জাকার্তার সেইফগার্ড ডিউটির বিরুদ্ধে ঢাকার আপিল
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ইন্দোনেশিয়ার আরোপিত সেইফগার্ড ডিউটি আরোপের বিরুদ্ধে আপিল করেছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়ার শুল্কারোপের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা তুলে ধরে এ ব্যাপারে শুনানী আহ্বানের অনুরোধ জানিয়ে রবিবার ইন্দোনেশিয়ান সেইফগার্ড কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউটিও) সেইফগার্ড কমিটি ডিউটি আরোপ করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নোটিফিকেশন ইস্যু করেছে। আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এটি কার্যকর করবে বিশ্বের ১৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশটি।
এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ, চীন, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুর থেকে ইন্দোনেশিয়ায় রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাক পণ্যের প্রতি পিসে ০.৪৪ ডলার থেকে ১১.২৯ ডলার পর্যন্ত সেইফগার্ড ডিউটি আরোপ করেছে।
টপ গার্মেন্টস (ক্যাজুয়াল), টপ গার্মেন্টস (ফরমাল), বটম গার্মেন্টস, স্যুটস, এনসেম্বলস এন্ড ড্রেসেস, আউটওয়্যার, বাচ্চাদের পোশাক, এক্সেসরিজ, হেডওয়্যার এবং নেকওয়্যার প্রভৃতি রপ্তানির ক্ষেত্রে এটি আরোপ করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডাব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ইন্দোনেশিয়া যে সেইফগার্ড আরোপ করেছে তার বিরুদ্ধে আপিল করে রবিবার ইন্দোনেশিয়াকে চিঠি পাঠিয়েছি। আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে এ বিষয়ে শুনানী হবে'।
তিনি বলেন, 'গত নভেম্বর মাসে তৈরি পোশাক পণ্যে সেইফগার্ড মেজার্স আরোপের বিরুদ্ধে শুনানীতে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন ও বিজিএমইএ প্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানে আমরা নানা যুক্তি তুলে ধরলেও তা ইন্দোনেশিয়া গ্রহণ করেনি'।
তৈরি পোশাক আমদানির কারণে স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দেশটির টেক্সটাইল এসোসিয়েশন আবেদন করার পর ২০১৭-২০১৯ সালের সময়ে অনুসন্ধান করার পর এ পদক্ষেপ নিয়েছে ইন্দোনেশিয়ান সেইফগার্ড কমিটি।
ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল রপ্তানিকারক। ২০১৯ সালে এ খাত থেকে দেশটির রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার।
ডাব্লিউটিও'র বিধান অনুযায়ী, কোন পণ্য অতিরিক্ত আমদানির কারণে কোন দেশের সংশ্লিষ্ট শিল্পখাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ সুরক্ষায় সেইফগার্ড মেজার্স নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
হাফিজুর রহমান জানান, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার আওতায় বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। তাতে সম্মতিও জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ অবস্থার মধ্যে দেশটির সেইফগার্ড কমিটি বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কাম্য নয়।
'পিটিএ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার মিনিস্ট্রি অব ট্রেড এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সময়ও আমরা সেইফগার্ড মেজার্স আরোপের উদ্যোগের বিরোধিতা করেছি। কিন্তু তারা আমাদের জানিয়েছেন যে, ইন্দোনেশিয়ান সেইফগার্ড কমিটির কাজে হস্তক্ষেপ করবেন না তারা',যোগ করেন তিনি।
স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ায় কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও তৈরি পোশাক রপ্তানিতে তা পায় না। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।
বিজিএমইএ'র সভাপতি, রুবানা হক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ঢাকা ও জাকার্তার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইন্দোনেশিয়ার অনুকূলে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে ১৮৭ মিলিয়ন ডলার টেক্সটাইল আর্টিকেল আমদানি করে, যার মধ্যে ১৩২.৫৯ মিলিয়ন ফাইবার রয়েছে; একই সময়ে বাংলাদেশ মাত্র ৩০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরা ইন্দোনেশিয়ায় খুবই কম পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করি। সেইফগার্ড ডিউটি আরোপের কারণে তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অথচ বাংলাদেশের রপ্তানির তুলনায় অনেক বেশি টেক্সটাইল আইটেম ইন্দোনেশিয়া থেকে আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করছি'।