২৬ বছর আগের পাওনা ১১.৬২ মিলিয়ন ডলার এখনো বাংলাদেশকে দেয়নি উত্তর কোরিয়া
দুই যুগেরও বেশি সময় আগে বাংলাদেশ থেকে ৬.১৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য নিয়ে এখনো তার মূল্য পরিশোধ করছে না উত্তর কোরিয়া। ২০১২ সালে সুদাসলে পাওনার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৬২ মিলিয়ন ডলার।
বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া দিচ্ছে না দেশটি। এ অবস্থায় সুদাসলে পাওনা আদায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কার্যকর উদ্যোগ নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের পক্ষে পাওনাদার রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক।
পাওনা অর্থ আদায়ে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলরকে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই সময় বেইজিংয়ে অবস্থিত উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তখন পর্যন্ত পাওনা ১১.৬২ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধের জন্য উত্তর কোরিয়া দূতাবাসকে অনুরোধ করলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এটি অনেক পুরনো ঘটনা। তাৎক্ষণিকভাবে ওই পাওনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পণ্য বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষর করে উত্তর কোরিয়া। ওই চুক্তির আওতায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সোনালী ব্যাংক ও উত্তর কোরিয়ার পক্ষে ফরেন ট্রেড ব্যাংক অব ডিপিআর কোরিয়া চুক্তিতে সই করে।
ওই চুক্তির ধারাবাহিকতায় ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে বার্টার-৬ চুক্তি স্বাক্ষর করে উত্তর কোরিয়া। ওই সময় সোনালী ব্যাংক ও ফরেন ট্রেড ব্যাংক অব ডিপিআর কোরিয়ার মধ্যেও চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে মূল্য পরিশোধে দেরি হলে৩ মাসে ইউএসডি লাইবর হারে সুদ আরোপের কথা উল্লেখ করা আছে।
গত ৩ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে লেখা চিঠিতে সোনালী ব্যাংকের সিইও মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেছেন, বার্টার-৬-এর মেয়াদ ছিল এক বছর। ওই মেয়াদে উত্তর কোরিয়া কোনো পণ্য নেয়নি।
তবে বার্টার-৫ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ তথা সোনালী ব্যাংকের পাওনা ৬,২৬২,৫৯৫ মার্কিন ডলার বার্টার-৬-এর আওতায় এনে পরিশোধ করার কথা বলে উত্তর কোরিয়া। ১৯৯৫ সালের ৩১ মার্চ বার্টার-৬-এর মেয়াদ শেষ হলেও উত্তর কোরিয়া একটি পয়সাও পরিশোধ করেনি।
বার্টার-৫ এর আওতায় বাংলাদেশ থেকে চাল, সিমেন্ট, পাট ও পাটজাতপণ্য, ইউরিয়া, চা, চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য, সাবানসহ বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রী নিয়েছিল উত্তর কোরিয়া।
'বারবার তাগিদের প্রেক্ষিতে ফরেন ট্রেড ব্যাংক অব ডিপিআর কোরিয়া তাদের ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর তারিখের সুইফট বার্তার মাধ্যমে ২০১২ সালের ৩০ জুন ভিত্তিক উক্ত হিসাবের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ সুদাসলে ১০,০৪০,৪৮৬ ডলার নিশ্চিত করা হয়'- যোগ করেন আতাউর রহমান।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, পাওনা টাকা আদায়ে উত্তর কোরিয়ার ব্যাংকটিকে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও তারা কোনো সাড়া দিচ্ছে না। ফলে ওই টাকা আদায়ে ২০১২ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চাওয়া হয়। ওই সময় সুদাসলে পাওনা দাঁড়ায় ১১.৬২ মিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পাওনা আদায়ে বেইজিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায়।
তার প্রেক্ষিতে চীনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি দেশটিতে অবস্থিত উত্তর কোরিয়া দূতাবাসকে পাওনা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়। কিন্তু কোরিয়ার দূতাবাস, দেশটির সরকার বা ফরেন ট্রেড ব্যাংক অব ডিপিআর কোরিয়ার তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে সোনালী ব্যাংকের এমডি লিখেছেন, হালনাগাদ সুদসহ উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে পাওনা আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বহুবার অনুরোধ জানানো হলেও পাওনা অর্থ আদায় করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই পাওনা আদায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ করেছেন সোনালী ব্যাংকের এমডি।