তিন মাসে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা
দেশে বেশকিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য গণমাধ্যমে আসার পর সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি ব্যাপক কমেছে। অন্যদিকে দেশে অবস্থানরত বিদেশি ব্যাংকগুলোর ২০২২ এর ডিসেম্বর প্রান্তিকে আমানত বেড়েছে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত ত্রৈমাসিক তফসিলি ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে থাকা বেদেশি নয়টি ব্যাংকের ২০২২ এর ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩,৯৮০ কোটি টাকা। যেখানে আগের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানতের পরিমাণ ছিল ৬৮,১৪৩ হাজার কোটি টাকা।
ডিসেম্বর প্রান্তিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.৫৭%।
এছাড়া ২০২১ এর ডিসেম্বর প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করলে ২০২২ এর ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯১১৮ কোটি টাকা বা ১৪%। ২০২১ এর ডিসেম্বরে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ৬৪৮৬১ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলেন, বেদেশি ব্যাংকগুলোর চেয়ে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমানতের রেট বেশি দিচ্ছে। তারপরও দেশের ব্যাংকগুলোর তুলনায় বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত যে হারে বাড়ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে দেশের ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগে অনেক গ্রাহকের কিছুটা আস্থার সংকট হয়েছে।
তারা বলেন, বেশকিছু রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে যার কারণে অধিক নিরাপত্তা ভেবে বিদেশি ব্যাংকগুলোতে আমানত রাখছে মানুষ।
গত নভেম্বরে একাধিক ইসলামিক ব্যাংকগুলোর ঋণ জালিয়াতির তথ্য গণমাধ্যমে উঠে আসার পর ওই ব্যাংকগুলোতে থাকা গ্রাহকের আমানত ব্যাপকভাবে কমেছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের বাইরে গ্রাহকের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছে।
ত্রৈমাসিক তফসিলি ব্যাংকের পরিসংখ্যান প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, ডিসেম্বর প্রান্তিকে বেসরকারি ব্যাংকগুলো (ইসলামী ব্যাংকসহ) আমানতের প্রবৃদ্ধি ব্যাপক কমেছে।
২০২২ এর জুন শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আমানতের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। ওইসময় আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে আগের মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় ৪.৯০%।
২০২২ এর সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.৭৪%। এছাড়া ২০২২ এর ডিসেম্বর প্রান্তিকে এর প্রবৃদ্ধি হয়েছে ০.২২%। অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আমানত দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনেটারি সার্ভের রিপোর্ট বলছে, ২০২২ এর জুনে ব্যাংকগুলোর বাইরে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ এর জানুয়ারিতে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ সাত মাসে মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রেখেছে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা।
একটি বিদেশি ব্যাংকের এমডি নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, "সাধারণত ইকোনোমি যখন স্বাভাবিক থাকে মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করে বেশি। যখন ইকোনোমি নানা কারণে অস্বাভাবিক হয়ে যায় তখন মানুষ যেখানে নিরাপত্তা বেশি সেখানে মুনাফা কম হলেও বিনিয়োগ বেশি করে।"
"দেশের ভালো কিছু ব্যাংকের ঋণ অনিয়মের তথ্য বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় গ্রাহকের ব্যাপক আমানত তুলে নিয়েছে। এই টাকা তো তারা বেশিদিন হাতে রাখতে পারেনা, তাই ভিন্ন উপায়ে বিনিয়োগ করেছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো থাকায় এখানে নতুন করে ডিপোজিট বেশি রাখছে গ্রাহক।"
ত্রৈমাসিক তফসিলি ব্যাংকের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইসলামিক ব্যাংকগুলোর আমানত ব্যাপক কমেছে। ২০২২ এর জুন প্রান্তিক শেষে ইসলামিক ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে আমানতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৪৭%।
যদিও গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৩৬%। একইসঙ্গে ২০২২ এর ডিসেম্বর প্রান্তিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ মাইনাস ২.৯০% হয়েছে। ডিসেম্বর শেষে তাদের আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।