মুদ্রণশিল্পের সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণে সরকারি সহায়তা চায় প্রিন্টাররা
সরকারের যথাযথ নীতিগত সহায়তা এবং কারখানার আধুনিকায়নের মাধ্যমে দেশের বিপুল সম্ভাবনাময় মুদ্রণ খাত সম্প্রসারিত করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন এই খাত সংশ্লিষ্টরা।
বৈশ্বিক মুদ্রণশিল্পের মার্কেটেরা আকার ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিআইএবি) এর মতে, এরমধ্যে মাত্র ১৬০ কোটি টাকা রপ্তানি করে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট-বড় ৭ হাজার মুদ্রণশিল্পের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিল্পে কর্মরত প্রায় ৩ লাখ লোক। মুদ্রণশিল্প মালিকেরা বলছেন, দেশে সরকারি পাঠ্যপুস্তকের চাহিদার পুরোটাই তারা ছাপাতে সক্ষম।
মুদ্রণ শিল্পের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, মেশিনারিজ, কাগজ, কালি স্পেয়ার্স ও নানাবিধ যন্ত্রপাতি নিয়ে রাজধানীতে ৩ দিনের দুটি ট্রেড ফেয়ার শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে।
ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরা (আইসিসিবি) তে শুরু হয়েছে 'ইমেজেস গ্রুপ প্রেজেন্টস প্রিন্টেক বাংলাদেশ ২০২২' এবং 'থ্রিপি বাংলাদেশ' শীর্ষক দুটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী।
প্রিন্টিং মেশিনারি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ট্রেড শো টি যৌথভাবে আয়োজন করেছে এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন্স প্রাইভেট লিমিটেড ও পিআইএবি।
মেলায় কথা হয় এএসকে ট্রেড অ্যান্ড এক্সিবিশন প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক নন্দ গোপাল কাদম্বির সাথে। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "মুদ্রণশিল্পের বিশ্ব মার্কেটের আকার ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের সুযোগ আছে এ মার্কেটের কিছু অংশ ধরার। এর জন্য প্রয়োজন ফ্যাক্টরি আপগ্রেডেশন। বাংলাদেশ এখন তাদের নিজেদের চাহিদা নিজেরাই মেটাতে পারছে। এটা তাদের বড় সক্ষমতা।"
প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (পিআইএবি) সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, "মুদ্রণ শিল্পের ছোট একটি আধুনিক ফ্যাক্টরি তৈরি করতে ১০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এত টাকা অনেক উদ্যোক্তার বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়না। তাই সরকারের এক্ষেত্রে পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে। সহজ শর্তে ব্যাংক লোন পাবার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত মুদ্রণ শিল্প পার্ক তৈরি করতে হবে। যেখানে আধুনিক কারখানা গড়ে উঠবে।"
মেলার দ্বিতীয় দিন বিকেলে ইমেজেস গ্রুপের স্টলে ভিড় দেখা যায়। আধুনিক প্রিন্টিং মেশিন প্রদর্শন করছে তারা।
ইমেজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুস জামান টিবিএসকে বলেন, "আমরা সবসময় ইন্ড্রাস্ট্রিতে আপগ্রেডেশনে থাকি। আমাদের প্যাকেজিং কারখানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে। এছাড়া আমরা বিদেশ থেকে আনা আধুনির প্রযুক্তির মেশিন আমদানি করি। এগুলো আমাদের কোম্পানি জামান মার্কেটিং লিমিটেডের মাধ্যমে বিক্রি করি। আমরা মেশিন কেনার জন্য ব্যাংক লোনের ব্যবস্থাও করে দেই উদ্যোক্তাদের।"
ঢাকা-দোহার সড়কের পাশে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের খারসুর মৌজায় ১০০ একর জমিতে পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)।
আসাদুস জামান বলেন, "এ পার্কটি দ্রুত তৈরি করতে হবে। একটি আলাদা জায়গা পেলে এ শিল্পের সক্ষমতা আরও বাড়বে। ফর্মুলা ও টেকনোলজি উন্নত করে সেই সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে।"
পিআইএবি'র তথ্য মতে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জায়গায় মুদ্রণ শিল্পের আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে উঠছে। বাংলাদেশে মুদ্রণশিল্পের বার্ষিক বাজারের আকৃতি চার হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে এ খাতের উদ্যোক্তারা বছরে গড়ে ১৬০ কোটি টাকার ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, বই-পুস্তক এবং পোশাক-ওষুধ-হিমায়িত চিংড়ি খাতের বিভিন্ন উপকরণ রপ্তানি করছেন। দেশে প্রায় ৭ হাজার প্রিন্ট্রিং প্রেস আছে যেগুলোর মধ্যে ২ হাজার প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তিগত দিক থেকে আধুনিক। তিন লাখের বেশি মানুষ সরাসরি সম্পৃক্ত এ শিল্পের সঙ্গে।
মেলার দ্বিতীয় দিন দেখা যায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্যোক্তারা এসেছেন নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হতে। এক ছাদের নিচে মেশিন দেখতে পাওয়া ও মেশিন সম্পর্কিত তথ্য পেয়ে তারা খুশি। এমন আয়োজন আরও বড় পরিসরে হওয়া প্রয়োজন বলে যোগ করেন তারা।
মুজাহিস প্রিন্টার্স এর মালিক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, "নতুন একটি প্রিন্টিং কারখানা করবো তাই এখানে আসা। ২ বছরের বেশি সময় পর এমন আয়োজন আমাদের আসলে উপকৃত করেছে। আমরা এ খাতের লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারছি। প্রযুক্তিগুলোও দেখতে পারছি।"