নির্ধারিত সময়ে রিটার্ন দিয়েছেন ২৭ শতাংশ করদাতা
২০২১-২০২২ ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট বছরের নির্ধারিত সময়, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ই-টিআইএনধারীর মাত্র ২৭ শতাংশ আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
যদিও রিটার্ন দাখিলের শেষ মুহূর্তে (৩০ নভেম্বর রাতে) আরও একমাস সময় বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর); ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করা যাবে।
এনবিআরের হিসাব মতে, সারাদেশে ১৮.৫৫ লাখ ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ২ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা আয়কর পেয়েছে এনবিআর। তবে, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৬৮ লাখ ছাড়িয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দিতে না পারায় অতিরিক্ত সময়ের আবেদন করেছেন ১. ৫৫ লাখ করদাতা।
এনবিআর বলছে, গত করবর্ষের একই সময়ে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৪৮ হাজার। গতবছরের তুলনায় একই সময়ে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বেড়েছে ৬ শতাংশেরও বেশি।
এনবিআরের আয়কর বিভাগের একজন সদস্য বলেন, "সময় বৃদ্ধির কারণে চূড়ান্ত হিসাব এখনই বলা যাবে না আশা করছি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়বে।"
তিনি বলেন, "সব টিআইনএনধারীর জন্য রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করায়, গত কয়েক বছর ধরেই রিটার্ন দাখিলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে, এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে।"
আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩০ লাখের বেশি করদাতা রিটার্ন দাখিল করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।
এনবিআর থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৩১টি কর অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন জমা পড়েছে খুলনার কর অঞ্চলে। এখানে ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৮৭ জন করদাতা আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন, যেখানে কর আহরণ হয়েছে ৬৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে, সবচেয়ে কম ২৩৩টি রিটার্ন দাখিল হয়েছে ঢাকার বৃহৎ করদাতা ইউনিটে। যার বিপরীতে কর এসেছে ১০৫ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এনবিআরের নতুন ডিজিটাল প্লাটফর্ম ই-রিটার্নে বেশ ভালো সাড়া মিলেছে। অক্টোবর মাসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া অনলাইন মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছেন। নিবন্ধন নিয়েছেন ৯০ হাজার করদাতা।
এর আগে ২০২০-২১ করবর্ষে ২৫ লাখ ৪০ হাজার করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। রিটার্ন জমা না দেয়া করদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো একশন নেয়নি সংস্থাটি।
আয়কর আইন অনুযায়ী দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব টিআইএনধারীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রতিবছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
এর আগে করোনার কারণে ২০২০-২১ করবর্ষে প্রথম বারের মতো রিটার্ন দাখিলে এক মাস সময় বাড়িয়েছিল এনবিআর। আয়কর আইনে নির্ধারিত সময়ের পর রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির নিয়ম নেই। তবে, গত বছরই করোনার কারণে রাষ্ট্রপতির বিশেষ অধ্যাদেশে এনবিআরকে এ ক্ষমতা দেয়া হয়।
যারা রিটার্ন জমা দেন না, এমন ব্যক্তিদের আয়করের ভাষায় 'নন-ফাইলার' বলা । টিআইএন ও করযোগ্য আয় রয়েছে, অথচ রিটার্ন জমা দেন না, এমন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে অডিট করার ক্ষমতা রয়েছে এনবিআরের।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মোটা দাগে সব টিআইএনধারীর রিটার্ন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক এবং নিয়মমাফিক রিটার্ন জমা না দিলে আর্থিক জরিমানার বিধান রয়েছে। করযোগ্য আয় থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন জমা না দিলে আয়কর আইন অনুযায়ী জরিমানা, সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপেরও বিধান রয়েছে।