১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও কৃষিঋণ বিতরণ করতে পারেনি ১৪ ব্যাংক
কৃষিতে করোনার অভিঘাত অতটা না পড়লেও এ খাতে ঋণ বিতরণে পিছিয়ে আছে ১৪টি ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের ১০ মাস পার হলেও এসব ব্যাংক এখনো লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ঋণ বিতরণ করতে পারেনি।
কৃষি ও অ-কৃষি ঋণ বিতরণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যদিও দুটি ব্যাংকের দাবি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে গরমিল আছে।
১৪টি ব্যাংকের মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন উরি ব্যাংক গেল ১০ মাসে এক টাকাও বিতরণ করেনি এমন তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়।
তবে ব্যাংকটির উপমহাব্যবস্থাপক নিয়াজ উদ্দিন খানের কাছে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের কাছে দাবি করেন, এপ্রিল শেষে তারা ১২ কোটি টাকা বিতরণ করেছেন, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। কী কারণে বিতরণ শূন্য দেখাচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না।
একই ধরনের চিত্র বেসরকারিখাতের সীমান্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রেও। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা ১৪ কোটি টাকা হলেও ১০ মাসে বিতরণ মাত্র ২৬ লাখ টাকা।
এক্ষেত্রেও ব্যাংকটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তাদের বিতরণ ৩ কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্টেটমেন্টে কেন কম দেখাচ্ছে তা বুঝতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো আমাদের কাছে অনলাইন কৃষি ঋণ বিতরণের তথ্য দিয়ে থাকে। আমরা যে তথ্য পাই সেগুলোই প্রতিবেদনে যুক্ত করি। এখানে গরমিলের সুযোগ নেই।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বড় লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও ৩০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে এবি, ইউনিয়ন, আইএফআইসি এবং রূপালী ব্যাংক। অন্য ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৪০ শতাংশের কিছু বেশি ঋণ বিতরণ করেছে।
বিতরণ কম হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত চাপ দেয়া হয়।
আগামী দুই মাসে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, কিছু ব্যাংকের বিতরণ কম হলেও সার্বিক ভাবে মোট যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা অর্থবছর শেষে পূরণ হবে।
চলতি অর্থবছরের জন্য কৃষি ও পল্লী ঋণ কর্মসূচির অধীনে ব্যাংকগুলোকে ২৬,২৯২ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিতরণ হয়েছে ২০,৩৭৩ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৭.৫০ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনা মোকাবেলায় কৃষিখাতকে সহায়তা করতে গেল বছর ৫ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছিল তার মধ্যে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৩,৭৫৮ কোটি টাকা।
এর বাইরে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড এর নিজস্ব তহবিল থেকে ৯৫৭ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এপ্রিল পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৮৯১ কোটি টাকা।
এদিকে, অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) কৃষকরা ২১,৪৩৬ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন, এর পরিমাণ বিতরণ করা ঋণের চেয়ে ১ হাজার কোটি টাকা বেশি।
অন্যদিকে, কৃষিখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ জুলাই-এপ্রিলে গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,২৬৪ কোটি টাকা।