গুঁড়া মশলার বাজারে নামছে বসুন্ধরা
স্কয়ার, এসিআই, প্রাণ, একমি, বিডি ফুডের পর এবার বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ যুক্ত হচ্ছে গুঁড়া মশলার ব্যবসায়। বসুন্ধরা প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলা কোরবানির ঈদের আগেই বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
বসুন্ধরা গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, মশলার ট্রায়াল প্রডাকশন করছে প্রতিষ্ঠানটি। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের কারণে বাণিজ্যিক উৎপাদন কিছুটা পিছিয়ে গেলেও মাস দুয়েকের মধ্যে গুঁড়া মশলা বাজারজাত করার লক্ষ্য নিয়েই কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ।
বসুন্ধরার চীফ অপারেটিং অফিসার (ব্র্যান্ড এন্ড মার্কেটিং) জসিম উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, 'আমরা ট্রায়াল প্রডাকশন করছি। খুব দ্রুতই বসুন্ধরার প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলা বাজারে পাওয়া যাবে।'
হলুদ, মরিচ, জিরা ও ধনিয়া দিয়ে প্রাথমিক উৎপাদন শুরু করলেও খুব দ্রুতই বসুন্ধরা প্রচলিত সব ধরনের মশলা বাজারে আনবে বলে জানা গেছে।
তবে বিনিয়োগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখনই মুখ খুলতে রাজী নয়। জসিম উদ্দিন বলেন, 'মার্কেটিং পলিসির কারণে আগেভাগেই প্রতিযোগীদের আমাদের সক্ষমতা সম্বন্ধে ধারণা দিতে চাই না। যখন বাজারে আসবো তখনই আমাদের সক্ষমতা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানাবো।'
বসুন্ধরা গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি নিত্যপণ্যের বাজারে সয়াবিন তেল, আটা, ময়দা, সুজি ও রুটি খুচরা বাজারে বিক্রি করে। বাল্ক আকারে শুধু আটা, ময়দা ও সুজি বিক্রি করে। এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছে প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলা। এছাড়া খাদ্যপণ্যের মধ্যে সেমাই, নুডলস, পাস্তা, মুড়িসহ মোট ৯টি স্ন্যাকস আইটেম বাজারে বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এসব পণ্যের সবই প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন করা হয় বসুন্ধরা ফুড এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড (বিএফবিআইএল) এর অধীনে। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে কেরানিগঞ্জের পানগাঁওয়ে। যেখানে ধাপে ধাপে নতুন নতুন এক একটি পণ্যের উৎপাদন শুরু করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে মশলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে মশলা বিক্রি হচ্ছে কয়েক প্রকারে। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলা বাজারজাত করছে যা মূলত 'ব্র্যান্ডেড মশলা' হিসেবে পরিচিত। সেখানে রয়েছে নানা পদের মশলার সমাহার। হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনিয়া, গরম মশলা, মুরগির মশলা, গরুর মশলা, বিরিয়ানির মশলা, হালিম মিক্স সহ নানান পদ বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে এখানে নতুন পণ্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজের গুঁড়া। কিছু সুপারশপে এই পণ্যটির দেখা পাওয়া যায়। কিছু কিছু সুপারশপে অবশ্য পেঁয়াজ, আদা, রসুন সহ বাটা মশলারও দেখা পাওয়া যাচ্ছে। যদিও তার পরিমাণ খুবই সামান্য,আবার দাম বেশ চড়া।
এর বাইরে প্রচলিত নানা পদের আস্ত মশলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনিয়া, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গসহ বিভিন্ন মশলা আগে থেকেই আস্ত তরকারিতে ব্যবহার করা একটা পুরনো রীতি। এর মধ্যে অবশ্য বেশিরভাগ মশলাই আমদানি নির্ভর।
ব্র্যান্ডেড মশলা বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বলছে, সব ধরনের মশলার হিসেবে বাংলাদেশে ৪৫০০-৫০০০ কোটি টাকার একটি বাজার রয়েছে। এর একটি অংশ হচ্ছে প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলা। এই বাজারটি বছরে ২-৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়।
তবে প্রতি বছরই বড় একটি প্রবৃদ্ধি পায় প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলার বাজার। প্রচলিত মশলার ব্যবহার থেকে সরে এসে প্যাকেটজাত মশলার ব্যবহারে প্রতিনিয়তই অভ্যস্ত হচ্ছে কিছু মানুষ। যে কারণে প্যাকেটজাত মশলার বাজারটি প্রতিবছরই ১০-১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে বলে জানান প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলার উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রাণ আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল টিবিএসকে বলেন, 'নতুন কোন প্রতিষ্ঠান মশলার বাজারে বিনিয়োগ করলে পুরনোদের জন্যও সুবিধা। কারণ নতুন প্রতিষ্ঠান নিজেদের বাজার তৈরির জন্য পণ্যের প্রচারণা করবে। যা দিনশেষে প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলার সব ব্যবসায়ীদের জন্যই উপকার হবে।'
বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রে জানা গেছে, ব্র্যান্ডেড মশলার বাজারে দীর্ঘদিন ধরে একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রেখেছে স্কয়ার গ্রুপের রাঁধুনি ব্র্যান্ড। প্রতিষ্ঠানটির মার্কেট শেয়ার প্রায় ৭০ শতাংশ। এর বাইরে বিডি, এসিআইয়ের পিউর, প্রাণের আলাদা আলাদ মার্কেট শেয়ার ১০ শতাংশের কম। এর বাইরে কিছু ব্যবসা করছে আরকু ও ফ্রেশ।
লালমাই গ্রুপের চেয়ারম্যান হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসিন টিবিএসকে বলেন, 'জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কারণে কিছু মানুষ প্রতি বছরই প্যাকেটজাত গুঁড়া মশলার ওপর নির্ভর করছে। এ কারণে প্রতি বছর ব্র্যান্ডেড মশলার বাজারও বড় হচ্ছে'।