ঘোষণার পাঁচ দিনেও খুচরা বাজারে কমেনি সয়াবিন তেলের দাম
বিশ্ব বাজারে ক্রমাগত দাম কমায় দেশিয় বাজারেও খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। গত সোমবার সমন্বয় করা এই দাম পরদিন মঙ্গলবার থেকেই বাজারে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু ঘোষণার পাঁচদিন পার হলেও এখনো আগের বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ঘোষণা দিলেও কম দামের বোতল ও প্যাকেটজাত ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো এখানো সরবরাহ শুরু করেনি। তাই বাড়তি দামে কেনা ভোজ্যতেল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্যতেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার ঘোষিত নতুন দামে ভোজ্যতেল বোতলজাত শুরু হয়েছে। বাজারে থাকা বোতলগুলোর গায়েও নতুন দামের লেবেল লাগানো হবে। এই প্রক্রিয়ায় নতুন বোতলজাত তেল বাজারে পৌঁছাতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।
আজ শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি বাজারের মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বাজারে রূপচাঁদা, পুষ্টি, ফ্রেশ, তীর, ও বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯২ টাকায়।
পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে রূপচাঁদা ৯৫০ টাকা, তীর ৯৪৫ টাকা, পুষ্টি, ফ্রেশ ও বসুন্ধরা ৯৪০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
গত রোববার ১৪ টাকা কমিয়ে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ৬৫ টাকা কমিয়ে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ হয় ৮৮০ টাকা।
একই দিন লিটারে ১৭ টাকা কমিয়ে খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ হয় ১৫৮ টাকা। যা আগে ছিল ১৭৫ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার পাম তেলের দামও লিটার প্রতি ৮ কমিয়ে ১২৫ টাকা নির্ধারণ হয়, যা আগে ছিল ১৩৩ টাকা।
ঘোষণা অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার থেকেই বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল বিক্রি হওয়ার কথা। অথচ সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে না।
কাজীর দেউড়ি এলাকার মেসার্স জীবন গ্রোসারিজের মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, "সরকার মঙ্গলবার থেকে আগের চেয়ে ১৪ টাকা কম দামে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ঘোষণার পাঁচদিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত কোন কোম্পানি কম দামের বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করে নি। এই সময়ের মধ্যে যেসব কোম্পানির তেল কিনেছি সব আগের দামে। ফলে আমাদের আগের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।"
নগরীর মাস্টারপুল এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম সুলতানা বলেন, "প্রতি শুক্রবারে নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারে সিডিএ মার্কেট থেকে বাজার করি। তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও কোনো দোকানদার এক টাকা কম রাখছে না। আজকেও ৫ লিটার রূপচাঁদা তেল কিনেছি ৯৪৫ টাকায়। অথচ দাম রাখার কথা ছিল ৮৮০ টাকা।"
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপ পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ জানান, তারা বাজার মনিটরিং শুরু করেছেন।
"খুচরা পর্যায়ে আগের বর্ধিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রির বিষয়ে কোন অভিযোগ পাই নি। খুব শিগগিরই খুচরা পর্যায়ে অভিযান শুরু করবো," বলেন তিনি।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, "গত পাঁচ দিনেও কোথাও ভোজ্যতেলের দাম এক টাকাও কমে নি। ভোক্তাদের কাছে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, তাদের আগের বাড়তি দামে কেনা পণ্য। অথচ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ার আগেই কিংবা বাজেট দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের আগেই বাজারে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় এসব ব্যবসায়ীরা।"
মূলত তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর দূর্বলতার কারণেই দেশের ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের পকেট কাটার এই সংস্কৃতি চালু রাখতে পারছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, "সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিপণনের জন্য আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। খুব শিগগিরিই ভোক্তারা কম দামের ভোজ্যতেল বাজারে পাবে। এমনকি বাজারে থাকা আগের বাড়তি দামের বোতলেও কম দামের নতুল লেবেল লাগানো হবে।"
আন্তর্জাতিক বাজার ও পাইকারি পর্যায়ে কমে আসায় গত রোববার সরকার ভোজ্যতেলের এই দাম নির্ধারণ করে। এর আগে গত ১৭ জুলাই সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমায় তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। এরপর গত ২৩ আগস্ট আবার সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৭ টাকা বৃদ্ধি করে। দেড় মাসের ব্যবধানে সেই দর কমানো হলো।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য মতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় ৫ লাখ ১৫ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। যা তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৭৫ হাজার টন কম। অবশ্য একই সময়ে সয়াবিন বীজের আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৩১ হাজার টন। যা তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২ লাখ ৩৭ হাজার টন বেশি।
এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১৫ হাজার টনের কিছু বেশি। তার আগের বছর কোনো পরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়নি।