ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম সুবিধা নিতে এক বছরে মাত্র ২৭৪ আবেদন
করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত যেসব ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণের বিপরীতে জামানত দেয়ার সক্ষমতা নেই, তাদের জন্য জামানতের ব্যবস্থা করেছে স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে গেল বছরের জুলাই মাসে ২ হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু হয়েছে।
প্রায় এক বছর হতে চললেও এই তহবিল থেকে মাত্র ২৭৪টি আবেদনের বিপরীতে ৩টি ব্যাংক ও ৩টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২৯ কোটি টাকার ক্রেডিট গ্যারান্টি ইস্যু হয়েছে।
তহবিল পরিচালনার জন্য গঠিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (সিজিএস) ইউনিট এর কাছে অনুমোদনের অপেক্ষায় কোন আবেদন নেই।
ঋণের গ্যারান্টার স্বয়ং কেন্দ্রীয় ব্যাংক হওয়ার পরও স্কিমের প্রতি আগ্রহ কেন কম?
এ প্রসঙ্গে ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ছোট ঋণ দেয়া এবং এগুলো দেখভাল করার দক্ষতা ও সক্ষমতা ব্যাংকগুলোর কম।
এছাড়া ক্ষুদ্র পর্যায়ে উদ্যোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতেই ব্যাংকগুলোর যে ধরনের নেটওয়ার্ক থাকার কথা সেটা নেই। আবার ঝুঁকিও থাকে বেশি। এসব কারণে এই স্কিমের নিয়ে ব্যাংকগুলো অতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এসএমই ফাউন্ডেশন এর মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার মনে করেন, স্কিমটিকে জনপ্রিয় করতে হলে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে দায়িত্ব নিতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেই।
এসএমই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাদের পার্টনার ব্যাংকগুলোকে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম সুবিধার কথা বলা আছে উল্লেখ করে তিনি জানান, অবশ্য এই সুবিধা নেয়া না নেয়ার বিষয়ে ব্যাংকই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্ট ইউনিট সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের গ্যারান্টি স্কিম বহু বছর ধরে চালু থাকলেও বাংলাদেশে এটি নতুন। কোভিডের কারণে প্রচার প্রচারণা না থাকায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই স্কিমের বিষয়ে জানেন না।
অন্যদিকে তহবিল ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। ফলে স্কিম থেকে সামান্য পরিমাণ অর্থ গ্যারান্টি হিসেবে ইস্যু করা হয়েছে।
কোভিডের বাধাসহ উদ্যোক্তা নির্বাচন, ব্যাংকগুলোর আগ্রহ ইত্যাদি বিবেচনায় গ্যারান্টির পরিমাণ কম নয় বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাকে বাছাই করতে হয়। সেক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত উদ্যোক্তা পাওয়া যায় না।
অন্যদিকে স্কিমটা নতুন। এখনো সকলের কাছে এর তথ্য পৌঁছায়নি। এছাড়া গেল বছর জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত নীতিমালা হলেও নভেম্বর থেকে গ্যারান্টি ইস্যু শুরু হয়েছে। তিনি আশাবাদী আগামীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ইস্যুর পরিমাণ বাড়বে।
গেল বছরের এপ্রিলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের (সিএমএসএমই) জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল।
জামানত না থাকার অজুহাতে সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা যেন এই প্যাকেজ থেকে ঋণ বঞ্চিত না হোন সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে ঋণের গ্যারান্টি দিতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম চালু হয়।
প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্পে (সিএমএস) বিতরণ করা ঋণ আদায় না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল ঋণের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম থেকে ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করবে।
এই স্কিম থেকে গ্যারান্টি নিতে এখন পর্যন্ত ১৯টি ব্যাংক ও ৬টি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিজিএস ইউনিটের সাথে চুক্তি করেছে।
কোন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এই স্কিম সুবিধা নিতে চাইলে ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হয়। ব্যাংক সেই আবেদন যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিজিএস ইউনিট এর কাছে পাঠায়।
এই স্কিম থেকে এখন পর্যন্ত ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে দেয়া ঋণের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে।
গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়াদী ঋণ (টার্ম লোন) এর ক্ষেত্রেও এই সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও এখনো টার্ম লোনের বিপরীতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ইস্যু হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের জন্য যে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে এপ্রিলের ২৪ তারিখ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা বাস্তবায়ন হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন করতে না পারায় কয়েক দফা বাড়িয়ে সর্বশেষ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।