যুক্তরাজ্যের ৩২৭ বিলিয়ন ডলারের হালকা প্রকৌশল বাজারের বড় অংশে ভাগ বসাতে পারে বাংলাদেশ
খাতসংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের ৩২৭ বিলিয়ন ডলারের হালকা প্রকৌশল বাজারের বড় একটা অংশে ভাগ বসাতে পারে বাংলাদেশ। কারণ উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের দেশটি 'ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম' নামক নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের বাজারে বিশেষ প্রবেশাধিকার দিচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে কার্যকর হওয়া স্কিমটি যুক্তরাজ্যের আগের জেনারেলাইজড স্কিম অভ প্রেফারেন্স বা জিএসপির বদলে চালু হয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এই প্রকল্পের আওতায় এখন যুক্তরাজ্যে কম শুল্কে ও আগের চেয়ে সহজ নিয়মে পণ্য রপ্তানি করতে পারছে।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, 'হালকা প্রকৌশলের মতো আরএমজি-বহির্ভূত রপ্তানি খাতে প্রবেশের জন্য নতুন স্কিমটি বাংলাদেশের জন্য গেম চেঞ্জার হতে পারে।'
যুক্তরাজ্যে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানির সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনার জন্য রাজধানীর একটি হোটেলে র্যাপিড আয়োজিত সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য স্কিম চালু করার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের বাধ্যবাধকতা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের জন্য নিয়মকানুন শিথিল করেছে এবং কিছু আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতাও বাদ দিয়েছে।
এর ফলে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেয়ে যুক্তরাজ্যের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে বলে জানান তিনি।
সভার পর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শক্তি হলো প্রতিযোগিতামূলক শ্রমশক্তি। এই শ্রমশক্তি হালকা প্রকৌশলের মতো বৈচিত্র্যময় পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনের সাথে যুক্ত না। এটা একটা বড় বাধা।'
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য ২০২১ সালে ৩২৭ বিলিয়ন ডলারের হালকা প্রকৌশল পণ্য আমদানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৫৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ০.০২ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার আরএমজির বাইরে হালকা প্রকৌশল পণ্যকে উদীয়মান রপ্তানি পণ্য ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রকৌশল পণ্যের মোট রপ্তানি ছিল ৭৯৬ মিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১.৫ শতাংশ।
আলোচনায় স্টেকহোল্ডাররা হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে দুর্বল পারফরম্যান্সের পেছনে কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছেন।
ভ্যালু চেইন সংযোগ না থাকা, কাস্টমসের জটিলতা, আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকা, অর্থায়ন না পাওয়া, এলসি খোলার সমস্যা, দক্ষ শ্রমশক্তি না থাকা এবং জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়াকে প্রধান সমস্যা বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
সভায় বিভিন্ন হালকা প্রকৌশল শিল্পের প্রতিনিধিরা বলেন, নিজস্ব ব্র্যান্ড না হলেও বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের আরএমজি শিল্প শীর্ষস্থানীয় হয়ে উঠেছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে তৈরি হালকা প্রকৌশল পণ্যও বিশ্বসেরা। কিন্তু এই খাতের ক্রেতা বা সরবরাহ চেইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারছে না বলে ভিয়েতনাম, তাইওয়ানের চেয়ে রপ্তানিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে।
শিল্প প্রতিনিধিরা যুক্তরাজ্যের দিক থেকে জিএসপি স্কিমের জটিলতা নিয়েও কথা বলেন।
বৈদ্যুতিক পণ্য প্রস্তুতকারক কিট্টি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদ মাহমুদ বলেন, 'কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে কাস্টমস বিভাগ প্রকৃত মূল্য না ধরে বেশি মূল্য ধরে। এর ফলে আমাদের বেশি কর দিতে হয় এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
'যেমন মঙ্গলবার কাস্টমস আমাদের কাঁচামালের মূল্য ধরেছে ২ হাজার ১৬০ ডলার, যা প্রকৃতপক্ষে ১ হাজার ৪৫০ ডলার ছিল।'
করের ক্ষেত্রে আরও কিছু জটিলতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ বাইসাইকেল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল লুৎফুল বারী বলেন, 'গত ১১ বছরে আমরা শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তর থেকে ৫ কোটি টাকা ফেরত পাইনি।'
ওয়ালটন গ্রুপের উপনির্বাহী পরিচালক আবদুর রউফ বলেন, সরকার নতুন আমদানি নীতি আদেশ অনুমোদন করেছে। এটি আমদানিকারকদের জন্য শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানি কিছুটা সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এনবিআর আমাদের জানিয়েছে যে বিষয়টি তাদের অবহিত করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে অতিরিক্ত বাণিজ্য সচিব আবদুর রহিম খান আশা প্রকাশ করেন যে, মন্ত্রিসভা শীঘ্রই নতুন শুল্ক নীতি ঠিক করবে এবং আগামী বাজেটে এর প্রতিফলন দেখা যাবে।
'তাই এনবিআর কিছু বিষয় বিবেচনা করবে।'
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন র্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ইউসুফ।