বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র-বিমান পথের অনুমোদন দিল ভারত
আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে পারস্পরিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, বাংলাদেশি ট্রানজিট কার্গোর জন্য দিল্লি এয়ার কার্গো কমপ্লেক্স খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। প্রতিবেশী দেশকে পণ্য পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ তার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। এরপরই এমন পদক্ষপের কথা জানালো ভারত।
দেশটির সেন্ট্রাল বোর্ড অফ এক্সাইজ অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিইসি)-এর তথ্য অনুসারে, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এয়ার কার্গো কমপ্লেক্সে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট কার্গো পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার।
আগের নিয়ম অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন থেকে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা কলকাতা এয়ার কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পায়; কিন্তু সেখানে ফ্লাইটের সংখ্যা কম হওয়ায় বাণিজ্য করিডোরের পুরো সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয় না। দ্য লোডস্টারের প্রতিবেদনে এমনটিই উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কার্গো স্টার্ট-আপ এবং ইউপিএস ও ডিএইচএল-এর মতো গ্লোবাল এক্সপ্রেস লজিস্টিক লিডারদের আবদানের কারণে দিল্লি বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সংযোগ আরও বিস্তৃত হয়েছে; বেড়েছে চার্টার্ড ফ্রেইটারের ধারণক্ষমতা। এগুলোর মাধ্যমে ভারতের এই পরিষেবা আরও উন্নতি লাভ করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশেরও একটি আঞ্চলিক ট্রান্স-শিপমেন্ট হাব হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য দেশের সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলো খুলে দিয়েছে সরকার।
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ট্রানজিট চুক্তির আওতায় গত বছর থেকে ভারতীয় নৌযানগুলো বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আসছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহনের চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় তিন বছর পর, বাংলাদেশকে দিল্লি এয়ার কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করতে দেওয়ার এ পদক্ষেপ নিল ভারত।
গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সরকার যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে হাতে তৈরি সুতা ও কাপড় আমদানির অনুমতি দেয়।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে ব্যবসায়ী নেতারা জানান, ভারতীয় ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের জন্য বাংলাদেশের সমুদ্র ও বিমান বন্দর ব্যবহার করে পণ্যের শিপিংয়ের সময় কমানোর আরও সুযোগ রয়েছে।
তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য এই মুহূর্তে ভারতীয় সমুদ্র ও বিমান পথের প্রয়োজন নেই। বরং এসব বিমান পথ ব্যবহার করতে হলে, প্রথমেই দুই দেশের স্থলবন্দরের অনেক উন্নতি করতে হবে।
বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, "বর্তমানে কোনো রপ্তানিকারক ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন না, কারণ এতে খরচ ও সময় বাড়বে।"
"কোভিডের সময় যখন ঢাকা বিমানবন্দরের স্ক্যানারগুলো কাজ করছিল না, তখন ক্রেতাদের প্রয়োজন মেটাতে কলকাতা বিমানবন্দর ব্যবহার করতে হয়েছিল বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকদের," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীন থেকে পণ্য আমদানি করতে ১৮ দিন সময় লাগে, সেখানে প্রতিবেশী ভারত থেকে পণ্য আসতে লাগে ৩০ দিন।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেশের পাঁচটি স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতকে সুতা আমদানির অনুমতি দিয়েছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সহ-সভাপতি বলেন, "সাম্প্রতিক সফরে, আমরা (বিজিএমইএ) বাংলাদেশের সঙ্গে একটি মসৃণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ভারতের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠামো উন্নত করতে দেশটির উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছি।"
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ভারতীয় স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আসতে এক মাসেরও বেশি সময় লাগে বলে সমুদ্রপথে শিপিং করাই সহজ।
এক্সপিডিটরস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, "আসলে, আমাদের এখন প্রতিবেশী দেশগুলোকে আমাদের বন্দর ব্যবহারের প্রস্তাব দেওয়ার অবস্থান তৈরি হয়েছে।"
তিনি উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ শতাংশ সক্ষমতা এখনও অব্যবহৃত; এছাড়া, কাস্টমসের দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়তে পারে।
"অন্যদিকে, পদ্মা সেতু সংযোগের মাধ্যমে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে দেশে। এর মাধ্যমে মোংলা বন্দর প্রতিবেশী দেশগুলোকে অনুরূপ পরিষেবা দিতে প্রস্তুত," যোগ করেন তিনি।
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ আরও উল্লেখ করেন, চট্টগ্রাম বে টার্মিনাল এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর বাংলাদেশকে একটি ট্রানশিপমেন্ট হাবে পরিণত হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়তা করবে; এরমাধ্যমে আঞ্চলিক সংযোগের পথ আরও প্রশস্ত হবে।
তিনি বলেন, "চট্টগ্রাম বে টার্মিনালকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্মাণ কাজ শুরু করা উচিত।"
দ্য লোডস্টারের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন পণ্য সোর্সিংয়ের অন্যতম উৎস চীনের প্রভাব কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে বিশ্বব্যাপী; বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে। এরই সুযোগ নিতে চাইছে বাংলাদেশ সরকার ও দেশের রপ্তানিকারকরা। এর অংশ হিসেবে সমুদ্র ও বিমান পথে বিকল্প ট্রান্সশিপমেন্ট ফ্যাসিলিটেশনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।