শীর্ষ করদাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ব্যাংকিং খাতের দাপট
- এলটিইউতে তালিকাভুক্ত করদাতা প্রতিষ্ঠান ৪৪৩টি ও ব্যক্তি করদাতা ৭২৮ জন
- শীর্ষ করদাতা হিসেবে ৩০টি প্রতিষ্ঠান ও উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে ৩ প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়
- সম্মাননা প্রাপ্তদের তালিকায় ১৩ ব্যাংক, ১০ ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান, সেবা ও অন্যান্য ৩টি, এনবিএফআই ২টি, বীমা প্রতিষ্ঠান ২টি
- এককভাবে সবচেয়ে বেশি কর প্রদানকারী গ্রামীণফোন
- ব্যাংকিং খাত থেকে সবচেয়ে বেশি কর আদায় করে এলটিইউ
দেশের বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গত অর্থবছর বিভিন্ন খাতের শীর্ষ ৩০টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। এর বাইরে 'ট্যাক্স ডিডাকশন এট সোর্স অথোরিটি' বা উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকেও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৃহৎ করদাতা হিসেবে দেশের ব্যাংকগুলোর দাপট সবচেয়ে বেশি। ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টিই বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংক। এরপরই রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত, যেখানে শীর্ষ করদাতার সম্মাননা পেয়েছে ১০টি প্রতিষ্ঠান। এর বাইরে সেবা ও অন্যান্য খাতের তিনটি, নন-ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন (এনবিএফআই) দুইটি এবং বিমা খাতের দুইটি প্রতিষ্ঠান সেরা করদাতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মাননা প্রদান উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যাতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
গত বছর এনবিআরের এলটিইউ বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে মোট কর আদায় করেছে প্রায় ২৪০৭১ কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। কোভিডকালে আর্থিক ক্ষতির মধ্যেও বড় করদাতাদের কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো কর আদায় হওয়ায় এনবিআরের পক্ষ থেকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
কোন প্রতিষ্ঠান কত কর দিয়েছে কিংবা কর প্রদানের র্যাংকিংয়ে কোন প্রতিষ্ঠানের কী অবস্থান- তা প্রকাশ করা হয়নি এলটিইউ'র পক্ষ থেকে। তবে অনুষ্ঠান শেষে এলটিইউ কমিশনার ইকবাল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এলটিইউতে এককভাবে শীর্ষ করদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। তবে সম্মিলিতভাবে সবচেয়ে বেশি কর আদায় হয় ব্যাংকগুলো থেকে।
দেশের বৃহৎ করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর আদায়ে আলাদাভাবে ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এলটিইউ-ট্যাক্স। কত টাকার উপরে কত কর প্রদান করলে এলটিইউভুক্ত হবে, এমন কোন মানদণ্ড এখনো নেই। তবে ব্যাংক, বীমা, এনবিএফআই ও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর সবই এই প্রতিষ্ঠানে করদাতা হিসেবে তালিকাভুক্ত। সবমিলিয়ে এলটিইউভুক্ত করদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৪৩টি। আর এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ৭২৮ জন রয়েছেন এলটিইউর ব্যক্তি করদাতা হিসেবে।
এলটিইউ চালু হওয়ার সময় যেসব প্রতিষ্ঠান বড় করদাতা হিসেবে ছিল, তাদেরকে এখানে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমানে এলটিইউর বাইরে অন্যান্য কর অঞ্চলে কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা এই এলটিইউর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের চেয়েও বেশি কর পরিশোধ করছে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, "প্রধানমন্ত্রী দেশকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে গড়ার কথা বলেন। সেই সাহস এসেছে পদ্মা সেতু, আর নিজেদের টাকার মাধ্যমে। সেই টাকা আসে করদাতাদের কাছ থেকে"।
"গ্রোয়িং ডোমেস্টিক মার্কেটকে টার্গেট করে এগিয়ে গেলে অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারবো। আমাদের কনজ্যুমার মার্কেট বাড়ছে। এ লক্ষ্যে শিল্পায়নের প্রক্রিয়া আমাদের মাথায় রয়েছে", যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, "যত বেশি স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতা থাকবে, তত বেশি করহার কমানো আর করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব"।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এনবিআর সদস্য মো. আলমগীর হোসেনও করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরির উপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, "করদাতাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা ও কর ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন– এই দুটিতে আমাদের সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে। আমরা দেখেছি, কর আদায় প্রক্রিয়া সহজ হলে কর আদায় বাড়ে"।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, "গত বছরটি আমাদের জন্য অনেক কষ্টের ছিল। কিন্তু এই সময়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা অনেক দীর্ঘদিনের অসমাপ্ত ইস্যু সমাধান করতে পেরেছি। এটি আমাদের রাজস্ব প্রদানে উৎসাহিত করে"।
তিনি বলেন, "ডিজিটাল সার্ভিসে নির্ভরতা বাড়ছে। নতুন নতুন ডিজিটাল সার্ভিস যুক্ত হওয়ায় রাজস্ব আদায়ের সুযোগও বাড়ছে। এসব খাতে কর আর ভ্যাটের কাঠোমো কী হবে – তা ঠিক হওয়া দরকার"।
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এমডি ও সিইও মনিরুল মাওলা, এনবিআর সদস্য মোহাম্মদ গোলাম নবী প্রমুখ।
সম্মাননা পেল যেসব প্রতিষ্ঠান
এলটিইউ কর্তৃক সম্মানিত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বাংলাদেশ, এইচএসবিসি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড, ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং প্রাইম ব্যাংক প্রমুখ।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, শেখ আকিজ উদ্দিন লিমিটেড, উত্তরা মোটরস, উত্তরা অটোমোবাইলস, পারফেক্ট টোব্যাকো কোম্পানি, নেসলে বাংলাদেশ, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানুফ্যাকচারিং তথা উৎপাদন খাত থেকে সম্মাননা পেয়েছে।
গ্রামীণফোন, শেভরন বাংলাদেশ ব্লক ১৩-১৪, এবং এমজেএল বাংলাদেশ- সেবা এবং অন্যান্য খাতের অন্তর্ভুক্ত।
নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (আইডিসিওএল) এবং আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও সাধারণ বীমা কর্পোরেশন বীমা খাত থেকে এসেছে।
এছাড়া উৎসে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সম্মাননা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, গ্রামীণফোন ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি।