তিন প্রকল্পের অর্থায়নে সুকুকে ১৫ হাজার কোটি টাকা নেবে সরকার
চলমান তিন অবকঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে ইসলামিক বন্ড সুকুক ইস্যু করে ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন চলমান প্রকল্পগুলো থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তিনটি প্রকল্পকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। সরকারের প্রকল্প তিনটি অবকাঠামো নির্মাণ সম্পর্কিত, যা শেষ হবে ২০২৩ সালের মধ্যেই।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে সম্প্রতি ইসলামিক বন্ড ইস্যুর জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা পর্যালোচনা করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যে তিনটি প্রকল্পের অর্থায়নে সুকুক ইস্যু করা হবে, সেগুলো হচ্ছে - উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপন, নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন এবং গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়)।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত তিন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে আর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সুকুক হল, প্রথাগত ব্যাংকিং চ্যানেল ছাড়াই একটি দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস। বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ পান সুকুক বিনিয়োগকারীরা। তবে এই বিনিয়োগের বিপরীতে সুদহার নির্দিষ্ট করা থাকেনা; নির্দিষ্ট এই সুদহারের বিষয়টিই ইসলামে নিষিদ্ধ।
সরকার সাধারণত বাজেট ব্যয় নির্বাহে রাজস্ব আহরণ, ট্রেজারি বিল-বন্ড ইস্যু, ব্যাংক ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাজস্ব আহরণ আশানুরূপ না হওয়ায় এবং ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সুকুকের মাধ্যমে বড় প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন করতে চাইছে সরকার।
ফলে ইসলামী ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুকুকের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তাফা কামাল উল্লেখ করেন, সুকুকের মাধ্যমে শরিয়া-ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য সরকারি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের বিশাল সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এর আগে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার নিরাপদ পানি সরবরাহের একটি প্রকল্পে ৮ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ইস্যু করেছিল। পরের বছর, আরও ১০ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ইস্যু করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়।
এদিকে, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) স্থাপনের প্রকল্পটি ২০২০ সালে জানুয়ারিতে একনেকে অনুমোদন পায়।
সম্পূর্ণভাবে সরকারি অর্থায়নে নির্মাতব্য প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা।
প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন, প্রশাসিনক ভাবন, শিক্ষক ডরমেটরি, ২০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস, শহীদ মিনার, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ, যানবাহন, মেশিনারি বা যন্ত্রপাতি ক্রয় ও শিক্ষা ও শিখন উপকরণ অর্ন্তভুক্ত করা হয়।
প্রকল্প পরিচালক ড. সাঈদ মাসুম আহমেদ চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "স্কুল-কলেজ নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। ইতোমধ্যে ৫টি স্কুলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়েছে। একটি স্কুলের নির্মাণও শুরু হয়েছে। ধাপে ধাপে অন্যান্য স্কুল-কলেজ স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও নির্মাণ শুরু হবে।"
বাংলাদেশ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের 'নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমে বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন' প্রকল্পের এক-তৃতীয়াংশ অর্থায়ন সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধমে যোগান দিতে চায় সরকার। প্রকল্পটিতে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। এতে অর্থায়নের জন্য সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে সরকার ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নিতে চায়। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের আওতায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে চারতলা ও শহরাঞ্চলে ছয়তলা এবং হাওর অঞ্চলে নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
২০২১ সালের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের গড় অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ আর ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
২০১৯ সালে সারাদেশের ২৮১টি পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো চাহিদা পুরণে 'গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়)' হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকের যোগান সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে করতে চাইছে সরকার।
আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ।