টিআইএনধারীর মাত্র এক তৃতীয়াংশ ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন
চলতি বছর থেকে ন্যাশনাল বোড অব রেভিনিউ (এনবিআর) সব ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীর (টিআইএন) আয় ব্যয়ের হিসাব তথা রিটার্ন জমা বাধ্যতামূক করেছে। দেশে বর্তমানে টিআইএন ধারী ৮৫ লাখের বেশি। অথচ ট্যাক্স রিটার্ন জমার সময় শেষ হওয়ার পর এনবিআর হিসাব করে দেখেছে, রিটার্ন জমা হয়েছে মাত্র ২৭ লাখ ৫১ হাজার, যা টিআইএন এর এক তৃতীয়াংশেরও কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থায় একটি অংশের আয় কমে যাওয়া, আয়কর বিষয়ে এখনো সচেতনতার ঘাটতি এবং মনিটরিং জোরদার না হওয়া প্রত্যাশিত মাত্রায় রিটার্ন জমা না হওয়ার কারণ।
অবশ্য গত বছরের তুলনায় এবার রিটার্ন জমার পরিমাণ বেশি। গত বছর রিটার্ন জমা হয়েছিলো ২৫ লাখ ৪৬ হাজার।
তবে এনবিআরের প্রত্যাশা ছিলো, যে পদক্ষপ নেওয়া হয়েছে তাতে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ ট্যাক্স রিটার্ন জমা হবে।
এছাড়া নতুন করদাতাদের জন্য আগামী জুন পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া কর দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে নতুনদের বড় অংশ ওই সুযোগ নেওয়ার কারণে ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন জমা দেন নি।
প্রতি বছর জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত আয় ও ব্যয়ের হিসাব পরবর্তী নভেম্বরের মধ্যে ট্যাক্স অফিসে জমা দিতে হয়। চলতি বছর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সহ বিভিন্ন কারণে এ সময়সীমা একমাস বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। ৩১ ডিসেম্বর শনিবার হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী কর্মদিবস অর্থাৎ ১ জানুয়ারি (রোববার) পর্যন্ত সুদ ও জরিমানা ছাড়া ট্যাক্স রিটার্ন দেওয়ার সুযোগ পান করদাতারা।
এনবিআর সদস্য মোহাম্মদ জাহিদ হাসান টিবিএসকে বলেন, "ইতোমধ্যে ২৭ লাখ ৫১ হাজার রিটার্ন জমা হয়েছে। আরো প্রায় চার লাখ টিআইএনধারী সময় চেয়ে আবেদন করেছে (টাইম প্রেয়ার)। তারাও সম্ভাব্য রিটার্ন জমাদানকারী হিসেবে বিবেচিত,"
"এছাড়া নতুন টিআইএনধারীরা আগামী জুন পর্যন্ত জমার সময় পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এবার রিটার্ন ৪০ লাখ ছাড়াবে।"
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "আগামী জুনের মধ্যে ইনকাম ট্যাক্স প্র্যাকটিশনারের মত নতুন আঙ্গিকে কিছু জনবল তৈরি করা হবে এবং সেকেন্ডারি সোর্সকে কাজে লাাগানো হবে।" এতে করদাতা বাড়বে বলে আশার কথা জানান তিনি।
এনবিআরের সাবে কমিশনার বজলুল কবির ভুঁইয়া মনে করেন, এবার প্রত্যাশিত রিটার্ন জমা হয়নি।
এর কারণ ব্যাখা করে টিবিএসকে তিনি বলেন, "দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শ্লথ হওয়ায় মানুষের আয় কম, ফলে হতাশা রয়েছে। তারা ভাবছে, যা হওয়ার হবে।"
তবে তিনি বলেন, "নতুন টিআইএনধারীদের একটি অংশ আগামী জুনের মধ্যে রিটার্ন দেবে এবং রিটার্ন এর প্রমাণপত্র ছাড়া যখন মানুষ সেবা পাবে না, তখন রিটার্ন জমা বাড়বে।"
অর্থাৎ চলতি বছর যাই হোক, আগামী বছর থেকে তা অনেক বাড়বে বলে আশার কথা জানান তিনি।
এছাড়া প্রয়োজনীয় মনিটরিং না হওয়া এবং করদাতাদের সচেতনতার অভাব কিংবা ভয়ও রিটার্ন দিতে না আসার পেছনে কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয় করমুক্ত। এর বেশি আয় করলে যেকাউকে প্রতিবছর আয়কর বিবরণী বা ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিট করতে হয়। এছাড়া প্রায় ৪০ ধরনের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স রিটার্ন জমার প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক।
সর্বশেষ বাজেটে এনবিআর এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান জানান দিয়েছে। অর্থাৎ আলোচ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এ প্রমাণ না নিলে তাদের উপর ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স রিটার্ন জমার প্রমাণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঝুলিয়ে রাখার আইনও করা হয়েছে।
বিদ্যমান ইনকাম ট্যাক্স আর্ডিনেন্স অনুযায়ী, যেকোন ব্যক্তি ট্যাক্স রিটার্ন জমা না দিলে কিংবা ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেস (ডিসিটি) এর কাছ থেকে সময়ের আবেদন না করলে সর্বশেষ প্রদেয় ট্যাক্স এর ১০% বা ৫০০০ টাকা – এর মধ্যে যেটি বেশি, তা জরিমানা গুণতে হবে।