খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে সারে কমবে না ভর্তুকি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা অন্য কারও চাপে সারে ভর্তুকি এক টাকাও কমানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী অনড় অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান তিনি।
সোমবার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আগের বছরগুলোতে সাধারণত সারে ৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হতো। গত বছর সারে ভর্তুকি বেড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই ৪৬ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হচ্ছে।
'এতো বেশি ভর্তুকি গুপ্তধন পাওয়া ছাড়া মেটানো প্রায় অসম্ভব। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, সারে ভর্তুকির পরিমাণ যতোই বাড়ুক না কেন, সরকার যেকোনোভাবে তার সংস্থান করবে। কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে তিনি এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন', জানান মন্ত্রী।
বাংলাদেশের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সফররত আইএমএফ মিশন সারসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতে ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়কে।
আইএমএফের সুপারিশ অনুযায়ী, সারে ভর্তুকি কমানো হবে কি-না, টিবিএসের এ প্রশ্নে আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, 'আইএমএফ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সব সময়ই ভর্তুকি কমানোর কথা বলে। কিন্তু সরকার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। আইএমএফ বা অন্য কারও পরামর্শে সারে এক টাকাও ভর্তুকি কমানো হবে না।'
কৃষিমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সারের উচ্চমূল্য সত্বেও সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ সার আমদানি করেছে। এবছর চাহিদার চেয়ে বেশি সার আমদানি করা হয়েছে। তাই সারের কোন সংকট হবে না।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সারে ভর্তুকি বাবদ ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যবহৃত ইউরিয়ার দাম কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে ২২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
সারের দাম আরও বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর কোন পরিকল্পনা নেই বলে টিবিএসকে জানান অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারাও। তারা জানান, ভারতে এখনও প্রতিকেজি ইউরিয়ার দাম বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২ টাকা। সে তুলনায় বাংলাদেশে সারের দাম তুলনামুলকভাবে বেশি।
'ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকার কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে জোর দিচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে সারে ভর্তুকির পরিমাণ আরও বাড়লেও সরকার দাম বাড়াবে না।'
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফ পরামর্শ দিলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাম বাড়িয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানোর কোন পরিকল্পনা নেই। এ কারণেই সম্প্রতি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও তা থেকে সরে এসেছে সরকার। বরং ডিমান্ড সাইড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে সরবরাহ কমিয়ে গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকির লাগাম টানা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ১৮,০০০ কোটি টাকা এবং এলএনজি আমদানিতে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ১৩,৩০০ কোটি টাকা।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ভর্তুকি কমানোর বিষয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। তবে প্রকৃত ভর্তুকির পরিমাণ যাতে বাজেট বরাদ্দের তুলনায় বেশি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।