ওষুধ ও পর্যটন খাতে ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকারী ছয় প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দিলো বেজা
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ওষুধ ও পর্যটন খাতে মোট ৪৫৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকারী ছয় প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৭ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইফাদ মোটরস, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড এবং দীপ্ত গ্রুপের অধীনস্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান- ডিআইআরডি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, দীপ্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এবং ডিআইআরডি গার্মেন্টস লিমিটেড।
এর মধ্যে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে এবং একটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোট ১৭ একর জমিতে বিনিয়োগে অন্তত আট হাজার ২১৯ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-র সঙ্গে গতকাল বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর করে তারা।
বেজার নির্বাহী সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল আজিম চৌধুরী, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান, ইফাদ মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন, ডিআইআরডি গ্রুপের পরিচালক সেঁজুতি দৌলা এবং ইস্ট-ওয়েস্ট ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহামুদুল হাসান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামালের জন্য ৪০০ মিলিয়ন ডলারের কারখানা স্থাপন করবে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ।
অন্যদিকে কক্সবাজারের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে হোটেল, রিসোর্ট, মোটেল ও কটেজ নির্মাণ করবে পাঁচ প্রতিষ্ঠান।
ইফাদ অটোস, ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড এবং দীপ্ত গ্রুপের অধীনে তিন প্রতিষ্ঠান ডিআইআরডি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, দীপ্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এবং ডিআইআরডি গার্মেন্টস লিমিটেড বেজা-র প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম পর্যটন অঞ্চলে টুরিজম ও হসিপিটালিটি খাতে বিনিয়োগ করবে।
দেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তসীমানায় পাহাড় ও সমুদ্রের সান্নিধ্যে এই পর্যটন পার্কে তাদের ৫৭.১৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পার্কটিকে নতুন রূপ দিবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বরাদ্দকৃত প্লটগুলো মোট ১৭ একরজুড়ে বিস্তৃত। বেজার সূত্রানুসারে বিনিয়োগের ফলে এখানে অন্তত আট হাজার ২১৯টি কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ১০ একর জমি বরাদ্দ পাওয়া হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ইতোমধ্যে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০ একর জমি রয়েছে।
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি জানায় তারা বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে ফার্মাসিউটিক্যাল উপাদান এবং ফর্মুলেটেড ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন বাড়াতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান জানান, ২০২৩ সাল থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করছেন তারা।
'বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় ওষুধের প্রায় ৯৮ শতাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি করা হয়, যেখানে ৯০ শতাংশ কাঁচামাল আমরা আমদানি করি। কাঁচামালেও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই,' বলেন তিনি।
হেলথকেয়ার ফার্মা এখন গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর কারখানায় ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশন, ভ্যাকসিন ও বায়োটেক পণ্য তৈরি করে বলে জানান তিনি।
হালিমুজ্জামানের মতে, নতুন এই উদ্যোগের কারণে প্রায় সাত হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
১৯৮৮ সালে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি রোচে লিমিটেডের সঙ্গে হেলথকেয়ার ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে হেলথকেয়ার। ২০০১ সাল পর্যন্ত হেলথকেয়ার ফার্মা স্থানীয় বাজারে রোচে-র পণ্য আমদানি ও বিতরণের করত।
স্থানীয় বাজারের চতুর্থ প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া ছাডড়াও হেলথকেয়ার এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে ওষুধ রপ্তানি করে বলে জানান হালিমুজ্জামান।
সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক একর জমিতে একটি থ্রি-স্টার হোটেল ও রিসোর্ট তৈরি করতে ১৬.২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ইফাদ অটোস। বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুযায়ী, এখানে ৩৫০ জনের কর্মসংস্থান হবে।
ইফাদ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইফাদ অটোস ভোগ্যপণ্য এবং বাণিজ্যিক কমার্শিয়াল পরিবহনের স্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান।
ইফাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ টিপু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, তাদের উদ্যোগে একটি মিনি-অ্যামিউজমেন্ট পার্কও প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা দিলেও তা মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে রাখার ওপর জোর দিচ্ছি।
বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুযায়ী, ডিআইআরডি গ্রুপের তিনটি ফার্ম- ডিআইআরডি কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেড, দীপ্ত গার্মেন্টস লিমিটেড এবং ডিআইআরডি গার্মেন্টস লিমিটেড কক্সবাজারের সাবরাংয়ে হোটেল, রিসোর্ট এবং মোটেল ব্যবসায় মোট ৩৮.২১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
গ্রুপটি প্রত্যাশা নতুন এই উদ্যোগের ফলে কমপক্ষে ৬৬৯ জনের কর্মসংস্থান হবে।
১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করা ডিআইআরডি গ্রুপ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং, সফটওয়্যার এবং কৃষি খাতের ব্যবসায় জড়িত।
ষষ্ঠ আরেকটি প্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড সাবরাংয়ে এক একর জমিতে হোটেল নির্মাণে ২.৭২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস বাংলাদেশে ট্রাভেল এজেন্সি ও পর্যটন ব্যবসা পরিচালনা করে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা)-র নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন জানান, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ককে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।