ছয় মাসে পরিচালন মুনাফা বেড়েছে অধিকাংশ ব্যাংকের
করোনার মাঝেও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা (অপারেটিং প্রফিট) বেড়েছে। মূলত এ বছর আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ঋণ ও আমানতের সুদহারের পার্থক্য অর্থাৎ স্প্রেড বাড়ায় এবং খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন কম রাখায় পরিচালন মুনাফা বেড়েছে।
নাম প্রকাশ না করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ প্রসঙ্গে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গেল বছর ঋণের সুদহার কমানো হলেও আমানতের সুদহার বেশি ছিল। যে কারণে স্প্রেড কমে যায়, ফলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় টান পড়ে। তবে এ বছর আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় এই পার্থক্য বাড়ছে, ফলে মুনাফাও বৃদ্ধি পাচ্ছে'।
আমানতের সুদহার কমা প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, 'চলতি ব্যাংকগুলোর হাতে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আমানত আছে। তাই আমানতের সুদহার বাড়ানোর প্রয়োজন না পড়ায় এ সংক্রান্ত খরচ অনেক কমে গেছে'।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেল বছরের প্রথম ছয় মাস গড়ে ব্যাংক আমানতের সুদহার ছিল সাড়ে ৫ থেকে ছয় শতাংশের কাছাকাছি। সেখানে চলতি বছরের চার মাসে তথা এপ্রিল পর্যন্ত এই হার সাড়ে ৪ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ হলে স্প্রেড বেড়েছে দেড় থেকে ২ শতাংশের মত।
ব্যাংকাররা বলছেন, এর বাইরে ঋণের চাহিদা কম থাকায় হাতে জমা হওয়া অতিরিক্ত তারল্য ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করেছে বেশির ভাগ ব্যাংক। সেখান থেকে এসেছে বড় অংকের মুনাফা। আবার করোনার ফলে ঋণ শ্রেণিকরণ বন্ধ থাকায় ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হয়েছে।
এর বাইরে অনেক ব্যাংক তাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আনা এবং বিভিন্ন সেবা ডিজিটালাইজড করায় খরচ হ্রাস পেয়েছে। এসব মিলিয়েই জুন শেষে অর্থাৎ চলতি বছরের ষান্মাসিকে ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা (অপারেটিং প্রফিট) বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স-এবিবি এর সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো তাদের খরচ অনেক কমিয়ে আনতে পেরেছে। পাশাপাশি ঋণ শ্রেণিকরণ বন্ধ থাকায় প্রভিশনও কম রাখতে হচ্ছে'।
খরচ কমানো প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, 'সরকারি ব্যাংকগুলো বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে খরচ অনেক কমিয়েছে। শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে হয় বলে, এসব ব্যাংকের মুনাফা করার মানসিকতা বেশি থাকে'।
তিনি বলেন, এ বছর ব্যাংকের নন-ইন্টারেস্ট ইনকাম বেড়েছে। এর বাইরে ঋণ শ্রেণিকরণ স্থগিত আছে। তাতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখা যাচ্ছে না। এ বাবদ যে প্রভিশন রাখতে হতো তার চেয়ে কম রাখতে হচ্ছে। ওই টাকা যুক্ত হয়েছে লাভের খাতায়।
এছাড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়তে শুরু করেছে। এই খাত থেকেও গেল বছরের তুলনায় ব্যাংকগুলোর আয় বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ব্যাংকগুলোর অপারেটিং প্রফিট বাড়া প্রসঙ্গে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো মূলত সরকারি ট্রেজারি বন্ডে টাকা খাটিয়ে ভালো আয় করেছে। এছাড়া ডিজিটাল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে সেবার মান বাড়িয়ে অনেক ব্যাংক খরচ কমাতে পেরেছে'।