এবার জরুরি ভিত্তিতে একীভূতকরণ অথবা অধিগ্রহণ চায় পদ্মা ব্যাংক
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দুর্নীতিতে ডুবতে বসা তৃতীয় প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক)-কে বাঁচাতে নানা আলোচনা-সমালোচনা সত্ত্বেও ২০১৮ সালে ৭১৫ কোটি টাকার মূলধন জোগান দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল সরকারি চার ব্যাংক—সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান—ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ।
নাম পাল্টে পদ্মা ব্যাংক নামে নবযাত্রা শুরুর তিন বছরের মাথায় 'যেকোনো ধরনের বিপর্যয়'-এর আশঙ্কা করে সরকারের যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ (মার্জার) বা অধিগ্রহণ (অ্যাকুইজিশন) করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে ব্যাংকটি।
শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি ঋণাত্মক হতে থাকা ব্যাংকটিকে বাঁচাতে মার্জার বা অ্যাকুইজিশন করা ছাড়া আর একটি পথই খোলা ছিল পদ্মা ব্যাংকের সামনে। সরকারি সংস্থাগুলোর ১,৮০০ কোটি টাকার আমানতকে প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ারে রূপান্তর ও এডিশনাল সাব-অর্ডিনেট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২৪০০ কোটি টাকার মূলধন জোগাড় করার সে চেষ্টায় সম্মতি দেয়নি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
এ অবস্থায় গত ৮ জুলাই পদ্মা ব্যাংকের দুরবস্থার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিন বছর আগে মূলধন জোগান দেওয়া সোনালী, জনতা, অগ্রণী বা রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংককে একীভূতকরণের আবেদন করেছেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরু। এটি সম্ভব না হলে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডসহ অন্য যেকোনো সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার বা অ্যাকুইজিশনের অনুরোধ করেছেন।
চিঠিতে তিনি বলেছেন, 'পদ্মা ব্যাংককে ভবিষ্যৎ যেকোনো ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য যেকোনো একটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করার জন্য সদয় অনুমতি কামনা করছি।'
ইনভেস্টোপিডিয়ার সংজ্ঞানুসারে, মার্জার তখনই হয় যখন পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়, অন্যদিকে অ্যাকুইজিশন তখনই হয় যখন একটি প্রতিষ্ঠান আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে অধিগ্রহণ করে। কোনো কোম্পানি ভোক্তাসংখ্যা বৃদ্ধি বা বাজার অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য মার্জার বা অ্যাকুইজিশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।
এর আগে ব্যাংকটিকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা (ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি) ১২.৫ শতাংশ ধরে রাখার জন্য ২,৪০০ কোটি টাকার জোগান পেতে চেষ্টা করে পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকটিতে থাকা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ১,২০০ কোটি টাকার আমানতের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে থাকা সরকারি সংস্থাগুলোর ৬০০ কোটি টাকাকে প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ারে রূপান্তর এবং এডিশনাল সার্ব-অডিনেট বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে আরও ৬০০ কোটি পাওয়ার চেষ্টা করে পদ্মা ব্যাংক।
