অর্থবছরের সাত মাসে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে ৯ ব্যাংক
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি, এ প্রথম সাত মাসেই কৃষিঋণ বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ পার করেছে ৯ ব্যাংক।
ব্যাংকভিত্তিক ঋণ বিতরণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ব্যাংক আল-ফালাহ, কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক এই অর্থবছরে তাদের দেওয়া টার্গেটের বেশি ঋণ বিতরণ করে ফেলেছে।
আবার ১৪টি ব্যাংক আছে যারা লক্ষ্যমাত্রার ৫০% ও বিতরণ করতে পারেনি।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পিছিয়ে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩টি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১০% ও বিতরণ করেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ব্যাংক খাতে ৩০,৯১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে দেশের ব্যাংকগুলো ১৮,৬৮৪ কোটি টাকা বা লক্ষ্যমাত্রার ৬০.৪৫% ঋণ বিতরণ করেছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ১,৬০০ কোটি টাকা বেশি ঋণ বিতরণ করেছে।
ব্যাংকগুলো কীভাবে সফল হলো জানতে চাইলে ব্যাংক এশিয়ার কৃষিঋণ বিভাগের প্রধান শাহনাজ আক্তার শাহীন বলেন, "আমাদের ব্যাংকের কথা যদি বলি, আমরা সবসময় কৃষিঋণ বিতরণকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি।"
তিনি বলেন, "অন্য ব্যাংকে যেখানে কৃষিঋণ বিতরণের জন্য আলাদা ইউনিট থাকে, সেখানে আমাদের আলাদা ডিপার্টমেন্ট করা হয়েছে। কৃষিঋণকে গুরুত্ব দেওয়ার কারণেই সময়ের আগে আমরা শতভাগের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পেরেছি।"
অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষিঋণের চাহিদা থাকে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, "এ সময়টাই আসলে পিক সিজন। আমাদের বিতরণ করা ঋণের মূল অংশটা এ সময়ে বিতরণ করা হয়। আমাদের চেষ্টা থাকে, কৃষকেরা যেন প্রয়োজনের সময়ে কৃষিঋণ পান।"
তবে, যেসব ব্যাংক বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেশ দূরে আছে, তারা বলছে গ্রামাঞ্চলে শাখা না থাকার কারণে তারা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের প্রধান টিবিএসকে বলেন, সাধারণত দেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষিঋণগুলো বিতরণ করা হয়। অনেক ব্যাংকেরই এসব জায়গায় ব্রাঞ্চ থাকে না। আবার এই ঋণগুলো বিতরণে অপারেটিং কস্টও অনেক বেশি হয়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, "যেসব ব্যাংক অর্থবছর শেষে টার্গেট অনুযায়ী কৃষি ঋণ বিতরণ করতে পারে না, তাদেরকে পানিশমেন্ট দেওয়া হয়।"
তিনি বলেন, "আগে এসব ব্যাংককে জরিমানা করা হতো। এখন একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এই ফান্ডে টার্গেটের বাকি টাকা জমা করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।"
যেসব ব্যাংক টার্গেট অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারবে না, তাদের কাছে থেকে টার্গেটের বাকি টাকা নিয়ে ঋণ বিতরণে সক্ষম ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, "ওভারঅল ব্যাংক খাত থেকে আমরা সন্তোষজনক অ্যামাউন্টের কৃষিঋণ বিতরণ করতে পেরেছি। আশা করছি, বছর শেষে আমরা টার্গেটের পুরোটাই অর্জন করতে পারবো।"
বিতরণকৃত ঋণের ৫০-৬০%ই হয়েছে এনজিও'র মাধ্যমে
অধিকাংশ ব্যাংকই বিতরণ করা কৃষি ঋণের একটা বড় পার্ট এনজিও এর মাধ্যমে বিতরণ করে। ফলে কৃষকেরা কম সুদে ঋণ পান না বলে জানা গেছে।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংক সাধারণত মূল ব্রাঞ্চ, এজেন্ট ব্যাংকিং ও এনজিও এর মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করে থাকে।
মূল ব্রাঞ্চ ও এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে বিতরণ করা কৃষি ঋণের সুদের হার ৮%। কিন্তু এনজিও এর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের সুদের হার ২৪% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
দেশের ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা কৃষিঋণের প্রায় ৫০-৬০%-ই বিতরণ করা হয় এনজিও এর মাধ্যমে।
এনজিওগুলো ৮% সুদে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে বেশি সুদে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করে।