রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বাড়ছে, কমছে নতুন গাড়ির দাম
দেশে এখন রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে নতুন গাড়ির দাম। দুইয়ের দামে পার্থক্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে কম। গত এক দশক আগে মাত্র ১০ শতাংশ বাজার প্রতিনিধিত্ব থাকলেও এখন ব্র্যান্ড নিউ কার, এসইউভি এবং মাইক্রোবাস বিক্রি দেশের মোট বাজারের ২০ শতাংশ ধরে ফেলেছে। আগামী পাঁচ বছরে নতুন গাড়ির বিক্রি মোট বাজারের ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে এমন আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশের অটোমোবাইল বাজারের বড় অংশই নিয়ন্ত্রণ করতো রিকন্ডিশন গাড়ি। কিন্তু সেই প্রবণতা কাটিয়ে উঠে দেশে এখন বাড়ছে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি বিক্রয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে নতুন গাড়ি বিক্রি মোট বাজারের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, অটোমোবাইল বাজারে গত এক দশকে নতুন গাড়ি বিক্রি ১০ থেকে বেড়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এতদিন যেসব ক্রেতারা সুলভ মূল্যের কারণে রিকন্ডিশন গাড়ি কিনতেন তাদের ক্রমবর্ধমান একটি অংশ এখন প্রথম পছন্দ হিসেবে নতুন গাড়ি কেনার দিকেই ঝুঁকছেন।
গত তিন বছর ধরে দেশে রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রির সংখ্যা কমে, যার বিপরীতে নতুন গাড়ি বিক্রি অর্জন করে টানা প্রবৃদ্ধি। এই সময়ে নতুন গাড়ি বিক্রি আগের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বাড়ে। দেশের বাজারে মোটরকার বিক্রয়কারীদের দেওয়া সামষ্টিক তথ্যে এই সংখ্যা উঠে এসেছে।
ওই তথ্য সূত্রে দেখা যায়, দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া প্রতি একশ গাড়ির মাঝে এখন ১৯টি গাড়িই নতুন। ২০১৬ সালে এধরনের গাড়ির বাজার প্রতিনিধিত্ব ছিল মাত্র ১২ শতাংশ।
এসব কিছুর নেপথ্যে প্রভাব ফেলেছে সংশোধিত আমদানি নীতিমালা। নতুন নীতিমালার আওতায় কমেছে ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি আর জাপান থেকে আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ির মাঝে মূল্য ব্যবধান।
বিক্রেতারা মনে করছেন, রিকন্ডিশন্ডের সাথে পার্থক্য কমে নতুন গাড়ির দাম অনেকের হাতের নাগালে চলে আসায় ব্র্যান্ড নিউ গাড়ির বাজার বড় হচ্ছে। মূল্য ব্যবধান সামান্য হওয়ায় পুরোনো রিকন্ডিশন গাড়ির চাইতে ভোক্তারা নতুন গাড়ি কেনাকেই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন।
বাজার প্রবণতায় পরিবর্তনের কারণ
বিক্রেতাদের জন্যেও নতুন গাড়ি আমদানি ও বিক্রি অনেকটাই ঝামেলা মুক্ত। জাপান থেকে নিলামে কেনা রিকন্ডিশন গাড়ি শোরুম থেকে কেনার পর অনেক ভোক্তাই নানাবিধ যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হন।
নতুন গাড়ি কিনলে এই সমস্যা যেমন থাকে না, তেমনি বিক্রয় পরবর্তী সময়ে নানা প্রকার সার্ভিসিং সেবাও পাওয়া যায়। বিক্রেতারা জানান, সব মিলিয়েই একটু বেশি টাকা খরচ করে হলেও ভোক্তারা এখন টেকসই গাড়ির নিশ্চয়তা পেতেই বেশি আগ্রহী।
দেশের বাজারে ব্র্যান্ড নিউ টয়োটা গাড়ির একমাত্র আমদানিকারক নাভানা লিমিটিডের জ্যেষ্ঠ উপ-ব্যবস্থাপক মো. লুৎফুল করিম বলেন, আর্থিক সক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি দাম হাতের নাগালে চলে আসায় মধ্যবিত্ত শ্রেণির চাকরিজীবীরা এখন পুরনো, ব্যবহৃত স্মার্টফোন বা কম্পিউটার কেনার চেষ্টাও করেন না। গাড়ির বাজারে বিষয়টি কিছুটা এরকমই।
এছাড়াও বার্ষিক বাজেট নীতির প্রভাবে ভোক্তারা আগের চাইতে রিকন্ডিশন গাড়ি কেনা অনেক বেশি কমিয়েছেন। টানা দুই বছর ধরে সরকার জাপান থেকে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি মূল্যে অনুমোদিত অবচয়ের অংক কমায়। এটা আমদানিকারকদের নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি গাড়ির দামও বাড়ায়।
ইতোপূর্বে অবচয় খরচ হিসেবে মোট আমদানিমূল্যের ৪৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হতো, যা এখন ৩৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। বর্ধিত আমদানিমূল্যের ভিত্তিতে একই হারে শুল্ক পরিশোধ করায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম গত দুই বাজেটের পরই বেড়েছে।
পাশাপাশি রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা অভিযোগ করে আসছে, অনেক নতুন গাড়ি আমদানিকারক এখন প্রকৃত দামের চেয়ে কম আমদানিমূল্য দেখিয়ে দেশে গাড়ি আনছে।
(https://tbsnews.net/economy/industry/when-new-cars-are-cheaper-who-wants-jalopy-45339)