চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ে আরো ৬ বিলিয়ন ডলার যোগের আশা
নতুন করে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২.৩৭% প্রবৃদ্ধি ধরে ৫১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির মাইলফলক স্পর্শ করতে চায় সরকার। যদিও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। তবে প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে মোট রপ্তানি হয়েছিলো ৪৫.৩৯ বিলিয়ন ডলার। নতুন অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি ৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার এবং সেবা ৭.৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হবে বলে আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার (৬জুন) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত এক সভায় এ ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ওই সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও রপ্তানিখাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধিরা সরকারের রপ্তানির এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে মত দিয়েছেন। তবে রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে বন্দর, শুল্কসহ বিভিন্ন বিভাগের হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা কামনা করে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
নতুন লক্ষ্যমাত্রা ও পূর্বের অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নতুন অর্থবছরে বাড়তি রপ্তানি করতে হবে ৫.৬১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি আসবে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এর বাইরে প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ২৬৯ মিলিয়ন ডলার, চামড়াজাত পণ্য থেকে ৮৯ মিলিয়ন, হোম টেক্সটাইল থেকে ২৩৮ মিলিয়ন, কৃষিজ পণ্য থেকে ৭৬ মিলিয়ন, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য থেকে ১১৫ মিলিয়ন ও নন-লেদার পণ্য থেকে আসবে ৫৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া সেবা রপ্তানির মাধ্যমে বাড়তি যোগ হবে ৮৬০ মিলিয়ন ডলার। মোটাদাগে আলোচ্য কয়েকটি পণ্যকেই রপ্তানির লক্ষ্য অর্জনে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার গত বছর নতুন করে সব ধরণের রপ্তানি পণ্যে ১ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা দেয়। এছাড়া গত বাজেটে এগ্রো-প্রসেসিং ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের ১০ বছরের কর অব্যাহতির সুবিধা দিয়েছে।
সরকার ২০২১ সালে ৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলো যার মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যদিও সেবা রপ্তানির হিসাব যুক্ত করার পরও আলোচ্য সময়ে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না। করোনার কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তবে আমরা খুব বেশি পিছিয়ে নেই, কাছাকাছি চলে যাবো।
রপ্তানিকারক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারি আঘাত হানার পর রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে তার তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের রপ্তানি এখনো প্রি-প্যান্ডেমিকের সময়ের মত হয়নি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানও তাই বলছে।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, "করোনা মহামারির কারণে আমরা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারিনি, অর্থনীতি চ্যালেঞ্জে পড়েছে। এ্রর ফলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব তৈরি হতে পারে"।
ব্যবসায়ীরা কী বলছেন
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম রপ্তানির এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে মত দিয়েছেন। তবে আলোচনায় রপ্তানিকারকদের প্রতিনিধিরা রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের হয়রানি বন্ধ করতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ'র সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, "সরকারের রপ্তানির এ লক্ষ্যমাত্রা সময়োপযোগী"। তবে বন্দর ও শুল্ক বিভাগ এবং কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অব্যবস্থাপনা ও হয়রানির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, "চট্টগ্রাম পোর্টে হাজার হাজার কন্টেইনার পড়ে আছে। কিন্ত ডেলিভারি করা যাচ্ছে না। এইচএস কোড জটিলতা, কাপড় ও কেমিক্যাল টেস্টিংয়ের নামে হয়রানি করা হচ্ছে। প্যান্ডেমিকের সময় এসব কন্টেইনার জট কমার কথা থাকলেও তা বেড়ে গেছে। কর্মকর্তারা ঠিকমতো অফিসও করেন না"।
তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী বন্দর সাত দিন-২৪ ঘন্টা খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন, কিন্তু তা হয়নি"। এসব সমস্যা সমাধানে বাণিজ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া রপ্তানির জন্য নতুন করে এক শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
করোনাকালে ব্যবসায়ীরা সহায়তার হাত না বাড়িয়ে বরং কেন আরো সাহায্য চাইছেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, "অর্থনীতি সচল রাখার জন্য ব্যবসায়ীরা কাজ করছেন, সেটা কি সাহায্য নয়? ১৫ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে তারা অর্থনীতিকে সাহায্য করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ব্যবসা চালু রেখেছেন। আমরা বিষয়গুলোকে গভীরভাবে দেখেতে চাই"।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইপিবি'র ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোঃ শাহীন আহমদ প্রমুখ।