‘পূর্ণাঙ্গ’ চামড়া নগরী গড়ার পরিকল্পনা
- ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংক শিল্পকে জায়গা দিতে নতুন প্রকল্প
- প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পাওয়ার জেনারেশন প্লান্ট, গ্যাস স্টেশন, কোল্ড স্টোরেজ
- শপিং মল, ডে-কেয়ার, ক্লিনিক, ক্লাব, কনফারেন্স, খেলার মাঠ ও শ্রমিকদের আবাসন
- স্থান পাবে ২০০ শিল্প ইউনিট, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ প্লট বরাদ্দ থাকবে
- কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ
সাভারের হেমায়েতপুরে বিসিক লেদার ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এস্টেটের পাশে নতুন করে ২০০ একর জায়গায় শিল্পপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
নতুন এই শিল্পপার্কে ট্যানারির পাশাপাশি লেদার শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্প প্রতিষ্ঠানও প্লট বরাদ্দ পাবে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোট ৪০০ একর জায়গায় শিল্প কারখানা গড়ার মাধ্যমে হেমায়েতপুরে একটি পরিপূর্ণ চামড়া শিল্পনগরী গড়ে উঠবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) ও ট্যানারি শিল্পের উদ্যোক্তারা।
পরিবেশ দূষণ রোধ ও বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় রাজধানীর হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোকে একত্র করে হেমায়েতপুরে ২০০ একর জায়গায় বিসিক লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২০০৩ সালে নেওয়া প্রকল্পের মেয়াদ দফায় দফায় বাড়ানো হয়। ফলে মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। ট্যানারীগুলো সরিয়ে নেওয়া হলে সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জটিলতার কারণে এখনো পুরোপুরি সচল হয়নি। চলতি বছরের জুনেই প্রকল্পের শেয়াদ শেষ হবে।
এই প্রকল্পটির পাশেই ধলেশ্বরী নদীর তীরে আরও ২০০ একর জায়গায় বিসিক লেদার ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্ক, ঢাকা গড়ে তোলা হবে।
৭৯.৪৯ একর জায়গায় ২৭০টি শিল্পপ্লটে প্রায় ২০০ শিল্প ইউনিট স্থাপিত হবে। ২১.১৯ একর জায়গায় আধুনিক সিইটিপি ও ৮ একর জায়গায় ৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার জেনারেশন প্লান্ট স্থাপন করা হবে।
জানা যায়, হাজারীবাগ থেকে হেমায়েতপুরে ট্যানারির স্থানান্তর করা হলেও নেই শ্রমিকদের আবাসন ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা অবকাঠামো। জায়গা পায়নি লেদারের সাথে জড়িত ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্প।
ছিল না অগ্নি নিরাপত্তায় ফায়ার স্টেশন। যথার্থ বর্জ্য ব্যবস্থা না থাকায় খোলা আকাশের নীচে ফেলে রাখায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উপ-ব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) মো. রাশেদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এই প্রকল্পের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ চামড়া শিল্পনগরী হবে। আগের প্রকল্পে যেসব বিষয় অর্ন্তভুক্ত ছিল না, সেটা যুক্ত করে পরিপূর্ণ করা হবে।"
"শ্রমিকদের থাকার জন্য অবকাঠামো, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও ল্যাবরেটরি গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ট্যানারি শিল্পের সাথে লেদারের ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের যোগসূত্র স্থাপনে পরিকল্পনা করা হয়েছে।"
"আগে যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, সেটা অপূর্ণাঙ্গ নয় তবে কিছু কিছু বিষয় অর্ন্তভূক্ত করা যায়নি। জন্য জায়গা বরাদ্দ থাকবে।"
নতুন পরিকল্পনায় থাকবে শপিং মল, শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও কর্মাশিয়াল কমপ্লেক্স। পাওয়ার জেনারেশন প্লান্ট, দুটি ইলেকট্রিক সাব-স্টেশন, গ্যাস স্টেশন, চার মডিউলের সিইটিপি, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও ডাম্পিং ইয়ার্ড। জায়গা পাবে ডে-কেয়ার, ক্লিনিক, ক্লাব, কনফারেন্স রুম, ব্যাংক-বীমা, স্কুল, ফায়ার ও পুলিশ স্টেশন, কোল্ড স্টোরেজ, খেলার মাঠ ও পানি শোধনাগার।
নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চামড়া শিল্পের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ শতাংশ বা ২৭টি প্লট বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী হবে।
প্রকল্পের সার-সংক্ষেপ ঘেঁটে দেখা যায়, বিসিক লেদার ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের উদ্যোগী মন্ত্রণালয় শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোওয়ার্ড লিংকেজ স্থাপন, কর্মসংস্থান এবং জাতীয় অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের অবদান বৃদ্ধি। অর্থায়নের উৎস নির্ধারণ করা হয়েছে ঋণ ২০ শতাংশ ও ৮০ শতাংশ অনুদান। বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিসিক।
বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশেনের সভাপতি মো. শাহীন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে চামড়া শিল্পনগরী একটি কম্প্রেহেনশিভ শিল্পনগরী হবে। যেসব ট্যানারি এখনো জায়গা পায়নি তারা স্থান পাবে। ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোয়ার্ড লিংকেজ শিল্প আলাদা আলাদা ক্লাস্টার হবে।"
"চামড়া শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ হচ্ছে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করে পণ্য তৈরী করে। কাঁচা চামড়ার ফেলে দেওয়া অংশ থেকেও পণ্য তৈরী হয়। আর ফরোয়ার্ড লিংকেজ হচ্ছে ফুটওয়্যার গুডস, ব্যাগ, মানিব্যাগ ও বেল্ট ইত্যাদি তৈরী শিল্প।"
মূলত ১৯৭০ এর দশকে বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগুলির একটি হিসাবে বড় পরিসরে চামড়া শিল্পের যাত্রা শুরু হয়।
বাংলাদেশের চামড়া শিল্প থেকে পোশাক, জুতা, বেল্ট, ব্যাগ, এবং জ্যাকেট, স্যুটকেস, মানিব্যাগসহ বেশ কিছু অভিনব লেদার আইটেম তৈরি হয়। এই পণ্যগুলি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেই বিক্রি হয়।
চামড়ার জুতা চামড়া শিল্পের দ্রুত বর্ধনশীল অংশ। বিশ্বের মোট লেদার মার্কেটের ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশ।