২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ট্যাক্স রিটার্ন বেড়েছে ৪২%
গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ লাখ করদাতা তাদের ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি। একই সময়ে ট্যাক্স আদায় বেড়েছে ৫২%।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) ট্যাক্স ডে হিসেবে রিটার্ন জমার শেষ দিন হলেও এনবিআর এই সময়সীমা আরো এক মাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করেছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে আরো বেশকিছু ট্যাক্স রিটার্ন জমা হতে পারে বলে আশা করছেন ট্যাক্স কর্মকর্তারা।
অবশ্য দেশে বর্তমানে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারী (টিআইএন) ৮০ লাখের উপরে। এছাড়া গত বাজেটে ট্যাক্স রিটার্ন জমায় বেশকিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়ায় এ বছর অন্তত ৪০ লাখ রিটার্ন জমা হবে বলে আশা করেছিলেন ট্যাক্স অফিসিয়ালরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ সংখ্যায় নাও পৌঁছাতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
অবশ্য দীর্ঘমেয়াদে ট্যাক্স রিটার্ন বাড়ানো তথা মানুষকে করের আওতায় আনতে অটোমেশনকেই মূল হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্যাক্স ডে উপলক্ষ্যে বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদানকালে মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, "ট্যাক্স পেয়ার বাড়ানো তথা ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হলে পুরো ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের বিকল্প নেই।" এছাড়া জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন বেইজ ট্যাক্স ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে ফাংশন বেইজ করা, এনবিআরের ট্যাক্স, ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) ও কাস্টমস- এই তিন উইংয়ের সমন্বয় তৈরি করার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
''যথাযথ কর প্রদানের মাধ্যমে করদাতাদের রাষ্ট্রের উন্নয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ'' শীর্ষক ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম।
তিনিও ট্যাক্স কমপ্লায়েন্স বাড়াতে ডিজিটালাইজেশনের গুরুত্ব স্বীকার করে এক্ষেত্রে এনবিআরের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এনবিআর সদস্য প্রদ্যুত কুমার সরকার ট্যাক্স নেট বাড়াতে গত কয়েক বছরে এনবিআরের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার ডাটাবেজ এর সঙ্গে ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের 'কানেকটিভিটি' তৈরির ফলে বিপুল সংখ্যক করদাতাকে কর নেট এর আওতায় আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে বাড়তি ৩০ লাখ ব্যক্তি করের আওতায় আসবেন।
এছাড়াও করদাতাদের ট্যাক্স নেট এর আওতায় আনতে শুরুতে কিছুটা ছাড় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী।
৪০ লাখ রিটার্ন পাওয়া নিয়ে সংশয়
৩ লাখ টাকার উপরে বার্ষিক আয় হলে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া ৪০ ধরনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানোও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সর্বশেষ বাজেটে। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই কমপ্লায়েন্স মানতে ব্যর্থ হলে বড় অঙ্কের জরিমানার বিধানও আনা হয়েছে। এর ফলে চলতি বছর অন্তত ৪০ লাখ ট্যাক্স রিটার্ন জমা হবে বলে আশা করেছিলেন এনবিআর কর্মকর্তারা। সর্বশেষ গত বছর ২৫ লাখের কিছু বেশি রিটার্ন ফাইল হয়েছিলো।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ৪০ লাখ রিটার্ন জমা হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অবশ্য এনবিআরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ডিসেম্বর নাগাদ ৩৪ লাখ রিটার্ন জমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কেন টিআইএন এর অর্ধেক রিটার্ন জমা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে– এমন প্রশ্নে এনবিআরের সাবেক কমিশনার বজলুল কবির ভূঁইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দেশের অর্থনীতি ভালো নয়, বেশিরভাগ মানুষের আয়ও বাড়েনি। এসব কারণে মানুষের মধ্যে রিটার্ন দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ কম।"
এছাড়া সময় বাড়ানোর আলোচনার কারণেও শেষ দিকে প্রত্যাশিত রিটার্ন জমা হয়নি বলে মনে করেন তিনি।