স্থানীয় চাহিদা উপেক্ষা করে পোল্ট্রি ফিড রপ্তানির সমালোচনা
ফিড তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন মিল নিয়ে বাংলাদেশ যে সংকটে পড়েছে একই সংকটে ভারতও পড়েছে। কিন্তু স্থানীয় শিল্পের স্বার্থে কৃষি, খাদ্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ উপেক্ষা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানির অনুমতি দেয়ায় প্রাণিখাদ্য প্রস্তুতকারী শিল্পের সংগঠন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিয়াব) এ নিয়ে সমালোচনা করছে।
ফিড প্রস্তুতকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংকটে থাকা স্থানীয় শিল্পের স্বার্থ বিবেচনা না করেই অন্য দেশের সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশের সংকট বিবেচনায় দ্রুত সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধের দাবি করে সংগঠনটি।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ফিয়াব 'সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ করুন' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন করে। সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনকালে ফিয়াবের সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান দ্রুত ফিড মিল রপ্তানি বন্ধের আহবান জানান।
মো. আহসানুজ্জামান বলেন, 'দেশের ফিড প্রস্তুতকারী, খামারি ও ভোক্তাদের অস্বস্তিতে রেখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অন্য দেশের ফিড প্রস্তুতকারী ও খামারিদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে কৃষি, খাদ্য ও প্রাণিসম্পদ খাত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছে কাচামালটি রপ্তানির অনুমতি না দিতে। সয়াবিন মিল রপ্তানির সিদ্ধান্তে এখন উৎপাদনকারীরা দেশে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে এবং কাচামালের দাম বৃদ্ধি করছে। যে কারণে ভোক্তা ও শিল্প দু'পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়ছে।'
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই চেইনের নাজুক পরিস্থিতিতে 'সয়াবিন মিল' রপ্তানির সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের ফিড উৎপাদনকারীরা বিপাকে পড়েছে। কাচামালের সংকটের কারণে ফিড উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং দামের উপর প্রভাব পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে পুরো প্রাণিসম্পদ খাতের উপর।
মো. আহসানুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাই-প্রডাক্ট (উপজাত) হিসেবে আসে সয়াবিন মিল। এই সয়াবিন মিল দিয়ে ফিড ইন্ডাস্ট্রির কাচামালের ৭৫-৮০ শতাংশ পূরণ হয়। বাকিটা বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে ভারত থেকেই আমদানি করা হয়। ভারত কখনো বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেনি।
কিন্তু বিশ্বব্যাপী এই কাচামালের সংকট হওয়ায় ভারতেও এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত নেয়ায় ভারত তাদের সংকট কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই রপ্তানির সুযোগ নিয়ে সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে এবং কাচামালটির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। রপ্তানির সিদ্ধান্ত হওয়ার পর থেকে ১০-১৫ দিনে প্রতি কেজিতে ১০-১২ টাকা দাম বেড়েছে।
মো. আহসানুজ্জামান বলেন, 'একদিকে দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে কাঁচামালের সংকট। এ দুটি চাপে ফিড উৎপাদনকারীরা সংকটে পড়েছে। এতে করে মাঝারি ও ছোট ইন্ডাস্ট্রিগুলোর টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়বে। কারণ কাচামালের দাম যেভাবে বাড়ছে ফিডের দাম সে হারে বাড়ানো যাচ্ছে না। ফিডের দাম যেটুকু বেড়েছে তার প্রভাবে মাছ, মুরগি, ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। যা চাপে ফেলছে সাধারণ ভোক্তাদের'।
তিনি বলেন, 'ভারতের যখন পেঁয়াজের সংকট হয় তখন তারা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। করোনার ভ্যাক্সিন দেয়ার টাকা নিয়েও ভ্যাক্সিন সরবরাহ করে নাই। এখন দেশি শিল্পের সংকটের দিকে না তাকিয়ে তাদের সংকট বড় করে দেখা হচ্ছে। অথচ অক্টোবরে তাদের সয়াবিনের হার্ভেস্টিং সিজন শুরু হলেই তারা আর কাচামালটি আমদানি করবে না'।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল, বসুন্ধরা সহ হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো শূন্য ট্যারিফে সয়াবিন সীড আমদানি করে সয়াবিন তেল উৎপাদনের জন্য।
ফিয়াবের সভাপতি এহতেশাম বি শাহজাহান বলেন, 'জিরো ডিউটিতে সয়াবিন সীড আমদানি করে তাদের বাই-প্রডাক্টগুলো আমাদের কাছেই দেয়ার কথা। কিন্তু তারা এটা নিয়ে সংকট তৈরি করছে। গত এক বছরে ফিড তৈরির কাচামালগুলোর দাম গড়ে ৩৪.২২ শতাংশ বেড়েছে। এতে করে ফিডের দাম ২০-২৫ শতাংশ বৃদ্ধির কথা থাকলেও ফিড প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো ফিডের দাম মাত্র ৬-৮ শতাংশ বাড়িয়েছে। অনেক ছোট-মাঝারি অনেক মিল প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে'।
কাচামালটি আমদানি করে এই মূহুর্তের সংকট পূরণ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে এহতেশাম বি শাহজাহান বলেন, 'আগে ভারত থেকে দ্রুত আমদানি করা যেত। কিন্তু এখন আমেরিকা থেকে আমদানি করতে হলে অন্তত ৬০-৭০ দিন সময় লাগবে। এছাড়া শিপিং লাইনের জটে আমদানি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ'।
উল্লেখ্য, প্রাণিখাদ্যের প্রধান দুটি উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিন মিল। খাদ্যে কাচামাল হিসেবে ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত সয়াবিন মিল ব্যবহার করা হয়।