অন্যান্য দেশ যখন ডলার সংকটে ভুগছে না, বাংলাদেশ তখন কেন ভুগছে?
'দয়া করে আমাদের ডলার দিন। কাঁচামাল আমদানির জন্য আমরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছি না।' অনুরোধটি করেছেন ইস্পাত, সিমেন্ট, টেক্সটাইল, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতে যুক্ত একজন ব্যবসায়ীর।
ওষুধ প্রস্তুতকারকরাও একই সংকটে আছে। তারা বলছে, শীঘ্রই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ওষুধ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের জায়ান্টদের পেছনে ব্যাংক ঘোরে—এখন তারাও নিত্যপণ্য আমদানির জন্য ডলারের সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছে।
এমনকি ব্লাড ব্যাগের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাপণ্যের আমদানিকারকরাও ডলার পাচ্ছে না। কেন? এসব পণ্য আমদানি করতে তো কোটি কোটি ডলার লাগে না। বাংলাদেশের বছরে মাত্র ৯ লাখ ব্লাড ব্যাগ লাগে। প্রতি ব্যাগের খরচ ১০০ টাকারও কম—অর্থাৎ সব মিলিয়ে বছরে ১০ কোটি টাকা বা ১ মিলিয়ন ডলারের মতো প্রয়োজন। কিন্তু ব্যাংক এই অল্প পরিমাণ ডলারও দিতে পারছে না।
ডলারের সংস্থান করতে পারছে না বলে শতভাগ আমদানিমুখী ব্যবসাগুলো বিপর্যয়ের মুখে। এতে তাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজস্ব চাহিদা পূরণের জন্য অল্প কিছু রপ্তানিকারকের কাছে পর্যাপ্ত ডলার আছে। তারা ছাড়া বাকি সব ব্যবসা গত ছয় মাস ধরে ডলারের অভাবে ভুগছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বলায় ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, আগামী কয়েক মাসেও এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করতে পারবে না।
বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক সূচকগুলো—যেমন মাথাপিছু আয়, আনুপাতিক জিডিপি ও তুলনীয় আমদানি-রপ্তানি—প্রায় একই। তারপরও ভারত তাদের আর্থিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের তুলনায় ভালোভাবে সামলাচ্ছে। পরিস্থিতি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক ভালো হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ কেন এই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে?
চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বেশ কিছু দুর্বলতা প্রকাশ্যে এনেছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে, এছাড়া ছয় মাসে ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার মান হারিয়েছে ২০ শতাংশের বেশি। এর ফলে ডলার সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে যেসব ব্যবসা ও আমদানিকারক, তারা সংকটে পড়েছে।
অন্যরা চাপে নেই, কিন্তু বাংলাদেশ কেন চাপে?
বাংলাদেশের আর্থিক সংকটের অন্যতম কারণ হলো দেশের অতিরিক্ত আমদানিনির্ভরতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচামাল ও পণ্য উৎপাদন না হওয়া। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে।
খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে চিনি, ভোজ্য তেল, মসলা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, সার, তুলা, সুতা, রাসায়নিক, শিল্পের যন্ত্রপাতি, সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানার কাঁচামালসহ প্রায় সব পণ্যই আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যমূল্যও চড়চড় করে বেড়ে যায়।
ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানি বিল ৮২.৪৯ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরে আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গত অর্থবছরে যেখানে মাসে গড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল আসত, এ বছর তা কমে মাসে ৬ বিলিয়ন ডলার আসছে। এছাড়া কিছু কিছু পণ্যের দামও কমছে। তাহলে এখন সমস্যাটা কোথায়? এখনও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না?
ব্যাংকারদের মতে, কয়েক মাস আগে খোলা এলসিগুলোর বিপরীতে অর্থপ্রদানের বাধ্যবাধকতার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর এখনও চাপ আছে
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের (এসসিবি) সিইও এবং ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ভালো খবর হচ্ছে, গত কয়েক মাসে নতুন এলসি ইস্যু করা কমেছে। কিন্তু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের আগে ইস্যু করা এলসিগুলোর অর্থ পরিশোধ করতে আরও কয়েক মাস লাগতে পারে।
তার মতে, বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য আগামী কয়েক মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য ইউরোপ-আমেরিকা মন্দার ঝুঁকিতে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ কি পর্যাপ্ত ও কার্যকর ছিল?
গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। মোটর গাড়ি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, ইলেকট্রনিকস ও বৈদ্যুতিক পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার ন্যূনতম মার্জিন বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি শিশুখাদ্য, প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্প এবং কৃষিপণ্য ছাড়া অন্যান্য সমস্ত পণ্যের জন্য এলসি মার্জিন ৫০ শতাংশ ঠিক করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে মোটর গাড়ির মতো কিছু পণ্যের জন্য এলসি মার্জিন বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়।
ট্রেজারি ব্যাংকাররা বলেন, এলসি মার্জিন বাড়িয়ে আমদানি কমানোর চর্চা পুরোনো পদ্ধতি। অতীতে কিছু দেশ কিছু সফলভাবে এই নীতি ব্যবহার করেছে। যেমন, ১৯৮০-র দশকে আমদানি কমাতে এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে ভারত এলসি মার্জিন বাড়িয়েছিল। নীতিটি আমদানি হ্রাস ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সফল হয়েছিল। তবে এর ফলে কিছু আমদানিকৃত পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয় এবং ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়।
কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সংকট ডলারের জন্য, টাকার জন্য নয়। যেসব আমদানিকারক শতভাগ এলসি মার্জিন দিয়েই আমদানি করতে প্রস্তুত তারাও ব্যাংক থেকে ডলার পাচ্ছে না।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৯৯৭ সালের আর্থিক সংকট—যা এশিয়ান আর্থিক সংকট নামেও পরিচিত—এই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ওই সংকটের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অর্থনীতি তাদের মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক রাখতে নানান কৌশল অবলম্বন করেছিল।
যেমন, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়। এর ফলে তাদের মুদ্রা বাজারশক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওঠানামা করতে পারে। পুঁজির বহিঃপ্রবাহ ঠেকাতে এবং নিজেদের মুদ্রাকে সহায়তা দিতে এই দেশগুলো তাদের নিজেদের মুদ্রা বিক্রি করে ও বৈদেশিক মুদ্রা কেনার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ করেছিল। দেশে ও দেশের বাইরে অর্থের প্রবাহ সীমিত করার জন্য তারা মূলধন নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপও নিয়েছিল।
ওই সময় সিঙ্গাপুর একটিমাত্র বৈদেশিক মুদ্রার বদলে একাধিক মুদ্রার বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক করত। এর ফলে সংকটের সময় মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক করা দেশটির জন্য একটু সহজ হতো, কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার পরিস্থিতি অনুসারে বিভিন্ন মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয় করতে পারত।
বাংলাদেশেরও কি বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে যাওয়া উচিত?
বাংলাদেশ ২০০৩ সালে ভাসমান বিনিময় হার (বাজারভিত্তিক) চালু করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক সবসময়ই এ বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করে এসেছে বলে তা কখনোই বাজারভিত্তিক ছিল না।
বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করার কিছু সুবিধা আছে—যেমন প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা অর্জন, স্থিতিশীলতা ও মুদ্রানীতিকে সহায়তা দেওয়া। তবে বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস ও অদক্ষতাসহ বেশ কিছু গুরুতর সমস্যাও তৈরি হতে পারে।
বিশ্লেষক ও ব্যাংকাররা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত তাদের কথায় কান দেয়নি। এরপর গত আগস্টে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বুঝতে পারে, বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য তারা রিজার্ভ থেকে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করতে পারছে না। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশ ব্যাংক অদ্ভুত এক সিদ্ধান্ত নেয়—তিন ধরনের বিনিময় হার চালু করে তারা: রেমিট্যান্স প্রেরক, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারক প্রত্যেকের জন্য আলাদা বিনিময় হার বেঁধে দেয়।
বাংলাদেশের কি একাধিক মুদ্রা ব্যবহার করে বিনিময় হার ঠিক করা উচিত?
বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার দর ঠিক করা হয় মার্কিন ডলারের বিপরীতে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সক্রিয়ভাবে বিনিময় হারের ব্যবস্থাপনা করে। কার্যত এর অর্থ হলো, বিনিময় হারের পরিসর ছোট রাখার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ডলার কেনাবেচা করা। একক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান ঠিক করার ফলে বিনিময় হার স্থিতিশীলতা পেয়েছে। এটি যেমন দেশকে মূল্যস্ফীতির হার কমাতে সাহায্য করেছে, তেমনি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের স্থিতিশীল পরিবেশ দিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতেও সাহায্য করেছে।
তবে একাধিক মুদ্রা ব্যবহার করে বিনিময় হার ঠিক করার বেশ কিছু সুবিধা আছে। যেমন, এর ফলে মাত্র একটি মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কমায়, যা বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা কমাতে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি অর্থনীতির বহুমুখীকরণ বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।
অন্যদিকে একাধিক মুদ্রার বিপরীতে বিনিময় হার ঠিক করার অন্যতম অসুবিধা হলো, এর ব্যবস্থাপনা বেশি কঠিন এবং মুদ্রাগুলো কাছাকাছি মানের না হলে বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা কমে যেতে পারে।
তবে শেষ কথা হলো, একাধিক মুদ্রার বিপরীতে বিনিময় হার ঠিক করা যাবে কি না, তা আসলে নির্ভর করছে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও আর্থিক পরিস্থিতি এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, বহুমুখীকরণ ও পরিচালনাযোগ্যতার মধ্যকার ভারসাম্যের ওপর। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নীতিনির্ধারকদের উচিত উভয় পদ্ধতির সুবিধা-অসুবিধা দুটোই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা।
রেমিট্যান্স আনার জন্য বাংলাদেশ পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিয়েছে কি?
মহামারিকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পেয়েছিল। কিন্তু প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২.৫ শতাংশ করার পরও ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম সাত মাসে দেশে এসেছে ১২.৪৫ বিলিয়ন ডলার।
শুধু ২০২২ সালেই প্রায় ১১ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে চাকরির জন্য দেশ ছেড়েছেন। কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহে এখনও এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকার থেকে শুরু করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বাণিজ্যিক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ—সবাই বলছিলেন, হুন্ডির (অনানুষ্ঠানিক চ্যানেল) বদলে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনা প্রয়োজন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমরা কথার ফুলঝুরিতে যতটা গুরুত্ব দিই, কাজের ওপর ততটা গুরুত্ব দিই না।
ক্রমহ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা বাগে আনতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল, এমন কয়েকটি দেশের উদাহরণ দেওয়া যাক।
আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহার করে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য মেক্সিকো বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। রেমিট্যান্স সেবা দেয়, এমন ব্যাংকগুলোকে কর প্রণোদনা দিয়েছে দেশটি। মিশর সরকারও রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের ব্যবহার বাড়াতে পদক্ষেপ নিয়েছে। তার অংশ হিসেবে রেমিট্যান্সের গতি ও দক্ষতা বাড়াতে দেশটি একটি রেমিট্যান্স ক্লিয়ারিং হাউস প্রতিষ্ঠা করেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহের মনিটরিং ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ব্যাংক ও মানি ট্রান্সফার অপারেটরের মতো বেশ কিছু নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে বিভিন্ন প্রবিধান সরলীকরণ ও টাকা পাঠানোর খরচ কমানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত সরকারও।
এসব পদক্ষেপ এই দেশগুলোর রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে এবং তাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করেছে। তবে এটা খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, একেক দেশের পরিস্থিতি একেক রকম। কোন দেশে কোন পদক্ষেপ সবচেয়ে ভালো কাজ করবে, তা নির্ভর করে ওই দেশের পরিস্থিতির ওপর।
এনভয় টেক্সটাইল ও শেলটেকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কুতুবউদ্দিন আহমেদের মতে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে অর্থ আনার জন্য একটি রেমিট্যান্স প্রচারাভিযান চালানো উচিত।
তিনি জানান, ১৯৯০-এর দশকে প্রবাসী ভারতীয়রা যাতে সহজে দেশে অর্থ পাঠাতে পারে, সেজন্য ভারত প্রণোদনা দেওয়া ও প্রক্রিয়াটি সহজতর করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি করা এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো। ওই সময় ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার বিপুল চাহিদার কারণে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গিয়েছিল। ভারতের ওই প্রচার কর্মসূচি সফল হয়। ফলে দেশটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোসহ নিজেদের মুদ্রাকে স্থিতিশীল করে সংকটের মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়।