বাজারে কারসাজি নয়, প্রফিট মার্জিনে ছাড় দেয়ার দাবি ইউনিলিভারের
বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম, ফ্রেইট চার্জ ও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সাবান-শ্যাম্পুর দাম বাড়ালেও ইউনিলিভার বাংলাদেশ সেখানে প্রফিট মার্জিনে ছাড় দিচ্ছে বলে দাবি করেছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের আদালতে শুনানির সময় এ দাবি করেন প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান। সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, গুঁড়া সাবানের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রির অভিযোগে ইউনিলিভার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কমিশন। এদিন চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরির জন্য বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড, সিটি গ্রুপ, রশিদ এগ্রো ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড সহ মোট ৯টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের শুনানি গ্রহণ করে কমিশন।
ইউনিলিভাবের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান জানান, বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ফ্রেইট চার্জ বেড়ে যাওয়া এবং ডলারের দাম বিভিন্ন দিক থেকে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য কাজ করেছে। তারপরও ইউনিলিভার তাদের প্রফিট ছাড় দিয়ে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করছে।
তিনি বলেন, 'জুলাই ২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বাজারে সরবরাহের পরিমাণ চাওয়া হয়েছে। ইউনিলিভার ১০০টির বেশি পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। প্রত্যেকটা পণ্যের কাঁচামাল সহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য উপাত্ত প্রস্তুত করতে সময় প্রয়োজন। এজন্য আমাদেরকে ৮ সপ্তাহের সময় দেওয়া হোক।'
তাদের সময় চাওয়ার আবেদনের ভিত্তিতে কমিশন এসব তথ্য সরবরাহের জন্য ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে।
এর আগে কমিশন থেকে এক কর্মকর্তা ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পড়ে শোনায়। এ সময় এজলাসে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারপারসন মোঃ মফিজুল ইসলাম ও কমিশনের তিনজন সদস্য।
এই অভিযোগে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহ বিভিন্ন অজুহাতে সাবান, ডিটারজেন্টের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে ইউনিলিভার। সাবান, সুগন্ধি সাবান, গুঁড়া সাবান, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, হ্যান্ডওয়াশ প্রভৃতি পণ্যের দাম বিগত ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে বাজার ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা পরিপন্থি কাজ করে পণ্যের বাজারে প্রভাব বিস্তার করছে তারা।
এ সময়ে মিনি সাবানের দাম ৫ টাকা, হুইল সাবানের দাম ৫ টাকা, বড় লাক্সের দাম ২০-২৫ টাকা, ভিম বারের দাম ৫ টাকা, হুইল পাউডারের দাম ৫০-৫৫ টাকা এবং সার্ফ এক্সেলের দাম ৭০-৭৫ টাকা বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
অস্বাভাবিকভাবে দাম নির্ধারণ করে উক্ত পণ্যগুলোর সরবরাহ, বাজার এবং সেবা সংস্থানকে সীমিত বা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা পরিপন্থি কাজ করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, যা প্রতিযোগিতা আইনের পরিপন্থী। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা আইন ২০১২ এর ধারা ১৫ অনুযায়ী মামলা দায়ের করেছে।
শুনানিতে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের আইনজীবী জানান, প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোন চালের মিল নেই। তারা অন্য মিল থেকে চাল কিনে 'রূপচাঁদা' ও 'ভিওলা' নামের দুটি ব্র্যান্ডে বাজারজাত করছে। তবে এর মধ্যে রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের চালের দাম একটু বেশি এবং ভিওলার দাম তুলনামূলক কম।
কারণ হিসেবে আইনজীবী জানান, রূপচাঁদা 'এলিট' শ্রেণির জন্য, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ভিওলা ব্র্যান্ডের চাল বাজারজাত করা হয়। তারাও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করতে সময়ের আবেদন করেন।
একইভাবে সিটি গ্রুপ, রশিদ এগ্রো ফুড প্রোডাক্টস সহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের তথ্য সরবরাহের জন্য বাড়তি সময় প্রয়োজন বলে জানায়।
উল্লেখ্য, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরির অভিযোগে ইউনিলিভার, প্রাণ, স্কয়ার, এসিআই, আকিজ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা, বসুন্ধরা, স্কয়ার, এস আলম, চালের ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রশিদ সহ ৩৬ কোম্পানি ও ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ৪৪টি মামলা করেছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন।