চট্টগ্রাম বন্দরে ধারণক্ষমতার অর্ধেকে নেমে এসেছে কনটেইনার সংখ্যা
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং সরকারের আমদানি রোধ ব্যবস্থার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কার্গো কনটেইনারের সংখ্যা এক বছরে ধারণক্ষমতার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
২০২২ সালের আগে চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে কনটেইনার ধারণক্ষমতা ছিলো ৪৯,০১৮ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুয়েভিলেন্ট ইউনিট)। বন্দরে 'নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড' নির্মাণের ফলে কনটেইনার ধারণক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩,৫১৮ টিইইউ।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) এবং নিউমুরিং ওভারফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ডে মোট কন্টেইনার রয়েছে ২৩,৩৪১ টিইইউ। যা কনটেইনার ধারণক্ষমতার ৫৬ শতাংশ।
অথচ গত বছরের এই সময়ে, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কনটেইনার ছিলো ৪১,১২০ টিইউউ। এক বছরের ব্যবধানে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা কমেছে ১৭,৭৭৯ টিইইউ।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে বলেন, "ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমদানিকারকেদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি ওপেন করতে পারছে না। এর প্রভাব পড়েছে আমদানি বাণিজ্যে।"
চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি সীমিত করে সরকার। এর ফলে ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ক্রমাগত কমতে থাকে আমদানি।
স্বাভাবিক সময়ে কখনো কখনো এক দিনে কনটেইনার হ্যান্ডলিং ১০০০ টিইইউ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। গত ১ বছরের দৈনিক কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় কনটেইনার হ্যান্ডলিং হচ্ছে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার।
২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৬৫৮৮ টিইইউ। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৮৪০৭ টিইইউ। এই সময়ে হ্যন্ডলিং কমে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৮১৯ টিইইউ।
২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিলো ৩১,৩৩,০২০ টিইইউ। ২০২১ সালে হয়েছিলো ৩২,১৪,৫৪৮ টিইইউ।
একইভাবে বন্দরে কমে গেছে কনটেইনার ডেলিভারির সংখ্যাও। ২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমদানি পণ্যের কনটেইনার ডেলিভারি হয় ৩১২৮ টিইইউ। ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছিলো ৪১১৮ টিইইউ। এক বছরের ব্যবধানে কন্টেইনার ডেলিভারি কমেছে প্রায় ১ হাজার ।
দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২% হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। পাশাপাশি, মোট বাণিজ্যের কন্টেইনার চালানের প্রায় ৯৮%ও পরিচালনা করে এই বন্দর।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে পৌছার পর সেগুলো জাহাজ থেকে নামিয়ে বন্দরের ইয়ার্ডে রাখা হয়। শুল্কায়ন শেষে সেগুলো সড়ক, রেল অথবা পুনরায় জাহাজে করে আমদানিকারকরা দেশের বিভিন্ন সাথে তাদের গন্তব্যে নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতেও আমদানি কমার ধারাবাহিকতা রয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক।
বিকেএমইএ এর ডিরেক্টর মোহাম্মাদ শামসুল আজম টিবিএসকে বলেন, "এই সময়ে দেশের তৈরী পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করে। কিন্তু ইউরোপ আমেরিকায় পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গার্মেন্টস মালিকদের অর্ডার কমে গেছে প্রায় ৪০ শতাংশ।"
"অর্ডার কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমে গেছে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং, ডেলিভারি কমে গেছে। বন্দর ইয়ার্ডেও ক্রমাগত কমছে কনটেইনার সংখ্যা," যোগ করেন তিনি।