ঋণ থেকে আইএফআইসি ব্যাংকের আদায়ের হার ০.৩০ এবং ন্যাশনাল ব্যাংক পাকিস্তানের আদায়ের হার ০.৬৫ শতাংশ। তবে খেলাপি ঋণ থেকে আদায়ের পরিস্থিতি আরও করুণ।
এদিকে বিদেশি চারটি ব্যাংক খেলাপি ঋণের এক টাকাও আদায় করতে পারেনি। তার মধ্যে রয়েছে সিটিব্যাংক এনএ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংক এবং উরি ব্যাংক।
এছাড়া দেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে খেলাপি গ্রাহক থেকে আদায়ের চিত্র খুবই করুণ ১৯ ব্যাংকের। কারণ এই ১৯ ব্যাংকের আদায়ের হার এক শতাংশের নিচে। সুতরাং সবমিলিয়ে খেলাপি গ্রাহক থেকে ২৩টি ব্যাংকের আদায়ের হার শূন্য থেকে এক শতাংশের মধ্যে।
তথ্য বলছে, জুন শেষে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৫৯ লাখ। সুতরাং মোট খেলাপি শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
একই অবস্থা বেসিক ব্যাংকের। ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮১ কোটি টাকা, জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণের আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১২ কোটি ৭৮ লাখ। সুতরাং ০.২% আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকটি।
এছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ও একই অবস্থা। খেলাপি হয়ে পড়া ১৩ হাজার ৭৭১ কোটি টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ২২ কোটি। শতাংশের হার শূন্য দশমিক ২%। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী রুপালি এবং সোনালী ব্যাংকও ১ শতাংশের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। সব মিলিয়ে খেলাপি গ্রাহকদের থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আদায়ের হার শূন্য দশমিক ৬৪ শতাংশ।
অন্যদিকে, খেলাপি গ্রাহক থেকে এক শতাংশের নিচে আদায় করতে পারা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক লিমিটেড। শতাংশ হিসেবে যার হার ০.৬%।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক আদায় করেছে ০.৫%, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ০.১%, আইএফআইসি ব্যাংক ০.৪%, মিডল্যান্ড ব্যাংক ০.৯% মধুমতি ব্যাংক ০.৩% এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ০.৭ শতাংশ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, ০.৮% ওয়ান ব্যাংক, ০.৪% পদ্মা ব্যাংক, ০.৩% প্রিমিয়ার ব্যাংক, ০.৬%, সাউথইস্ট ব্যাংক, ০.৮% এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ০.৪%। খেলাপি গ্রাহকদের থেকে এক টাকাও আদায় করতে পারেনি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক অর্থাৎ তাদের আদায়ের হার শূন্য শতাংশ।
বাংলাদেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যেও খেলাপি ঋণ থেকে আদায়ের অবস্থা একই রকম। আলোচ্য সময়ে খেলাপিদের থেকে মাত্র ৩ লাখ টাকা আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংক আল-ফালাহ, হিসাব অনুযায়ী যাদের আদায়ের হার ০.১%। এছাড়া হাবিব ব্যাংকের আদায়ের হার ০.৩%।
তথ্য বলছে, জুন শেষে ব্যাংক খাতের অভ্যন্তরীণ মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৫ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে ব্যাংকগুলো আদায় করতে সক্ষম হয়েছে এক হাজার ৭৯৫ কোটি। সুতরাং সার্বিক আদায় হার ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
ব্যাংক খাতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৭৭৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা (অভ্যন্তরীণ+অফশোর ইউনিট)। যা মোট ঋণ বিতরণের ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ।
গত মার্চে খেলাপি ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে তিন হাজার ৭৯ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের তুলনায় গত জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
করোনা মহামারি শুরুর পর ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ব্যাংকের গ্রাহকদের ঋণ খেলাপি না করার বিশেষ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে গত বছরের জুন পর্যন্ত এ সুবিধা ছিল। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বর্ধিত করা হয়।
চলতি বছর আগেরমতো ঢালাও সুবিধা না থাকলেও ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন শিথিলতা আনা হয়। চলতি বছর গ্রাহকের মোট ঋণের কিস্তির ২৫ শতাংশ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না।