দেশে প্রথমবারের মতো পিএইচসি পাইল তৈরি করছে সামুদা কনস্ট্রাকশন
টিকে গ্রুপের কনসার্ন সামুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড দেশে প্রথমবারের মতো প্রিকাস্ট হাই-পারফরমেন্স কংক্রিট (বিএইচসি) পাইলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে।
মূলত বড় আকারের কাঠামোর ভিত্তি নির্মাণে ব্যবহৃত হয় এই উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন পাইল। দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এতদিন চীন ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা হতো এ পাইল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে (বিএসএমএসএন) অবস্থিত কারখানায় উৎপন্ন এই পাইল সামুদা দেশীয় বাজারে বিক্রি করছে।
পিএইচসি পাইলটিতে থাকে একটি বৃত্তাকার ফাঁপা অংশ এবং একটি প্রেস্ট্রেসযুক্ত কংক্রিট টিউব। বহুতল ভবন, বড় সেতু নির্মাণ, গভীর সমুদ্র বন্দরে জেটি নির্মাণ এবং নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয় এটি।
দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন এ নির্মাণ পাইলের চাহিদাও বাড়ছে।
কোম্পানিটি ইতোমধ্যে বিএসএমএসই-এ তাদের ৪ একর জমিতে অবস্থিত কারখানায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
টিকে গ্রুপের পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, "পিএইচসি পাইলস মার্কেটের গত কয়েক বছরে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন রানিং মিটার পাইলস বিক্রি হচ্ছে। আমাদের উৎপাদনের আকার প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন রানিং মিটার। "
সাধারণত, দুই বা তিন তলা ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ প্রয়োজন হয় না, তবে উচ্চ ভবন নির্মাণের জন্য এ ধরনের পাইল প্রয়োজনীয়।
পাইলিং বা ফাউন্ডেশন ছাড়া বড় আকারের কাঠামোর লোড ডিস্ট্রিবিউট করা যায় না। পিএইচসি পাইলস মূলত এই লোড ডিস্ট্রিবিউটের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, "প্রায় ১০ বছর আগে ব্রিজ ও বহুতল ভবন ধরে রাখার জন্য রিইনফোর্সড লোহার খাঁচা ব্যবহার করা হলেও এখন তৈরি পিএইচসি পাইল পাওয়া যাচ্ছে। এর ব্যবহার প্রতিদিন বাড়ছে কারণ এটি কম খরচ এবং ঝামেলা ছাড়াই টেকসই অবকাঠামো নিশ্চিত করে।"
"আমরা আগে নকশা তৈরি করি এবং সেই অনুযায়ী এটি তৈরি করি। বর্তমানে, আমরা প্রতিদিন ৯, ১০ এবং ১২ মিটার আকারের ৪০০ পিস পাইল তৈরি করছি"
"আমরা চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন সহ কিছু কোম্পানির কাছে ২৫০০ পিস পাইল বিক্রি করেছি। এটি একটি বৈশ্বিক নির্মাণ সংস্থা যারা বাংলাদেশে কিছু বড় প্রকল্পে কাজ করছে। এছাড়া, আমরা আমাদের নিজস্ব অবকাঠামো তৈরিতে নিজস্ব পণ্য ব্যবহার করছি," যোগ করেন তিনি।
দ্রুত বর্ধনশীল এবং ভূমিকম্প-প্রবণ দেশে কাঠামো নির্মাণের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি ব্যবহারের উপায় হিসেবে ১৯৭০-এর দশকে জাপানে পিএইচসি পাইলস প্রথম উদ্ভাবিত হয়।
তারপর থেকে এই পাইলগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো উন্নত দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ফাঁপা, প্রিকাস্ট এবং প্রিস্টেসড কংক্রিট পাইলগুলোর বাইরের অংশের আকারে সাধারণত ৩০০ থেকে ১২০০ মিলিমিটারের হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় ৩০ হাজার একর জমিতে নির্মিত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর।
টিকে গ্রুপসহ অনেক বড় শিল্প গ্রুপ এই শিল্প নগরে কারখানা গড়ে তুলেছে।