নগদ সহায়তার ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কমিয়ে ২০ শতাংশ করার দাবি বিজিএমইএর
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে সারা বিশ্ব যখন কম খরচে মূল্য সংযোজন বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে দেওয়া নগদ সহায়তাসহ সব ধরনের ভর্তুকি সহজে ভোগ করতে মূল্য সংযোজনের শর্ত শিথিল করতে সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
দেশীয় সুতা বা বস্ত্র দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে সরকার ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে। আমদানি করা সুতা ও বস্ত্রের ক্ষেত্রেও একই সুবিধা চাচ্ছে বিজিএমইএ। তবে নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের শর্ত রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
চলতি মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে পাঠানো এক আবেদনে এ হার কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর সভাপতি ফারুক হাসান।
তিনি বলেছেন, বিশ্ববাজারে দুর্যোগসহ করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব মোকাবেলা করে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান যাতে টিকে থাকতে পারে, দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সুযোগ যাতে বৃদ্ধি পায় এবং রপ্তানির বিপরীতে তৈরি পোশাক কারখানাগুলো নগদ সহায়তাসহ সকল রপ্তানি ভর্তুকি ভোগ করতে পারে সেজন্য ন্যূনতম ৩০ শতাংশ দেশীয় মূল্য সংযোজনের পরিবর্তে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন অনুমোদন দেওয়ার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বিজিএমইএ'র সহ-সভপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আগে নগদ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের শর্ত ছিল। সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়।"
"এটি বাস্তবায়ন করা হলে আমাদের অনেকেই এই শর্ত পূরণ করতে পারবে না। ফলে তারা নগদ সহায়তা পাবেন না। কারণ, ওভেন পোশাকে ফেব্রিক, এক্সেসরিজ আমদানিতে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কিংবা আরো বেশি লাগে"- জানান তিনি।
চার দশকের পোশাক খাতে ওভেন পোশাক কেন এখনো স্থানীয়ভাবে ৩০ শতাংশ ভ্যালু এড করতে পারে না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "অনেক সময় বায়ারের চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে হয়। স্থানীয়ভাবে কেবল কাটিং, মেকিং, ওয়াশিং এর মতো কাজ করা হয়।" ওভেন রপ্তানিকারক সবারই এমন অবস্থা বলে দাবি করেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে পৃথক দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট। তার একটিতে নগদ সহায়তা পেতে মূল্য সংযোজনের হার কমানো, সরকারের কাছ থেকে নগদ সহায়তা বাড়ানোসহ মোট ৯টি সুবিধা চেয়েছেন তিনি।
অপরটিতে নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাক টু ব্যাক এলসি ইস্যু বন্ধ করা হলে বিজিএমইএ'র ৩৮৭টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে এবং ২,৫৮,০০০ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। তাই নন-বন্ডেড প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্থানীয় ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার অনুমোদন দেওয়ার জন্য আমদানি নীতি আদেশ সংশোধনের অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।
ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলার ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকদের বন্ডেড ওয়্যার হাউজ লাইসেন্স দাখিলের জন্য চাপ না দেওয়া ও বিদ্যমান আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়, সেজন্যও বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ।
নন-কটন পোশাক রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা চেয়ে ফারুক হাসান লিখেছেন, "বাজার বহুমুখীকরণ ও নতুন বাজার তৈরির জন্য সরকারের দেওয়া প্রণোদনার কারণে গত এক দশকে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয় ৮৪৯ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৫.৬৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।"
"একইভাবে যদি ফাইবার বহুমুখীকরণের জন্য নন-কটন পোশাক রপ্তানির উপর ১০ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া হয়, তাহলে রপ্তানিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে"- যোগ করেন তিনি।
বিদ্যমান ২০১৫-২০১৮ আমদানি নীতি অনুযায়ী আগের বছরের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ৪ মাসের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ বিনামূল্যে আমদানির বিধান রয়েছে। ২০২১-২৪ আমদানি নীতিতে তা ৬ মাস করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে আমদানি নীতি এখনও প্রকাশিত না হওয়ায় এর সুবিধা পাচ্ছে না রপ্তানিকারকরা। তাই আমদানি নীতি আদেশ দ্রুত প্রকাশ করতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ।
স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোর আমদানি করা সব ধরনের ফাইবারকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর মাধ্যমে প্রত্যয়ন সাপেক্ষে যাবতীয় শুল্ক ও করমুক্তভাবে আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়ে বিজিএমইএ বলেছে, বস্ত্রখাতে রপ্তানির বিপরীতে দেওয়া নগদ সহায়তার ক্ষেত্রে যেকোনো ফাইবার দিয়ে উৎপাদিত সুতায় প্রস্তুতকৃত বস্ত্র সামগ্রীকে অন্তর্ভুক্ত করতে মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে সংগঠনটি।
বেনাপোল বন্দরের পাশাপাশি ভোমরা, সোনা মসজিদ, দর্শনা স্থলবন্দরের মাধ্যমে বন্ড সুবিধার আওতায় তুলা, সুতা, কাপড় এবং বস্ত্র ও পোশাকখাতের অন্যান্য কাঁচামাল আমদানির সুযোগ চেয়েছে বিজিএমইএ।
এছাড়া, সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে রেলপথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিজিএমইএ বলেছে, পুরোনো সব রেলপথগুলো সংস্কার করে চালু করা প্রয়োজন। এছাড়া, দেশের সকল স্থলবন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে বিজিএমইএ।