করোনায় স্থগিত হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি, আম্পানে ক্ষতি আড়াইশ কোটি টাকা
বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে খুলনা বিভাগের উপকূলীয় তিন জেলা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও খুলনায় চিংড়ি ব্যবসায়ীদের আটকে যাওয়া টাকার কোনো সুরাহা হওয়ার আগেই, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বড় অংকের ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি চাষীদের।
সংশ্লিষ্ট দফতর অবশ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্থ চাষীদের সহযোগিতা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট আর খুলনায় রপ্তানির জন্য চাষ করা বিপুল পরিমাণ চিংড়ি আটকে যায়। এ অবস্থায় ঘুর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানলে ব্যবসায়ীরা পুঁজি সংকট কাটিয়ে ওঠার আগেই বাঁধ ভাঙা পানিতে ভেসে যায় সাড়ে ২১ হাজার চিংড়িঘের।
সরকারি হিসেবে বলা হয়েছে, অবকাঠামো আর প্রায় ৯০ হাজার হেক্টর জমির চিংড়ি নষ্ট হওয়ায় চাষিদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা।
খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ড. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
'রপ্তানির জন্য তৈরি করা বিভিন্ন মানের চিংড়ি করোনার কারণে সরবরাহ করতে না পারায় ব্যবসায়ীদের আটকে গেছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। আর তাদের এ অবস্থাসহ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করতে সরকার ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নিয়েছে' যোগ করেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে চিংড়ি আর ঘেরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালীগঞ্জ উপজেলায়।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ৬১ হাজার ১২১টি চিংড়ি ঘেরের মধ্যে বাঁধ ভাঙা পানিতে ১০ হাজার ৪৫৬টি ঘের সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ায়, ক্ষতি হয়েছে ১৭৭ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, চাষিদের সহযোগিতা করতে সরকার ইতোমধেই চার শতাংশ সুদে; প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বিষয়টি আমরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জানিয়ে দিয়েছি।
এ ছাড়া খুলনায় আট হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমির ছয় হাজার ৮৬৬টি চিংড়ি ঘের ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকার। বাগেরহাটে ভেসে গেছে পাঁচ হাজার ১২৪টি চিংড়ি ঘের, এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে আম্পানে উপকূলীয় ওই তিন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার চিংড়ি চাষি।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার চিংড়ী চাষি সফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঋণ নিয়ে প্রায় দেড় হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করেছিলেন। বাঁধ ভাঙা পানিতে তার সব চিংড়ি ভেসে গেছে।
"আমার ঋণের দুইলাখ টাকাসহ আম্পানের কারণে ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে চার লাখ টাকা" বললেন সফিকুল ইসলাম।
একই এলাকার আরেক চাষি শাহ আলম দুই হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে। আম্পানে তারও ঘের ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।
"চাষ করা এসব চিংড়ির পুরোটাই শুধু যায়নি, কীভাবে ঋণের দুই লাখ টাকা শোধ করব তা নিয়েও চিন্তাই আছি" যোগ করেন তিনি।
প্রায় একই সমস্যায় পড়েছেন খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।