তারল্য সংকট কাটাতে অগ্রিম ৮ হাজার কোটি টাকা চায় ইসলামী ব্যাংক
তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অগ্রিম প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা তারল্য সুবিধা চাইছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনির মাওলা সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন। তিনি চারটি খাতের সরকারি কোষাগার থেকে ব্যাংকের পাওনার বিপরীতে এই তারল্য সুবিধা চেয়েছেন।
চিঠিতে ইসলামী ব্যাংক সারের ভর্তুকি বাবদ ৭ হাজার ৭৪ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ ৪০০ কোটি টাকা, আর্থিক প্রণোদনা ১৪৪ কোটি টাকা ও রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাবদ ৩৩৭ কোটি টাকা চেয়েছে।
তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের পক্ষে কেবল ৪৮২ কোটি টাকা দেওয়া সম্ভব, কারণ বাকি ৭,৫০০ কোটি টাকা ইসলামী ব্যাংককে দেওয়ার জন্য বিদ্যমান কোনো নীতি কাঠামো নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি মুদারাবাহ লিকুইডিটি সাপোর্ট (এমএলএস) চালু করেছে; নগদ সংকটে পড়া শরিয়াহ-ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়ার একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে এই নীতি।
নতুন নীতির অধীনে, ব্যাংকগুলো কোলাটেরাল অব ফান্ড প্রদানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেসবাহউল হক জানান, এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংক নতুন নীতির অধীনে এ ধরনের তারল্য সহায়তা চায়নি।
তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বর্তমানে সার ও জ্বালানি ভর্তুকিতে কোনো ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দেওয়ার মতো কোনো টুলস নেই। তবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের অনুরোধটি মূল্যায়ন করবে এবং এটি বিবেচনা করার সুযোগ আছে কিনা তা দেখবে।"
সাধারণত, সরকারি ভর্তুকিতে ব্যয় করা অর্থ পেতে ব্যাংকগুলোর প্রায় তিন মাসের মতো সময় লেগে যায়। এই সময়ে, ভর্তুকির সিদ্ধান্ত যাচাই করা হয়।
"এরমধ্যে সরকার যদি ভর্তুকির স্বীকৃতি দেয়, তাহলে হিসাবটা অন্যরকম। আর যদি না দেয়, তাহলে সেগুলোকে মূল্যায়ন করতে হবে," দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন মেসবাহউল হক।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২২ সালে ইসলামী ব্যাংক ৭১.২১ কোটি ডলারের ৪৫টি আমদানি এলসি খুলেছে। যার বিপরীতে বিদেশি ব্যাংক থেকে ৭০.৬২ কোটি টাকার বিলের তথ্য পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে ইসলামী ব্যাংক নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬.৮২ কোটি ডলার (১,৮০০ কোটি টাকা) রপ্তানিকারককে পরিশোধ করেছে। তবে, ৭১.২১ কোটি ডলার আমদানির বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ৭ হাজার ৭৪ কোটি টাকা ভর্তুকির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় বরাবর পেশ করেছে।
এছাড়া, ইসলামী ব্যাংক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১১টি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিতে মোট ১ হাজার ১৭৩ মেগাওয়াট একক এবং সিন্ডিকেট ফাইন্যান্সের মাধ্যমে অর্থায়ন করেছে। উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকা উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় বাবদ পাওনা।
ইসলামী ব্যাংক বলছে, কোভিডকালে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে মুনাফা ভর্তুকি বাবদ ১৪৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংক। এছাড়া, রেমিট্যান্সের বিপরীতে সরকারি ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা বাবদ ৩৩৭ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাওনা রয়েছে।
গত নভেম্বরে সংবাদপত্রে ইসলামী ধারার কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের খবর ছাপার পর ইসলামী ব্যাংকসহ অধিকাংশ ইসলামী ধারার ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ কমতে থাকে। যার বড় প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডেও।
এদিকে, এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মওলার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করলেও, তাতে কোনো সাড়া মেলেনি।