দরদামের সীমা বেধে দেওয়ায় ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করতে চাচ্ছে না ব্যাংক
কেনাবেচায় দাম পরিবর্তনের সীমা বেঁধে দেওয়ায় ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করতে চাইছে না ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হাতেই রয়েছে প্রায় সব ট্রেজারি বন্ড। ফলে দীর্ঘদিন পর সরকারি সিকিউরিটিজের লেনদেন শুরু হলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বন্ড কিনতে পারছেন না।
ব্যাংকাররা বলছেন, বন্ড লেনদেনের দাম বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।
বন্ড লেনদেনের দাম পরিবর্তনে যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা যুক্তিযুক্ত নয় বলে উল্লেখ করেন তারা।
ব্যাংকগুলো নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী দাম ছাড়া বন্ড বিক্রি করতে চায় না বলেও জানান তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার টিবিএসকে বলেন, "ট্রেজারি বন্ড লেনদেনে ২% সার্কিট ব্রেকার রয়েছে। ফলে রেফারেন্স প্রাইসের চেয়ে বন্ডের ইউনিট মূল্য একদিনে সর্বোচ্চ ২% হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারবে।"
দেশের বন্ড মার্কেটকে চাঙ্গা করতে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে।
যার উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে বন্ডের মতো দীর্ঘমেয়াদি ফিক্সড ইনকাম ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগের সুযোগ করে দেওয়া, যাতে শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠান নির্ভর না হয়ে বন্ডের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকেও তহবিল নেওয়া যায়। তবে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, চাহিদা সত্ত্বেও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিহার কারণে এখন যোগান নেই।
এই পরিস্থিতিতে ট্রেজারি বন্ড লেনদেনের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী ১৯ অক্টোবর সব ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের ডেকেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে ট্রেজারি বন্ড ছাড়াও পুঁজিবাজারে চিরস্থায়ী, অধীনস্থ বন্ড এবং বিনিয়োগ এক্সপোজার ইস্যুতে সমস্যা বিষয়েও আলোচনা হবে।
বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, "ট্রেজারি বন্ড লেনদেন ও অন্যান্য বন্ডের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে।"
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেকেন্ডারি মার্কেটে বন্ড লেনদেনের ক্ষেত্রেও কারিগতি জটিলতা রয়েছে।
কোনো ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড বিক্রি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি বা ই-মেইল পাঠিয়ে সিডিবিএলে ট্রান্সফারের অনুরোধ জানানো হয়। তারপর বাংলাদেশ ব্যাংক সিডিবিএলের মাধ্যমে বিও আইডিতে বন্ড স্থানান্তর করে, এরপরই বন্ড ট্রেড হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় ব্যাংক চাইলেই বর্তমানে শেয়ার কেনাবেচার মতো বন্ডের ইউনিট বিক্রি করতে পারছে না।
এ বিষয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে একটি ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যাংকের প্রধান টিবিএসকে বলেন, "ট্রেজারি বন্ড বিক্রির ক্ষেত্রে দাম ডিকটেট করে দিলে কেউ-ই বন্ড বিক্রি করতে চাইবে না। সমস্যা হচ্ছে ব্যাংক চাইলেই নিজের চাহিদামত দামে বিক্রির প্রস্তাব করতে পারছে না।"
ব্যাংকের অনীহা কেন, এমন প্রশ্নে তিনি একটা উদাহরণ দিয়ে বলেন, "ব্যাংক যে টাকায় বন্ড কিনে তার চেয়ে বেশি লাভে বিক্রি করতে চাইবে। কিন্তু এখানে প্রাইসিংয়ের যে সিলিং দেওয়া হয়েছে, তার চেয়ে বেশি বা কমে প্রাইস কোট করা যাবে না। এই কারণে ব্যাংক বন্ড বিক্রিতে অনীহা দেখাচ্ছে।"
তিনি বলেন, "বন্ড লেনদেনের সীমা বাজারের উপর ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদা ও যোগানের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করবে। মার্কেটকে ফ্রি মুভ করতে দিতে হবে।"
গত ১০ অক্টোবর দেশের পুঁজিবাজারে পরীক্ষামূলক ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়।
প্রথমদিন তিনটি ট্রেড হলেও পরপর তিনদিন কোনো বন্ডের ট্রেড হয়নি। যদিও গতকাল সোমবার মাত্র একটি বন্ডের ট্রেড হয়েছে।
যে বন্ডগুলোর মাধ্যমে সরকার এক বছরের বেশি সময়ের জন্য ঋণ নেয়, তাকে সরকারি বন্ড বা ট্রেজারি বন্ড বলে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫১টি বকেয়া ট্রেজারি বন্ড রয়েছে যার মেয়াদ দুই থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
সরকার প্রতি বছর দুটি অর্ধ-বার্ষিক কুপনের মাধ্যমে বন্ডের প্রতি ১০০ টাকার অভিহিত মূল্যের বিপরীতে ২-১৫% বার্ষিক সুদ প্রদান করছে। মেয়াদ যত বেশি হবে সুদের হার তত বেশি হবে।
বাংলাদেশ সরকারের বকেয়া ট্রেজারি বন্ড হোল্ডারদের কাছে ৩.১৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি পাওনা রয়েছে যা বেশিরভাগ আর্থিক পরিষেবা শিল্পের মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হয়েছে।