মিথ্যা সিআইবি রিপোর্ট, ঋণের অসঙ্গতি: অগ্রণী ব্যাংককে করা জরিমানা বহাল রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) কাছে একটি মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করা এবং ডলি কনস্ট্রাকশনকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অসঙ্গতির কারণে অগ্রণী ব্যাংককে জরিমানা দেওয়া হয়। এই জরিমানা থেকে অব্যাহতি চেয়ে অগ্রণী ব্যাংকের করা দুটি আবেদন বিবেচনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সিআইবি রিপোর্টে গ্রাহকের ঋণ খেলাপির তথ্য গোপন করার জন্য অগ্রণী ব্যাংককে ৫ লাখ টাকা এবং ডলি কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ঋণ অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উপ-পরিচালক নাম প্রকাশ না করার জন্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বোর্ড সদস্যরা ডলি কনস্ট্রাকশনের ঋণ অনিয়মের আরও তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসময় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এছাড়া সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডিপুটি গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গম ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠনের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে নাকচ করা হয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার বর্মনের চাকরিতে পুনর্বহালের আবেদনও।
প্রসঙ্গত, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ডলি কনস্ট্রাকশনের অনিয়ম করে নেওয়া ঋণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নির্দেশনার ১০ মাস পার হলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এই ব্যাংকটিকে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মোট ৩২৮.৩৬ কোটি টাকার দুটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ডলি কনস্ট্রাকশন ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৪০.১৩ কোটি টাকা তুলেছে।
নিয়ম অনুযায়ী, ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে এই পরিমাণ টাকা তুলতে কোম্পানিটির অন্তত ২৮০.২৬ কোটি টাকা বা ওয়ার্ক অর্ডারদুটির ৮৫.৩৫ শতাংশ কাজ শেষ করার কথা। তবে ওই সময় পর্যন্ত বাস্তবে ডলি কনস্ট্রাকশন শেষ করেছিল মাত্র ৩৫ শতাংশ।
অর্থাৎ, কোম্পানিটি ১১৪.৯৩ কোটি টাকার কাজ শেষ করেই অগ্রণী ব্যাংক থেকে ১৪০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, এই পরিমাণ কাজের বিপরীতে ডলি কনস্ট্রাকশন ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ৫৭.৪৬ কোটি টাকা তুলতে পারে। সে হিসাবে, কোম্পানিটি অনিয়ম করে ব্যাংক থেকে ৮২.৫৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত তুলে নিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। ১১৪.৯৩ কোটি টাকার কাজ শেষ করার বিল ব্যাংকে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা জমা দিয়েছে মাত্র ৫১.০৬ কোটি টাকার। বাকি ৬৩.৮৭ কোটি টাকা বিলের বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের কাছে জানতে চাইলেও তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কিছুই জানায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্ক অর্ডার দুটির মেয়াদ ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বর্ধিত মেয়াদও ফুরিয়েছে ২০২১ সালের ৬ জুন। এসব সময়সীমা শেষ হলেও ব্যাংকটি থেকে নেওয়া ১০৪.৫০ কোটি টাকা ঋণ এখনো পরিশোধ করেনি ডলি কনস্ট্রাকশন।
এছাড়া, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় এক ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে ১০০ কোটি টাকা ওভারড্রাফট সীমা অনুমোদন করেছিল অগ্রণী ব্যাংক। তবে কোম্পানিটি ওই ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে টাকা না তুলে অন্য আরেকটি ওয়ার্ক অর্ডারের বিপরীতে এই টাকা তুলেছে। নিয়ম অনুযায়ী এটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
এসব অনিয়ম তুলে ধরে ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংককে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন এ আদেশ না মানায় চলতি বছরের ২০ এপ্রিল কোম্পানি আইন অনুযায়ী 'ব্যাংকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না' জানতে অগ্রণী ব্যাংককে আরেকটি চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সে চিঠিতে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দুই মাস পার হলেও অগ্রণী ব্যাংক এইসব চিঠির কোনো জবাব দেয়নি। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যাংকটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গত ২৩ জুন ইস্যু করা জরিমানার এই চিঠিতে ইস্যুর তারিখ থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে জরিমানার টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের 'সাধারণ হিসাব- প্রধান কার্যালয়' খাতে জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করার জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা না করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে খোলা অগ্রণী ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে কেটে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ব্যাংকটিকে।