মিয়ানমার, কম্বোডিয়ায় ওষুধ রপ্তানি করতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের এলবিয়ন গ্রুপ
আফগানিস্তানের পর এবার মিয়ানমার, কম্বোডিয়ায় ওষুধ রপ্তানি করতে প্রস্তুত চট্টগ্রাম ভিত্তিক কোম্পানি এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড।
চলতি মাসেই কোম্পানিটির ৩০ হাজার ডলারের ওষুধ যাচ্ছে মিয়ানমারে। আগামী মাসে (জানুয়ারি) ২৩ হাজার ডলারের ওষুধ যাবে কম্বোডিয়াতে।
এর আগে আগফানিস্তানে প্রথম দফায় ৫৫ হাজার ডলার ও দ্বিতীয় দফায় ৬৫ হাজার ডলারের ওষুধ রপ্তানি করে এলবিয়ন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড।
গত বছরের ৯ জুন আফগানিস্তানে প্রথম দফায় ওষুধ রপ্তানি করা হয়। বর্তমানে দেশটিতে ১ লাখ ২৯ হাজার ডলার ওষুধ রপ্তানির প্রস্তুতি চলছে। আফগানিস্তানে এখন পর্যন্ত ৩৫টি পণ্য রপ্তানি করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও ইয়েমেনে ওষুধ রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে।
এলবিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান রাইসুল উদ্দিন সৈকত বলেন, "দেশে যেসব ওষুধ উৎপাদন হয় তার কাঁচামাল আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। এসব কাঁচামাল আমদানিতে পণ্যভেদে ১০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। আমদানিকৃত এসব কাঁচামাল দিয়ে তৈরি ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করতে প্রতিযোগিতা করতে হয় ভারতের সাথে,"
"কিন্তু ভারত নিজস্ব কাঁচামাল দিয়ে তৈরি ওষুধ দিয়ে আমাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে। এতে আমরা কম দামে ওষুধ রপ্তানি করতে না পারায় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছি," বলেন তিনি।
প্রতিযোগিতামূলক বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রাইসুল উদ্দিন।
তিনি আরো বলেন, "তৈরি পোশাকের পর ওষুধ খাত বর্তমানে একটি গ্রোয়িং সেক্টর।"
"বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে এই খাতের ২৮ হাজার কোটি টাকার মার্কেট। এসব ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে সরকার কমপক্ষে ৮ হাজার কোটি টাকা শুল্ক আদায় করে," জানান তিনি।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১২৩টি দেশে মোট ১৬৯ মিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে প্রতিবেশি দেশ মিয়ানমারে। এরপরেই আছে শ্রীলঙ্কা।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত এক হিসাবে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কার ওষুধ বাজারে বাংলাদেশের অংশ ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর মিয়ানমারের ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশের দখলে আছে বাংলাদেশি ওষুধ।
গত বছরের ১৩ জানুয়ারি আদর্শ উৎপাদন চর্চা (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস বা জিএমপি) সনদ অর্জন করে এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ।
এলবিয়নের উৎপাদিত ওষুধ বিদেশে জেনেরিক নামের পাশাপাশি ব্র্যান্ডেড নামেও বাজারজাত হচ্ছে। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশনসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য সীতাকুণ্ডে অবস্থিত প্ল্যান্টে ধাপে ধাপে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে কোম্পানিটি।
প্রতিষ্ঠানটির পর্যায়ক্রমে আমদানিকারক দেশের তালিকায় রয়েছে শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইন। পরের ধাপে রয়েছে আফ্রিকার দেশ সুদান, ঘানা, সোমালিয়া, ক্যামেরুন ও নাইজেরিয়া। এছাড়া মালয়েশিয়ার ওষুধের বাজারে চীনের দাপট কমানোর ব্যাপারে আগ্রহী কুয়ালালামপুরও। এ কারণে দেশটিকেও গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে দেখছে এলবিয়ন।
এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজের কর্মকর্তারা বলেন, একাধিক দেশে রপ্তানির জন্য ওষুধ উৎপাদন কার্যক্রমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংজ্ঞায়িত জিএমপি অনুসরণ করা হচ্ছে।
১৯৯১ সালে ১০০ জন কর্মী নিয়ে ছোট পরিসরে ১৫ ক্যাটাগরির ওষুধ উৎপাদন শুরু করেন এলবিয়ন ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের তৎকালীন কর্ণধার মো. নেজাম উদ্দিন।
২০০৬ সালে নেজাম উদ্দিনের সন্তান রাইসুল উদ্দিন সৈকত অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা শেষ করে এলবিয়নের হাল ধরেন। সেইসঙ্গে নিত্যনতুন পরিকল্পনায় বদলাতে থাকে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ধরন।
২০০৭ সালে পরিসর বাড়িয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে ৫০ হাজার বর্গফুটের জায়গায় শুরু হয় উৎপাদন কার্যক্রম। বর্তমানে ১ লাখ ৪০ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর ওষুধ উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেছে এলবিয়ন গ্রুপ।
এলবিয়ন স্পেশালাইজড ফার্মা লিমিটেড উৎপাদনের যাওয়ার পর ১০০ জনের সেই কারখানায় এখন তিন হাজার জনের সরাসরি কর্মসংস্থান হতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বার্ষিক টার্নওভার ২০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে কোম্পানিটির ৩৭৭টি পণ্য বাজারে রয়েছে। ৪৫০টির বেশি ওষুধের অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও নতুন পণ্য হিসেবে রয়েছে ওয়ান টাইম ইনজেকশন সিরিঞ্জ, ড্রপ, ইনজেকটেবল আইটেম।