চাহিদা কমলেও যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিম বাজারে প্রভাব ধরে রেখেছে বাংলাদেশ
মুদ্রাস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র তৈরি পোশাক আমদানি কমালেও দেশটিতে ডেনিম রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখনও নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে।
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি-আগস্ট) বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬৩৯ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ডেনিম পণ্য রপ্তানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল অফিস (ওটেক্সা) অনুসারে আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রবৃদ্ধি ৪৬.৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের কারণে স্বল্পসময়ে উৎপাদন এবং কম দামে পোশাক কিনে মুনাফা তৈরির সুযোগ থাকায় বাংলাদেশ ডেনিম পোশাকের আকর্ষণীয় উৎসে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস-প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, মার্কিন ক্রেতারা এখনও বাংলাদেশে আসছে কারণ এখানে তারা কম দামে ডেনিম গার্মেন্টস কিনতে পারে। এ কারণেই বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানি খাতে আধিপত্য ধরে রাখতে পারছে।
স্থানীয় ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বা কাঁচামাল সরবরাহমারী প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো কাপড় সরবরাহ করায় বাংলাদেশে ডেনিমের তৈরি পোশাক প্রস্তুত করতেও সময় কম লাগে।
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম আট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিন্সের মোট আমদানি ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ২.৮৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
সোর্সিং জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, পোশাক বিক্রি ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ বা ৬.১৫ বিলিয়ন থেকে ৬.১৭ বিলিয়ন পর্যন্ত বাড়বে বলে ধারণা করছে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ক্রেতাদের মধ্যে অন্যতম লেভি'স। এর আগে বিক্রি ৬.৪ বিলিয়ন থেকে ৬.৫ বিলিয়ন পর্যন্ত বাড়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।
তবে ইউরোপে ডেনিম রপ্তানির বাজারের অবস্থা এখনও খুব একটা ভালো হয়।
'চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলোতে ভোক্তাদের পোশাক চাহিদা কমছে,' বলেন শহীদুল্লাহ আজিম।
এনভয় টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইউরোপীয় গ্রাহকদের চাহিদা কমে যাওয়ায় স্থানীয় ডেনিম প্রস্তুতকারকদের উৎপাদন অর্ধেক কমে গেছে।
তিনি আরও বলেন, 'এ ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের সময় মানুষ খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পরিবর্তে পোশাক কিনতে আগ্রহী থাকে না'।
ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, যুদ্ধের কারণে ইউরোপের ডেনিম বাজার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অনেক ক্রেতা শিপমেন্ট পেছানোর অনুরোধ করছেন। আবার নতুন অর্ডারগুলোও দেরীতে আসছে বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের ডেনিম রপ্তানি কমেছে। অনেক ক্রেতা তাদের পেমেন্ট দেরিতে পরিশোধ করছেন ফলে রপ্তানিকারকদের ওপরেও অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।