এসব প্রস্তাব নিয়ে পদ্মা ব্যাংকের ৬৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করলেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো তাতে রাজি হয়নি। তাই একীভূতকরণ ছাড়া ব্যাংকটিকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার কোনো উপায় নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংক প্রতিষ্ঠার তিন বছরের মধ্যেই ৩,৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতিতে যখন ডুবে যাচ্ছিল, তখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৭১৫ কোটি টাকা মূলধন দিয়ে ব্যাংকটিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে যখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো মূলধন জোগান দেয়, তখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। পদ্মা ব্যাংককে বাঁচানোর ওই চেষ্টা যে ঠিক ছিল না, তা দুই বছরের মাথায় ২০১৯ সালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছিলেন তিনি।
সেসময় মুহিত টিবিএসকে বলেছিলেন, 'আমি এখন বুঝতে পারছি, ফারমার্স ব্যাংককে রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি। প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচানোর চাইতে একে বিলুপ্ত হতে দেওয়াই যথাযথ হতো।'
রাজনৈতিক চাপে ফারমার্স ব্যাংককে রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
'যখন পদক্ষেপ নেওয়া সম্পন্ন হলো (ফারমার্স ব্যাংক রক্ষায়), তখন ভেবেছিলাম প্রতিষ্ঠানটি আপনা থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে,' উল্লেখ করেন সাবেক অর্থমন্ত্রী।
মুহিত বলেছিলেন, 'ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহিউদ্দীন খান আলমগীর, কিন্তু তিনি প্রতিষ্ঠানের সুসময় থাকতেই চলে যান। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার তা হয়েই যায়। ব্যাংকটি লুটপাটের শিকার হয়। এর ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যায়।'
মূলধন জোগাড়ের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার তথ্য তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়কে লেখা চিঠিতে এহসান খসরু বলেছেন, 'অংশীদার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে নতুন মূলধন বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এ প্রেক্ষিতে আশানুরূপ কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।'
'অন্যদিকে সরকারি আমানত ও সরকারি ব্যাংকগুলোর আমানত প্রেফারেন্সিয়াল শেয়ারে রূপান্তর প্রক্রিয়া আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। এ প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, পদ্মা ব্যাংককে অনতিবিলম্বে মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন'—যোগ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, নীতিগতভাবে সরকার যেকোনো প্রতিষ্ঠানকেই মার্জার/অ্যাকুইজিশানের আওতায় আনতে পারে। আর এটা দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যেই করা হয়।
দুর্নীতি ও অনিয়মে ডুবতে বসা পদ্মা ব্যাংককে মার্জারের আওতায় আনা হবে কি না সে সিদ্ধান্তও সরকারের মনোভাবের ওপর নির্ভর করে। তবে এর আর্থিক দায়ভার যেন সরকারের উপর না বর্তায় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, চট করে বলা যাবে না যে মার্জারের সিদ্ধান্ত ঠিক না বেঠিক। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকটির সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। মার্জারের আর্থিক দায় কার ওপর পড়ে সেটাও পর্যালোচনা করতে হবে।
সরকারের কোনো ব্যাংকের জন্য এ দায় বোঝা হয়ে দাঁড়ায় কি না সেটাও দেখতে হবে। মার্জারের সিদ্ধান্তের আগেই দুর্নীতির মাধ্যমে ব্যাংকটি থেকে বের করে নেওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, পদ্মা ব্যাংক এখন দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম। একে সরকারের ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার বা অ্যাকুইজিশন করার অর্থ হলো, জনগণের ট্যাক্সের পয়সা দিয়ে ব্যাংকটিকে বাঁচানো। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না।
তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংককে দেউলিয়াত্ব আইনের প্রসিডিউরগুলো অনুসরণ করে একে দেউলিয়া ঘোষণা করে ব্যাংকটির বাস্তবিক সম্পদ বিক্রি করে তারল্য সৃষ্টি করা যেতে পারে। অর্থাৎ পদ্মা ব্যাংকের গাড়ি, ফ্ল্যাট, ফার্নিচারসহ যেসব সম্পদ আছে, সেগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। অনেক ব্যাংক পদ্মা ব্যাংকের ব্রাঞ্চ নিজেরা নিয়ে পরিচালনা করতে আগ্রহী হতে পারে। এটিএম বুথ থাকলে সেগুলো অন্য ব্যাংক কিনে নেবে। এভাবে ব্যাংকটির ফিজিক্যাল অ্যাসেট লিকুইডেশন করতে হবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, পদ্মা ব্যাংকের এখন যে অবস্থা, তাতে ব্যাংক হিসেবে এটাকে অ্যাক্যুইট করতে কোনো বেসরকারি বিনিয়োগকারী আগ্রহী হবে না। সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জার হওয়ার অর্থ হলো, জাতীয় বাজেটে আরও একটি দেনার বোঝা তৈরি করা। অর্থাৎ করদাতাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া, যা কোনো সমাধান হতে পারে না।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে মার্জার বা অ্যাকুইজিশন হলে পদ্মা ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চাকরি সুরক্ষিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয়করণ বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাকুইজিশন করা ঠিক হবে না। এই ব্যাংকের ক্ষেত্রে এসব উদ্যোগ যে কাজ করেনি, তা প্রমাণিত। তাই ব্যাংক কোম্পানি আইনে দুর্বল ব্যাংকগুলোর জন্য দেউলিয়া আইন প্রয়োগের যে বিধানের কথা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী পদ্মা ব্যাংককে দেউলিয়া ঘোষণার পক্ষে মত দেন তিনি।
যখন ফারমার্স ব্যাংক নামে ডুবতে শুরু করেছিল, তখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে মূলধন জোগান দিয়ে ব্যাংকটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা ঠিক হয়নি। তখনই দেউলিয়া আইন প্রয়োগ করা উচিত ছিল বলেও মনে করেন তিনি।
এমডির চিঠিতে পদ্মা ব্যাংকের বর্তমান চিত্র
২০১৯ সালে পদ্মা নাম নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও তারপর থেকে ব্যাংকটির অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। ওই বছর ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি ছিল ৪৮৭ কোটি টাকা, যা কমতে কমতে এ বছরই ১০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকটির এমডি এহসান খসরু।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে লেখা মার্জার বা অ্যাকুইজিশনের প্রস্তাবে পদ্মা ব্যাংকের এমডি লিখেছেন, ২০২১-এর জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির অ্যাডভান্স-ডিপোজিট রেশিও ৯৪ শতাংশ, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ৮৭ শতাংশের মধ্যে থাকার কথা। এই সময়ে ব্যাংকটির নন-পারফর্মিং লোন মোট বিতরণ করা ঋণের ৬৫ শতাংশের কাছাকাছি।
২০২০ সালের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুসারে ব্যাংকটির সুদযোগ্য সম্পদের পরিমাণ ৫৬২২ কোটি টাকার বিপরীতে আয়যোগ্য সম্পদের পরিমাণ ১৪৯০ কোটি টাকা। ফলে ব্যাংকের পরিচালন লোকসান হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা।
'কোভিড সংক্রমণ দিন দিন বাড়ায় মন্দ ঋণ নিয়মিতকরণের ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর ফলে জুন ২০২১-এ পরিচালন মুনাফার ঋণাত্মকের পরিমাণ ৬ মাসে বেড়ে গিয়ে ১২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঋণাত্মক ৭১ কোটি টাকা নিট সুদের মার্জিন'—যোগ করেছেন তিনি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণাত্মক রিটেইনড আর্নিংস-এর প্রভাবে ব্যাংকটির মোট মূলধন শেয়ারহোল্ডারস ইক্যুইটি ২০১৯ সালের ৪৮৭ কোটি টাকা থেকে ২০২০ সালে ৩৩২ কোটি এবং জুন, ২০২১ সময়ে ২২১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
'এভাবে চলতে থাকলে বছর শেষে ইক্যুইটির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসবে। যদি রক্ষিতব্য সঞ্চিতি হিসাব করা হয়, তাহলে ইক্যুইটি ঋণাত্মক অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াবে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে অশ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ কমে আসায় রক্ষিতব্য সঞ্চিতি ১৯০৫ কোটি টাকা থেকে ১৬৪৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে, যার বিপরীতে ব্যাংকটি মাত্র ১৭৩ কোটি টাকা সঞ্চিতি রাখতে পেরেছে'—লিখেছেন তিনি।
সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কোনো ব্যাংকের ইক্যুইটি নেগেটিভ হওয়ার অর্থ হলো ব্যাংকটির অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যাংকটির দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর মতো কোনো আয় নেই।
'এটা অনেকটা মানুষের সঞ্চয় ভেঙ্গে খাওয়ার মতো অবস্থা। কোনো ব্যাংকে এ অবস্থা চলতে থাকলে কোনো আমানতকারী যখন ব্যাংকটির কাছে তার টাকা ফেরত চাইবে, তখন ব্যাংক তা ফেরত দিতে পারবে না,' জানান তিনি।
সরকারের বিভিন্ন সংস্থা পদ্মা ব্যাংকে আমানত রাখা টাকা মেয়াদ শেষে ফেরত চেয়েও পাচ্ছে না। জীবন বীমা করপোরেশনের ১০৯ কোটি টাকার সাতটি এফডিআর ২০১৮ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও ৩২ বার চিঠি দিয়েও তা ফেরত পায়নি করপোরেশন। ৬ শতাংশ সুদে ২০২৩ সাল থেকে সাত বছর মেয়াদে সুদাসলসহ ফেরত পাওয়ার ব্যাংকটির প্রস্তাবকে 'মন্দের ভালো' হিসেবে মেনে নিয়েছেন বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন জীবন বীমা করপোরেশনের এমডি জহুরুল হক।
পদ্মা ব্যাংকের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব ব্যাংকিং ইন্সপেকশন-এর নিরীক্ষিত প্রতিবেদন ও নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকটিকে ঋণের বিপরীতে ১৬৪৫ কোটি টাকা সঞ্চিতি রাখতে হবে। এর মধ্যে চলতি বছর ১৬৫ কোটি টাকা, পরের বছর ২৪৭ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে ৩২৯ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে ৪১১ কোটি টাকা ও ২০২৫ সালে ৮৯৪ কোটি টাকা।
পদ্মা ব্যাংকের এমডি অর্থমন্ত্রণালয়কে লিখেছেন, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ধারণা করা হচ্ছে ২১০০ কোটি টাকা। মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংকটির টিয়ার-১ মূলধন বৃদ্ধি অপরিহার্য। ২০২০ সালে নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীতে ব্যাংকটিতে পরিশোধিত মূলধন ১,১১৭ কোটি এবং ট্যাস্টেটুরি রিজার্ভ রয়েছে ১৬.৭০ কোটি টাকা।
কিন্তু ব্যাংকটির রিটেইন্ড আর্নিং ঋণাত্মক ৮০৪ কোটি টাকা এবং রেগুলেটরি অ্যাডজাস্টমেন্ট ৬৫ কোটি টাকা হওয়ার কারণে ব্যাংকটিতে টিয়ার-১ মূলধন দাঁড়িয়েছে ২৬৫ কোটি টাকা। ব্যাংকটির মোট মূলধন ৬.৫০ শতাংশ বা ৫৮৫ কোটি টাকা।
এমডির মতে, ব্যাংকটির সাব-অর্ডিনেট বন্ড ২৮৫ কোটি টাকা এবং জেনারেল প্রভিশনের ৩৬ কোটি টাকা টিয়ার-২-তে ধরা হয়েছে। ফলে টিয়ার-১ ক্যাপিটাল ২.৯৪ শতাংশ (টাকা ২৬৫ কোটি) এবং টিয়ার-২ ক্যাপিটাল ৩.৬৫ শতাংশ (টাকা ৩২১ কোটি) এবং মূলধন ৬.৫ শতাংশ বা ৫৮৫ কোটি টাকা।
ব্যাসেল-৩ গাইডলাইন অনুযায়ী, মূলধন ১২.৫ শতাংশের মধ্যে টিয়ার-১ ক্যাপিটালের প্রয়োজন ৭ শতাংশ, ২০২০ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী এর হার ছিল ২.৯৪ শতাংশ।
'টিয়ার-২'-তে সাবঅর্ডিনেট বন্ড ধরা হলেও যদি টিয়ার-২-এর চেয়ে টিয়ার-১ কম হয়, তবে সাবঅর্ডিনেট বন্ড টোটাল ক্যাপিটাল এ হিসাবভুক্ত করা হবে না, যা ব্যাংকটির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তাই ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মূলধন আবশ্যক'—যোগ করেছেন এহসান খসরু।
পদ্মা ব্যাংক নামকরণের আগে ফারমার্স ব্যাংকের ১,৮০০ কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সংস্থাটির আইনজীবী মীর আহমেদ সালাম টিবিএসকে বলেন, ফরমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের হওয়া ১৮ মামলার মধ্যে ১৬টিতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ পর্যন্ত দুটি মামলায় চার্জশিট দিলেও সংশ্লিষ্ট আদালতে এখনো বিচার শুরু হয়নি।